হ্যাঁ, আমি অন্যরকম
আমি সবার মত নই
না, মানে আমার দুটো হাত, দুটো পা
মানুষের মত সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গই আছে
কিন্তু সব্বাই আমাকে
যেন অন্য চোখে দেখে
কেউ খারাপ বলে
কেউ বলে অসভ্য
আবার কেউ কেউ তো পাগলের তকমাও জুড়ে দিয়েছে ।
হ্যাঁ, আমি আলাদা, অন্যরকম
ঠিক সবার মত নই।
আমি দেখতে ঠিক ছেলেদের মতই
আমার ক্রোমোজোম ও এক্স-ওয়াই
তবুও আমি
মেয়েদের ফর্সা হবার ক্রিম মাখি,
ঠোঁটে লিপ বাম দিই
ভুরুটাও নিয়মিত প্লাক করি
আর মেয়েদের তুলনায়
ছেলেরা আমার আকর্ষণ কারে
ওই যাকে তোমরা প্রেম বল
আমার তাও হয়
কিন্তু মেয়েদের জন্য নয়
কোন এক ছেলের জন্য
ছেলে বন্ধুর জন্য।
ছোট থেকেই আমি শাড়ি পড়তে ভালবাসি
দিদির সঙ্গে দিদির মত করে সাজি
তোমরা আমায় খারাপ বল
অসভ্য বল
বল বাজে ছেলে, নোংরা
তাই কোন বন্ধুর মা
তাদের ছেলেকে আমার সঙ্গে মিশতে
বারণ করে
আর মেয়ের মায়েরা বলে
ওর সঙ্গে মিশবি না, ও খারাপ!
কিন্তু কেউ বোঝে না আমার মনটা,
আমার শরীরটাই সমাজের স্ট্যাম্প পড়ে
চিহ্নিত পুরুষ বলে
কিন্তু আমার মনটা
সে তো একজন কিশোরীর
মেয়েদের মত নরম, মমতা মাখা।
আমি কারো গায়ে হাত তুলতে পারি না,
কাউকে খারাপ কথা বলতে পারি না
বন্ধুরা যখন মুখের উপর আমায় নোংরা বলে
করতে পারি না প্রতিবাদ
মুখ বুজে মেনে নিই সব
যেমন করে মেয়েরা
সবাই তাই বলে।
বুঝি আমার সেই বন্ধুর প্রতি দুর্বলতার সুযোগ সবাই নেয়
বিভিন্ন ভাবে তারা আমার অনুভূতি নিয়ে খেলা করে
কিন্তু কেউ বোঝে না
আমি একটা ভুল শরীরে বাস করি।
ঈশ্বর আমার মনটার একটা ভুল শরীর দিয়েছেন।
কিন্তু ঈশ্বরের বিরুদ্ধে জেহাদ করি
কি করে বলত?
আমি ভাল ছবি আঁকি
ভাল গান গাই
আমি সব সব পারি যা বা যা যা পারে মেয়েরা, এমনকি ছেলেরাও
তবুও আমায় খারাপ বলবে?
ওরা কি জানে, কেন আমার মনটা
ধীরে ধীরে পুরুষ থেকে নারীত্বে
নিজেকে বদলে ফেলেছে?
কেউ কি জানে, সেই ছোট থেকে
আমি পুরুষত্বের যে হিংস্র রূপ দেখেছি
তাতে মনটা গেছে বিষিয়ে।
আমি দেখেছি কি ভাবে
একজন বাবা তার মা এর কোল থেকে
সন্তান ছুঁড়ে ফেলে দেয়,
কি ভাবে একজন স্বামীর আদরের চিহ্ন
তার স্ত্রীর সারা গায়ে
কালশিটে দাগ হিসেবে ফুটে ওঠে,
কিভাবে সারারাত কেঁদে চোখ ফুলিয়ে
মা সকালে হাসিমুখে
তার সন্তানের কপাল
চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দেয়-
আর ভাবে, ‘ও তো বাচ্চা, ও কিছু বোঝে না’।
কিন্তু আমি বুঝেছি
আর বুঝেছি বলেই ধীরে ধীরে
আমার মন থেকে পুরুষত্বটাকে
ঘেন্না করতে করতে,
মুছে ফেলেছি।
ভুলে গিয়েছি আমি পুরুষ
কারণ, আমি চাই না পুরুষ হতে-
আমি চাই না সেই শক্তিশালী হাত হতে
যে আশ্রয় দেবার বদলে যন্ত্রনা দেয়,
চোখের জল মোছাবার বদলে
কান্না দেয়
তাই এ আমার প্রতিবাদ-
প্রতিবাদ একজন পুরুষ হয়েও
সমগ্ৰ পুরুষ সমাজের বিরুদ্ধে।
তাই আমি নারী
হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি নারী
আমি মেয়েছেলে, আমি ন্যাকা
তোমরা আমায় যা খুশি নামে ডাকো
আমি আমার নারীত্বেই খুশি
এবং গর্বিত ও বটে।
২। পাহারা
ফোঁটা ফোঁটা স্বপ্নেরা ঝরে পড়ে স্বপ্নের গায়
আছড়ায়
তরপায়
তবুও পায় না খোলা সামনের আকাশের রাস্তা
ব্যবস্থা
অবস্থা
যতই থাক না তার ওড়বার ইচ্ছেটা উঁচুতে
কিছুতে
না ছুঁতে
পাবার যন্ত্রণা যে কি বিষম বিষময় কষ্টকর
ভয়ংকর
অনাদর
তবু স্বপ্নেরা লালিত যত্নে আজ ও সকলেরই মন পাহারায়।