এই পৃথিবীটা দৌড়ে চলেছে। দৌড়চ্ছে তার বিরাট ভর নিয়ে। কতটা বিপুল এই পৃথিবীর ভর?
বাবা বলছেন, পাঁচ লেখো, তারপর দশমিক দাও, তারপর নয় লেখো, তারপর সাত, তারপর দুই, এবার গুণন চিহ্ন দাও, এবারে দশ লেখো, তারপর তার ডান দিকে উপরে চব্বিশ লেখো। কত হল?
মা বলছেন, দশমিকের পর অতগুলো সংখ্যা না বলে স্রেফ ছয় লিখলে মিটে যায় না কি?
বাবা যেন মায়ের কথাটা কানে নেবার যোগ্যই মনে করছেন না।
বলছেন, পৃথিবীর ভরটাকে একটা বাটখারা ভাবো। বাটখারা তো দেখেছ?
খোকা ঘাড় নাড়ে। সে বাটখারা দেখেছে।
বাবা বলছেন, আমাদের পৃথিবীর ভরটাকে একটা একক ধরলে সেই এককের নিরিখে অন্য গ্রহগুলোর মাপ আন্দাজ করার একটা প্রথা আছে। বৃহস্পতির ভর লেখো, প্রথমে এক লেখো। তারপর দশমিক। তারপর আট লেখো, তারপর নয়, তারপর আট। এবার গুণন চিহ্ন দাও। দশ লেখো। ডানদিকে মাথার উপর সাতাশ লেখো। এই যে সংখ্যাটা দাঁড়ালো, এটা পৃথিবীর ভরের তিনশো আঠারো গুণ। পৃথিবীটা একটা বাটখারা মনে করো। তূলাযন্ত্রের একটা পাল্লায় বৃহস্পতি গ্রহকে রাখো। অন্যদিকে তিনশো আঠারো খানা পৃথিবী রাখতে হবে। তবে সমান হবে। খোকা দাঁড়িপাল্লাকে তূলাযন্ত্র বলে কেন?
মা কে বলা আছে, তিনি পড়ার ঘরে এসে খোকাকে খাইয়ে যাবেন। খেতে খেতেই খোকাকে বাবার পড়ানো শুনে যেতে হবে।
এবার সূর্যের ভর লেখো।
এক লেখো। দশমিক দাও। নয় লেখো, আট লেখো, তারপর আবার নয়। এবার গুণন চিহ্ন দাও। এবার দশ লিখে উপরে ডানদিকে ত্রিশ লেখো। ওই ওপরে যা লিখছ ওকে ঘাত বলে। সূর্যকে পৃথিবীর সঙ্গে তৌল করতে তিন লক্ষ তেত্রিশ হাজারখানা পৃথিবী লাগবে।
মা বাবাকে বলতেন, ওগো, জজের বাড়ি থেকে মেয়েটা এসেছে। খোকাকে খুঁজছে। ওদের খেলতে দাও। বাবা হাঁক পাড়তেন, কই অনু মা, আয় মা, আয়।
তারপর জিজ্ঞাসা করতেন, বলো তো মা, পৃথিবী থেকে চাঁদ কতোটা দূরে আছে?
অনসূয়া খুব চটপটে। তাড়াতাড়ি বলত, তিনলক্ষ পঁচাশি হাজার কিলোমিটার।
বাবা বলতেন, সাবাস অনু। আচ্ছা, ওটা মাইলের হিসেবে কত হবে?
অনু বলত, দু লক্ষ ঊনচল্লিশ হাজার মাইল।
বাবা বলতেন, অনেকটা হয়েছে। তবে দু লক্ষ আটত্রিশ হাজার আটশ ছাপ্পান্ন মাইল বললে ভাল। তারপরই আবার জিজ্ঞাসা করতেন, সূর্য থেকে গড়ে পৃথিবী কতটা দূরে আছে?