।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় অমিত চক্রবর্তী

বাদলের গান

সে কখনো চলে যায় না। কমিউনিটি হলে আমার কবিতাপাঠ থাকে বুধবার, বুধবার; শনিবার সেখানে নাচ, গান; বুধবারে লোক হয় তাও বেশ; সে ও আসে। বসে পেছন ঘেঁসে, তবে একেবারে শেষে নয় । মাথা নিচু ক’রে থাকে; খানিকটা শোনে হয়তো । হাতে বুনুনি, সোয়েটার কিংবা মসৃণ স্কার্ফ। কিন্তু চলে যায় না।
পাঠের শেষে প্রশ্নোত্তর । তাৎপর্য আলোচনা, অলংকারের বিবরণ। কবি কি আর জানে কোন শব্দ কোন গ্রামারে মনে আসে। তাও উত্তর দিতে হয়, খানিকটা হাঁচাহাঁচা ক’রে, খানিকটা বানিয়ে । সে কোনো প্রশ্ন করে না । কোনো কৌতূহল নেই যেন তার আর, এই পৃথিবীর সব রহস্য তার নখদর্পণে । কিন্তু চলে যায় না।
আমার মন তখন অন্য রমণীতে । আমার ধমনীতে তখন অন্য প্রলয়। তবু একদিন বলি, ভালো লাগে আমার কবিতা? কোনো উত্তর নেই। দেখলাম কি একটুও ভাবের খেলা? কি জানি! কিন্তু চলে গেল না।
আর একদিন কবিতা পাঠের সময় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। বললাম, আজ শোনাব এক আশ্চর্য রোদ্দুরে পোড়া কবিতা। সরস্বতী, বিহারীলালের সেই সরস্বতী, বিকেলের বারান্দায় এসেছেন চায়ের কাপ হাতে। হলুদ আঁচল পুরো ঢাকতে পারেনি মুক্তাহারে । বারান্দা তখনো রাক্ষুসে গরম, পায়ের তলা পুড়ে যায় সেই তাপে। কিন্ত তার চেয়ে বেশী পুড়ছে তখন একটি কিশোর হৃদয়, দুবাড়ি দূরের জানলার ফাঁকে।
ততক্ষণে বৃষ্টি থেমেছে । হাততালিও শেষ। চলে গেল একেএকে সবাই । সে কিন্ত যায়নি তখনো । এবার একবার মুখ তুলে তাকালো। হয়তো বুঝেছে, বৃষ্টি ধরলেও, আমার বাদলের গান আজও হয়নি সারা ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।