পর্ব – ১৪০
শ্যামলী বলল মা, জন্ম জন্মান্তরের সম্পর্কের আরেকটা গল্প বলি শোনো। এক সাংঘাতিক তেজস্বী ঋষি ছিলেন অগস্ত্য। তিনি নাকি তপস্যার জোরে একটা অসাধারণ সুন্দরী মেয়ে তৈরি করেছিলেন। জগতের সব মেয়ের সৌন্দর্যের চাইতে বেশি সে মেয়ের সৌন্দর্য। তাই মেয়েটির নাম হল লোপামুদ্রা।
ঋষি ঠাকুর তপস্যা করেন। তীর্থে তীর্থে ঘুরে ঘুরে বেড়ান। বাচ্চা মানুষ করার সময় কোথায় তাঁর? লোপামুদ্রাকে বড়ো করার ভার তিনি দিলেন বিদর্ভরাজের উপরে। লোপামুদ্রা বড়ো হয়েছে শুনে মুনিঠাকুর ফিরলেন বিদর্ভরাজের রাজসভায়। বললেন, লোপামুদ্রাকে তিনি স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবেন। শুনে বিদর্ভরাজের মনটা কেমন করে উঠল। তিনি জানেন অগস্ত্য ঋষি লোপামুদ্রার সৃষ্টিকর্তা। অর্থাৎ পিতা। এমন সম্মানিত মানুষ কন্যাগমন করবেন! প্রাণ কেঁদে উঠলো তাঁর। কিন্তু সাহস হল না ঋষির ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। লোপামুদ্রাকে গ্রহণ করলেন অগস্ত্য। তারপর একদিন ঋতুস্নান করে সৃষ্টিকর্তা অগস্ত্যের অঙ্কশায়িনী হলেন লোপামুদ্রা। গর্ভবতী হলেন তিনি। তাঁর গর্ভে অত্যন্ত শক্তিশালী এক পুত্র জন্মাল। নাম হল তার দৃঢ়স্যু।
বাসন্তীবালা মেয়ের উপর বিরক্ত হয়ে বললেন, এইসব উদ্ভট গল্পগুলো আমাকে শোনাতে চাইছিস কেন?
পুরাণ থেকে আর একটা গল্প তোমাকে বলব মা।
এমন সময় সবিতা এসে বললেন, ছেলেদের খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে। এখন নিশ্চিন্তে তোমাদের গল্প শুনতে পারব।
বাসন্তীবালা বললেন, গল্প না ছাই। যতো গাঁজাখুরি কথাবার্তা। না আছে মুণ্ডু, না আছে মাথা।
শ্যামলী হাসল। আচ্ছা। আর একটা গল্প শোনো। সে কালে যাজ্ঞবল্ক্য ছিলেন খুবই নাম করা মানুষ। তো তাঁর বোন ছিলেন কংসারী।
বাসন্তীবালা বললেন, সে কি রে, কংসারী আবার মেয়েদের নাম হয়?
শ্যামলী বলল, তো কংসারী একদিন তাঁর ভায়ের রেতঃপরিপ্লুত কাপড় পরে স্নানে গিয়েছিলেন।
বাসন্তীবালা বললেন, রেতঃপরিপ্লুত মানে?
শ্যামলী বলল, পুরুষের বীর্য মাখামাখি।
সবিতা হাঁ করে শ্যামলীর দিকে তাকিয়ে রইলেন। শ্যামলী বলল, কংসারী স্নানে গেলে তাঁর ভাইয়ের কাপড় থেকে বীর্য তাঁর অভ্যন্তরে প্রবেশ করল। তারপর কংসারী অন্তঃসত্ত্বা হলেন। লোকলজ্জার ভয়ে তিনি একটি পিপুল গাছের নিচে সদ্যোজাত সন্তান কে পরিত্যাগ করে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন। অশ্বত্থ বা পিপুল গাছের নিচে বাচ্চাটাকে পাওয়া গিয়েছিল বলে, তার নাম হল পিপ্পলাদ।
বাসন্তীবালা বললেন, চান করতে গেল, আর গর্ভবতী হল, এইসব ভুলভাল গল্প তুই পাস কোথায়?
শ্যামলী বলল, বাবা, অনেক আগে আমার ধারণা ছিল যে ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে হত মিশরে। তাকে বলত ইনসেস্ট। ভাল বাংলায় অজাচার। পরে ভেবে দেখলাম অজ ছিলেন রামচন্দ্রের পূর্বপুরুষ। অজাচার শব্দ যখন তৈরি করা হয়েছে, তখন ওই আচরণ করতে অভ্যস্ত লোকও কিছু থাকবে।
ভাই বোন সম্পর্কের মধ্যে যৌনতা ভাবতে আমাদের রুচিতে বাধে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তা সবার বাধত। ভাই বোন, বাপ মেয়ে, ভাসুর ভাদ্দরবৌ, এই সব সম্পর্কের মধ্যে যৌনতাকে দৃষ্টিকটু বলে চেনায় আমাদের বোধ। কিন্তু তা যে চিরকালের নয়, তা তো জানতে হবে। যে যমরাজকে ধর্ম বলে, তিনি নিজের সহোদরা বোন যমুনাকে কামনা করেছিলেন। কংসারীর ঘটনাতেও বলতে ইচ্ছে করছে অবাঞ্ছিত গর্ভসঞ্চারের একটা ছায়াপাত আছে। শরৎচন্দ্রের পল্লীসমাজ পড়ে দ্যাখো, সভ্যভব্য ঘরে বিধবা যুবতীরা বাড়ির পুরুষদের হাতে গর্ভবতী হয়ে পড়লে, অবৈধ গর্ভপাত করাতে গিয়ে অনেক মেয়ের প্রাণ বিপন্ন হত। এমন সময় সবিতাপিসি মুখটা আঁচলে আড়াল করে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। কেন, তা কেউ বুঝতে পারল না।
ক্রমশ…