• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ২২)

বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সি – ২২

সমুদ্রপাড়ে বহু মানুষের ভীড়। দল বেঁধে ওদের গ্রুপের সবাই চলেছেন। তারমধ্যেই কয়েকজন মাঝে মধ্যেই আড়াল হয়ে যায়। আড়াল হয়ে যাওয়া লোকজনের মধ্যে সেই নবদম্পতিও আছে। ওদের নামগুলো বলা হয়নি, অনিন্দ এবং রিয়া। দুজনেই আই টি সেক্টরে চাকরি করে। সাংঘাতিক কাজের চাপ। ঠিক ছিলো বিদেশে যাবে হনিমুন সারতে। সমুদ্রে ভেসে যাবে ক্রুজে চড়ে, গন্ডোলা চাপবে বৃষ্টির দিনে, উটের পিঠে চড়ে পিরামিডের খুব কাছে চলে যাবে, সেরিংগেটির জঙ্গলের মধ্যে তাঁবুতে রাত কাটাবে, চারিদিকে বন্য জন্তু, মাঝখানে ওরা, নায়াগ্রার রামধনু দেখবে, সময় এবং অফিস বড় বিশ্বাসঘাতক। বিয়ে তো হলো, কিন্তু ছুটি সব মিলিয়ে খুব কম। আর তাই বাইরের অভিযান বন্ধ। বরং অল্প কয়েকদিনে চেনা জানা চিরদিনের ভালোবাসার জায়গা পুরী। অনিন্দর বাবা মা হনিমুনে পুরী এসেছিলেন, রিয়ার বাবা মাও তাই। আর তাই খুব একটা না ভেবেই ওরা চলে এলো পুরী। একা আসতেই পারত। সাধারণত হনিমুনে সবাই দুজনে মিলে একা হয়েই যায়। কিন্তু যেহেতু অফিসের ছুটি ওরা পায় নি মনপসন্দ হনিমুনের জন্য, তাই অদ্ভুত এক রাগে বল্টুদার গ্রুপের সঙ্গে পুরী চলে এলো ওরা।
বাসে সবার থেকে একটু আলাদা আলাদাই ছিলো ওরা। নিজেদের মত সময় কাটচ্ছিলো। গেস্ট হাউসে গিয়েও প্রথমের দিকে তাই ছিলো। নিজেদের একান্তের সময় কাটানো আর কি। বল্টুদাও সবাইকে আড়ালে বলে দিয়েছিলেন ওদের যেন ডিস্টার্ব করা না হয়। কিন্তু ওই সবার সঙ্গে মিশে যেতে যেটুকু সময় লাগে আর কি। তারপর সবার সঙ্গেই ভাব। একটা পরিবার যেন। বৌদিকে যখন পাওয়া যাচ্ছে না, তখন অনিন্দ ও রিয়াও বেরিয়ে গিয়েছিলো সবার সঙ্গে পথে। খাওয়া দাওয়া, আড্ডা, হুল্লোড় সবার সঙ্গে একসাথে। অনিন্দ এবং রিয়া বড্ড সুন্দর গান করে। প্রান জুড়িয়ে যায় যেন। বিকেলের সমুদ্রপাড়ের আড্ডায় কিম্বা সকালে গেস্ট হাউসের চায়ের আড্ডা যাই হোকনা কেন অনিন্দ আর রিয়ার গান চলছেই।
দুপুরে কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে সবাই সমুদ্রের পথে হাঁটা লাগালেন। রিয়া আর অনিন্দও তাই। সবে রেডি হয়ে বেরোচ্ছে ওরা, হঠাৎ……..
শোরগোল পরে গেলো কিছুক্ষনের জন্য। রিয়া এবং অনিন্দর বাইরে বেরোবার জুতো দুটি পাওয়া যাচ্ছে না। কি অদ্ভুত, হোটেলের ঘর থেকে নেবে কে জুতোগুলো। যেহেতু ওদের সবার সঙ্গে একই ঘটনা হচ্ছে তাই জুতদুটো যে চুরি হয়েছে তাতে বোঝার অসুবিধে হলো না। এই দুপুর বেলা কে নেবে জুতোগুলো। বল্টুদাও দলবল নিয়ে জুতো খুঁজতে লেগে গেলেন। কিন্তু কোথাও নেই। জুত কোত্থাও নেই। বল্টুদা ওদেরকে নিয়ে এক ছুটে চলে এলেন গেস্ট হাউজের ম্যানেজারের ঘরে। লবিতে ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। কিছু একটা অবশ্যই পাওয়া যাবে এবার।
ম্যানেজার ঘুমিয়ে ছিলেন। সারাদিন বেশ চাপ যায় তার। এর এই দরকার, ওর ওই, এই বাথরুমের লক খারাপ তো ওই ঘরের আলো, সে হাজার ঝামেলার ব্যপারস্যাপার আর কি। সারাদিনের খাটাখাটুনির পর, সবার দুপুরের খাওয়াদাওয়া হয়ে গেলে প্রায় পড়ন্ত দুপুর কিম্বা শুরুর বিকেলের দিকে প্রতিদিনই হাল্কা একটা ঘুম আসে তার। খুব বেশী নয়, ঘন্টা খানেক কিম্বা ঘন্টা দেড়েক আরামের একটা ঘুম। আজ হঠাৎ করেই ঘুমটা গেলো কেচে। বিকেল হয়ে গেছে। সবাই বাইরে বেরুচ্ছে। ঠিক এই সময়েই ম্যানেজারের ঘরে হাজির হলেন বল্টুদা, অনিন্দ, রিয়া শুদ্ধ দলবল। তারা প্রথমে কিছুটা হম্বিতম্বি দেখালো বটে, যে হোটেলের ঘর থেকে চুরি হয় কি করে? ম্যানেজার কম্পিউটারের পাশে গিয়ে বসলেন। এখানেই সমস্ত ক্যামেরার ছবি এসে স্টোর হয়। খুব বেশীক্ষন আগের ঘটনা নয়, সুতরাং সবার পরামর্শে ক্যামেরার স্টোরে গেলেন বল্টুদা। অদ্ভুত,,আশ্চর্য, ভাবা যায় না, কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক থেকে কিছুক্ষনের আগের ঘটনাটা খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। পুরোপুরি উধাহ। এমনত কখনোই হওয়ার কথা নয়।
সেই সময়ে ম্যানেজারের ঘরে সবাই জড়ো হয়েছেন। বৌদি, গুহ দা, গাড়ির ড্রাইভার কানাই, রান্নার ঠাকুর, নদী আরো সবাই। বল্টুদা অনিন্দ আর রিয়াকে একটা রিক্সা ডেকে তুলে দিলেন জুতোর দোকানের উদ্দেশ্যে।
মনটা ভালো নেই কারো। লোকের অনেক কিছু চুরি হয়, কিন্তু সামান্য জুতো একের পর এক চুরি হয়ে যাচ্ছে এটা মন খারাপের থেকেও আশ্চর্যের। অনিন্দ আর রিয়া রিক্সায় গেলেন জুতর দোকান। সেই জুতর দোকান যেখান থেকে বৌদি চুরি হওয়া জুত ফেরত পেয়েছিলেন। যদিও জুত চুরি খুব একটা বেশীক্ষন হয় নি। অনিন্দ আর রিয়া ভাবতে লাগলো কখন ঘটেছে ঠিক ঘটনাটা। অনেক ভেবে ওরা যেটা বুঝতে পারলো যে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করতে ওরা নীচে নেমেছিলো। সে সময় তাদের জুতটা চুরি করেছে চোর। যেহেতু বাড়ি থেকে আনা স্লিপার রয়েছে ওদের তাই বাইরে যাওয়ার জুতগুলো গেস্ট হাউজের ঘরের মধ্যে একপাশে রাখা ছিলো। একটা ব্যপার বুঝতে পারলো ওরা, যে ভাবে ঘটনাটা ঘটেছে তাতে ভিতরের কোনো লোকের কারসাজি তো আছেই।
বাজারে সেই দোকানটার কাছে পৌঁছে গেলো ওরা। একথা সেকথার পর দোকান দারকে জিজ্ঞেস করলো পুরনো জুত রাখেন শুনেছি, সেগুলো দেখতে চাই। আশ্চর্য, এ কথায় দোকানদার অবাক হয়ে গেলেন। পরিস্কার বললেন আমরা পুরনো জুত কখনো রাখি না, আগে ও কখনো রাখিনি।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।