আচ্ছা বলুন তো শুধু একাকীত্বের বন্ধুই কি ছাদ? না আবার হ্যাঁ। একদিকে যেমন জীবনের মিলনক্ষেত্র ছাদ অন্যদিকে কঠিন পরিস্থিতিতে নিজের দুঃখ প্রকাশ করে মুক্ত বাতাসে একটু অক্সিজেন নেওয়ার জায়গা হল ছাদ। অথচ এই বন্ধু ছাদে মাত্র দু-দশক আগেও অর্থাৎ আশির দশকের পরেই শনির দশা লাগল।
আজ করোনার জেরে ছাদের বুঝি শনির দশা কাটল। তাই বোধহয়, লকডাউনে, একাকীত্ব কাটানো আর অন্যদিকে পরিবারের মিলনক্ষেত্রের জায়গা হয়ে উঠেছে আবার ছাদ। আজ বিকেলে ছাদে উঠে দেখলাম সারা পাড়ার লোক প্রায় ছাদে। এ দেখে হাত নাড়ে তো, ও বলে কী রে খবর কী! আমিও খানিক হেসে, খানিক দুখী মুখ করে নিজের আর সমাজের ও আমাদের দুর্গতির কথা বলতে শুরু করে দিলাম। ছাদের মিলনক্ষেত্রের পরিচয়টা না হয় রবীন্দ্রনাথের বর্ণনাথেকেও শুরু করা যাক।
“ছাদের রাজ্যে নতুন হাওয়া বইল, নামল নতুন ঋতু। … ছাদের ঘরে এল পিয়ানো। আর এল একালের বার্নিশকরা বৌবাজারের আসবাব। বুকের ছাতি উঠল ফুলে। গরিবের চোখে দেখা দিল হাল-আমলের সস্তা আমিরি। এইবার ছুটল আমার গানের ফোয়ারা। জ্যোতিদাদা পিয়ানোর উপর হাত চালিয়ে নতুন নতুন ভঙ্গিতে ঝমাঝম সুর তৈরি করে যেতেন, আমাকে রাখতেন পাশে। তখনি তখনি সেই ছুটে-চলা সুরে কথা বসিয়ে বেঁধে রাখবার কাজ ছিল আমার।
দিনের শেষে ছাদের উপর পড়ত মাদুর আর তাকিয়া। একটা রুপার রেকাবিতে বেলফুলের গোড়ে মালা ভিজে রুমালে, পিরিচে একগ্লাস বরফ-দেওয়া জল আর বাটাতে ছাঁচিপান। বৌঠাকরুন গা ধুয়ে চুল বেঁধে তৈরি হয়ে বসতেন। গায়ে একখানা পাতলা চাদর উড়িয়ে আসতেন জ্যোতিদাদা, বেহালাতে লাগাতেন ছড়ি, আমি ধরতুম চড়া সুরের গান। গলায় যেটুকু সুর দিয়েছিলেন বিধাতা তখনও তা ফিরিয়ে নেন নি। সূর্য-ডোবা আকাশে ছাদে ছাদে ছড়িয়ে যেত আমার গান। হু হু করে দক্ষিণে বাতাস উঠত দূর সমুদ্র থেকে, তারায় তারায় যেত আকাশ ভ’রে।
ছাদটাকে বৌঠাকরুন একেবারে বাগান বানিয়ে তুলেছিলেন। পিল্পের উপরে সারি সারি লম্বা পাম গাছ, আশেপাশে চামেলি গন্ধরাজ রজনীগন্ধা করবী দোলনচাঁপা। ছাদ-জখমের কথা মনেই আনেন নি, সবাই ছিলেন খেয়ালি। প্রায় আসতেন অক্ষয় চৌধুরী। তাঁর গলায় সুর ছিল না সে কথা তিনিও জানতেন, অন্যেরা আরও বেশি জানত। কিন্তু তাঁর গাবার জেদ কিছুতে থামত না। বিশেষ করে বেহাগ রাগিণীতে ছিল তাঁর শখ। চোখ বুজে গাইতেন, যারা শুনত তাদের মুখের ভাব দেখতে পেতেন না। হাতের কাছে আওয়াজওয়ালা কিছু পেলেই দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে পটাপট শব্দে তাকেই বাঁয়া-তবলার বদলি করে নিতেন। মলাট-বাঁধানো বই থাকলে ভালোই চলত। ভাবে ভোর মানুষ, তাঁর ছুটির দিনের সঙ্গে কাজের দিনের তফাত বোঝা যেত না। সন্ধেবেলার সভা যেত ভেঙে। আমি চিরকাল ছিলুম রাত-জাগিয়ে ছেলে। সকলে শুতে যেত, আমি ঘুরে ঘুরে বেড়াতুম, ব্রহ্মদত্তির চেলা। সমস্ত পাড়া চুপচাপ। চাঁদনি রাতে ছাদের উপর সারি সারি গাছের ছায়া যেন স্বপ্নের আলপনা। ছাদের বাইরে সিসু গাছের মাথাটা বাতাসে দুলে উঠছে, ঝিল্মিল্ করছে পাতাগুলো। জানি নে কেন সবচেয়ে চোখে পড়ত সামনের গলির ঘুমন্ত বাড়ির ছাদে একটা ঢালু-পিঠ-ওয়ালা বেঁটে চিলেকোঠা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিসের দিকে যেন আঙুল বাড়িয়ে রয়েছে”। …
“হঠাৎ দূর পাহাড় থেকে বর্ষার জল নেমে সাবেক বাঁধের তলা খইয়ে দেয়, এবার তাই ঘটল। বাড়িতে নতুন আইন চালালেন কর্ত্রী। বৌঠাকরুনের জায়গা হল বাড়ি-ভিতরের ছাদের লাগাও ঘরে। সেই ছাদে তাঁরই হল পুরো দখল। পুতুলের বিয়েতে ভোজের পাতা পড়ত সেইখানে। নেমন্তন্নের দিনে প্রধান ব্যক্তি হয়ে উঠত এই ছেলেমানুষ।
তাই হয়ত একদিন আপশোষ করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, –
“… উঠিলে নব শশী, ছাদের ‘পরে বসি
আর কি রূপকথা বলিবি না গো”!…
রবীন্দ্রনাথ একবার রানী চন্দকে বলছিলেন, ‘দেখ, মরে যে যায়, সে যায়ই। আর তাকে দেখতে পাওয়া যায় না। শুনতাম, ডাকলে নাকি আত্মা এসে দেখা দেয়। সে ভুল। নতুন বৌঠান মারা গেলেন, কি বেদনা বাজল বুকে। মনে আছে সে সময়ে আমি গভীর রাত পর্যন্ত ছাদে পায়চারী করেছি আর আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলেছি, ‘কোথায় তুমি নতুন বৌঠান? একবার এসে আমায় দেখা দাও। কতদিন এমন হয়েছে—সারা রাত এভাবে কেটেছে। সেই সময় আমি এই গানটাই গাইতুম বেশি: আমার বড় প্রিয় গান’।
“আমার প্রাণের ‘পরে চলে গেল কে
বসন্তের বাতাসটুকুর মতো”।
সেই সময় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে নাটক হলেও মেয়েদের দেখার অনুমতি ছিল না। বাংলার মেয়েরা তখনও পর্দানশীন। জোড়াসাঁকো বাড়ির মেয়েদেরও একই নিয়ম। বাড়ির অন্দরমহলের ঘুলঘুলি দিয়েই যেটুকু দেখতে পাওয়া যায়, তা দেখেই সাধ মেটানো ছাড়া তাঁদের উপায় ছিল না। কিন্তু বাড়ির মেয়েদের যে দেখাতেই হবে। কীভাবে সম্ভব? ছেলেরা নানারকম ভাবছেন। গুণেন্দ্রনাথের মাথায় এক বুদ্ধি খেলে গেল। ‘বেঙ্গল থিয়েটার’ এক রাতের জন্য ভাড়া নিলে কেমন হয়? নাটকের পাত্র-পাত্রী বাদ দিয়ে বাইরের কেউ থাকবে না। কেবল জোড়াসাঁকো বাড়ির সভ্যরাই থাকবে। তবে টাকা একটু বেশি লাগবে। তা লাগুক!
যেই ভাবা সেই কাজ। এক রাতের জন্য ‘বেঙ্গল থিয়েটার’ হয়ে গেল জোড়াসাঁকোর বাড়ি। হলের বেঞ্চ সরিয়ে দিয়ে জোড়াসাঁকো বৈঠকখানা থেকে আসবাব এনে সাজানো হল নাটকের হল। বাড়ির ছোট থেকে বড় কেউ বাদ গেল না। দর্শক কেবল জোড়াসাঁকো বাড়ির সভ্যরা। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য।
এরপর নাটকের আসরে নামলেন জোড়াসাঁকো বাড়ির মেয়েরা। কাহিনীতে এল নতুন মাত্রা ‘প্ৰকৃতি’। রীতিতেও এল নতুন ভাবনা, গীতিনাট্য। একদিন বিকেলের আড্ডায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কথাটা তুললেন, আগেকার দিনের বসন্ত উৎসবের কথা। কেমন হত সে সব উৎসব। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অনুরোধে ক’দিন পর স্বর্ণকুমারী দেবী লিখে দিলেন ‘বসন্ত উৎসব’ গীতিনাট্যখানি। শুরু হল ঋতুকে আবাহনে বাঙালির প্রথম উৎসব ‘বসন্ত উৎসব’। লেখার পরই শুরু হয়ে গেল মহড়া। নাটকের পাত্র-পাত্রী বাড়িরই সভ্যরা। স্ত্রী–পুরুষ একসঙ্গে। ‘বসন্ত উৎসবের’ অভিনয় হল জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই। জোড়াসাঁকোর উদ্যান রঙিন আলোয় সেজে উঠল।
এমন সময় রবীন্দ্রনাথ বিলেত থেকে এসে পড়লেন। বাড়িতে অপেরাধর্মী গীতিনাট্যের হাওয়া বইছে। রবীন্দ্রনাথও লিখে ফেললেন অপেরা স্টাইলে গীতিনাট্য ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’। নাটক লেখা শেষ হতে না হতেই নাটকের পাত্রপাত্রী ঠিক করে রিহার্সাল শুরু হয়ে গেল। প্রায় এক মাস ধরে চলল নাটকের মহলা। এবার অভিনয় শুধু ঘরোয়া পরিবেশে অভিনয় নয়। ‘বিদ্বজ্জন সভার’ বাইরের সদস্যরাও থাকবেন।
মহর্ষি ভবনের বাইরের তিনতলার ছাদে স্টেজ বাঁধা হল। রবীন্দ্রনাথ সাজলেন বাল্মীকি। হেমেন্দ্রকন্যা প্রতিভা দেবী হলেন সরস্বতী। লক্ষ্মী সাজলেন বিবি অর্থাৎ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে। রবীন্দ্রনাথের বড়দিদির স্বামী সারদাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়, অক্ষয় মজুমদার, কেদারনাথ মজুমদার সাজলেন ডাকাত সর্দার। পরদিন কলকাতার সংবাদপত্রজুড়ে প্রতিভাদেবীর গান ও অভিনয়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। বাইরের লোকের সামনে ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের সেই প্রথম অভিনয়।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ছাদে টানা রিকশা চড়ে হাওয়া খেতেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়ছেলে দ্বিজেন্দ্রনাথ। কলকাতা শহরের পত্তনের পর পাকা বাড়ি তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছাদ-বিলাসে গা ভাসাতে শুরু করেন আপামর বঙ্গসন্তান। উত্তর ও মধ্য কলকাতার অট্টালিকার বিশাল ছাদে এ সময়ে বসত ঘুড়ি আর ফানুস ওড়ানোর আসর। ঘুড়ির লড়াইয়ে ধরা হত দস্তুর মতো মোটা টাকার বাজি। ঘুড়ি ও ফানুসের পরই ছাদের পারম্পরিক সদস্য পায়রাদের নাম করতে হয়। সে যুগের বাবুদের ছিল পায়রা পোষার বেজায় শখ। ছাদের আলসে ঘেঁসে সারি দিয়ে বসানো থাকত পায়রাদের কাঠের তৈরি আস্তানা। সকালে তাদের দানা খাওয়াতে ছাদে উঠত বাড়ির চাকর। আর বিকেলে নিজের সংগ্রহের লোটন বা লক্কা কবুতরদের নিয়ে জাঁক করতেন বাবুরা।
পর্দানসীন আঠেরো ও উনিশ শতকের বেশ কিছু কাল পর্যন্ত বাড়ির ছাদই ছিল অন্তঃপুরবাসিনীদের মুক্তাঞ্চল। খোলা ছাদে বড়ি বা আচার-মোরব্বা শুকোতে দিতে গিয়ে সারা দুপুর ঘাঁটি গাড়তেন মেয়ে-বউরা। বড়ি-আচারের অবসরে শীতের রোদে পিঠ পেতে ছাদের ওপর বসত প্রমীলাদের আড্ডা। পাড়ার বিভিন্ন পরিবারের হাঁড়ির খবর নিয়ে চলত দীর্ঘায়িত পরনিন্দা-পরচর্চার টইটম্বুর আসর। আচারের টানে গুটিগুটি পায়ে ছাদে উঠে মা-মাসি-কাকিমা-জেঠিমাদের দলে ভিড়ে যেত সদ্য শাড়ি পড়তে শেখা কিশোরিও।
রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, “….শীতের কাঁচা রৌদ্রে ছাদে বসে গল্প করতে করতে কাক তাড়াবার আর সময় কাটাবার একটা দায় ছিল মেয়েদের। বাড়িতে আমি ছিলুম একমাত্র দেওর, বউদিদির আমসত্ত্ব পাহারা, তা ছাড়া আরও পাঁচরকম খুচরো কাজের সাথি। পড়ে শোনাতুম ‘বঙ্গাধিপ পরাজয়”।…
বঙ্গ জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছাদের প্রেম। মন দেওয়া-নেওয়ার লীলাভূমি হিসেবে ছাদের গুরুত্ব অপরিসীম। মিত্তির বাড়ির সদা ভ্রু কুঁচকোনো ‘তাগড়াই বেঁটে বড়দা’কে ছাদে ডাম্বেল ভাঁজতে দেখে রায়বাড়ির খোলা ছাদে কাপড় শুকোতে দিতে আসা সেজোমেয়ে ‘বুটলি’র কীভাবে চিত্ত বৈকল্য ঘটেছিল, সে সবই আজ ইতিহাস। আবার সদ্য বিবাহিত “বিলেত ফেরত” তপেন চৌধুরী ও তাঁর অষ্টাদশী নববধূ মনোরমার ছাদের পাঁচিলে হেলান দিয়ে মুচমুচে সংসারী প্রেমালাপও পাড়ার রোয়াকে ঝড় তুলত বই কি!
প্রেম থাকলে বিরহই বা বাদ যায় কেন! সুদূর মোকামায় কর্মরত স্বামীর হাতে লেখা “প্রিয়ে”-র উদ্দেশে চিঠি পড়ার জন্যও দুপুরের নির্জন ছাদের কোণই ছিল আদর্শ ‘রিডিং রুম’। বলা বাহুল্য, “আমার নাথ”-এর ‘শ্রীচরণকমলে’ “ইতি তোমার দাসী”র নীরব আকুতি লিপিবদ্ধ করার যোগ্যতম জায়গাও ওই ছাদেই। আর পাড়ার বখাটে ছোঁড়ার ভুল বানানে লেখা চিঠি পড়শি দিদির হাত বেয়ে পৌঁছলে,বাড়ির তাবড় বড়দা-ছোটকা-রাঙাপিসি-ফুলকাকীর সংগঠিত স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের চোখে ধুলো দিয়ে তার জবাব লেখার কাঙ্খিত নির্জনতাও জোগাত এজমালি বাড়ির ছাদ।
ছাদে বাগান করার শখ সে তুলনায় অনেক পরে শুরু হয়। বাড়ির চৌহদ্দিতে ছাড় দেওয়া ফাঁকা জমির অপ্রতুলতাই এ ব্যাপারে উত্সাহিত করে শহরবাসীকে। তবে দেরিতে শুরু হলেও তা ভালো রকম জেঁকে বসে তিলোত্তমায়।
আবার সত্তরেই উথাল-পাথাল দিনগুলোয় মাও-সে-তুং-এর রচনাবলী, চারু মজুমদারের ছাপানো বক্তৃতা অথবা জঙ্গল সাঁওতালের কর্মকাণ্ডের বিবরণ পড়ে রক্তে তুফান তোলার সাক্ষীও পোড়ো ছাদের অংশ। যেমন অনুজ্জ্বল হয়ে যায়নি গ্রীষ্মের রাতে ছাদের ওপর মাদুর পেতে শুয়ে অকৃতদার সেজ জেঠার কাছে সপ্তর্ষি মণ্ডল, কালপুরুষ, পুষা বা স্বাতী নক্ষত্রদের চিনে নেওয়ার সহজপাঠ। এ যুগের ম্যারেজ হল বা বিয়েবাড়ির কনসেপ্ট উদয় হওয়ার ঢের আগে বাড়ির ছাদই ছিল বিয়ে-অন্নপ্রাশন-উপনয়ন-শ্রাদ্ধ উপলক্ষে ভোজের অদ্বিতীয় ভেন্যু। এ ছাড়া, ছাদের ওপর বাড়ির উদীয়মান শিল্পিদের বিচিত্রানুষ্ঠান পরিবেশনও নস্টালজিয়ার সুখী ঢেঁকুর তোলায়।
সেই ছাদের কার্নিশে শ্যাওলা জমেছে দিনের পর দিন। বুক চাপা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে একসময় বুড়ো হয়ে গেছে। পৃথিবীর এই দারুন অসুখে আস্তে আস্তে বাইরে বেরুনো বন্ধ হয়ে গেল, নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া আমরা আর বারমুখো হচ্ছি না। সারাদিন যেমন তেমন ওয়ার্ক ফ্রম হোম করে কেটে গেলেও বিকেল টা ছাদে ওঠা ছাড়া উপায় রইলো না। ছাদ একটা রূপক মাত্র, এমন অনেক কিছু আমরা অবলীলায় অবহেলা করে সরিয়ে রেখেছি আমাদের জীবনে। ভালোবাসার মানুষ হোক বা ছাদ অবহেলা বড় সহজে করা যায়। মুহূর্তের অবহেলা কোথায় গিয়ে ভাইরাসের মত হৃদয়ে গর্ত করে দেয় তা কেউ বোঝে বা বোঝে না। মানুষের থেকে শারীরিক ভাবে দূরে থাকার সময়ে, আজ আমরা আরো কাছে আসতে পারছি বোধহয় মানুষের, ভালোলাগা জিনিসের। এই দুর্দিনে তাই বা কম কী!
ঋণ: রবীন্দ্ররচনাবলী / ইন্টারনেট