চিন্তা নিতান্তই কম ছিলো না। নৈহাটির বাড়িটার বয়সই নয় নয় করে ১৫০ বছরের দিকে পা বাড়িয়ে(বাড়িটির দুটি অংশ, একটি নতুন করে রিমডেলিং করা, অন্যটি একই রকম ধরে রাখা আছে স্মৃতির জন্য)। বনগাঁর পুরোনো বাড়ি রিমডেলিং করা, আর নতুন বাড়িদুটি নিয়েতো চিন্তার কিছুই নেই। আমি কি আমার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব দিচ্ছি? না, মোটেই তা নয়। আসলে সেদিন আমফান ছিলো কিনা। এহেন সময়ে আমি সপরিবারে সুস্থ আছি বাড়ি ঘর সহ সেটাই বলতে চাইছি। এতোদিন পরে কেন বলছি! ক্রমশ প্রকাশ্য
যাক, আমফান ফানুসের মতো রাজ্যকে উড়িয়ে দিলো। তবে পরিণামে সে যে কাউকে কাউকে ভর করেছিলো কয়েকদিন সেটা বেশ টের পেলুম। একদল মানুষ আমফান, আম্ফুন (বানান নিয়ে বহু দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করে) কত কবিতা, গদ্য যে নামিয়ে ফেললো। আবার আর একদল চেঁচানো শুরু করলো, ফাজলামি হচ্ছে বলে। কেউ কেউ দুপক্ষের কোনো পক্ষে বা দুই পক্ষেই কমেন্ট করে এলেন ‘অপুর্ব’, ‘দারুন’ গোছের কিছু দুর্মূল্য কমেন্ট। কেউ কেউ তো আদেশ করলেন ফাজলামি ( যদিও নিতান্তই কবিতা ও গদ্য) বন্ধ হোক। যেন দাসানুদাস পেয়েছে
এমন সময়ই মনে এলো পুচকে কবি আকাশ সাহার কথা। আমি কবিতা পড়ার বিষয়ে বড্ড গোঁড়া, অতিটকের অকারণ জটিলতা কোনো কালেই পোষায় না। যারা আমার নৈহাটি হোক বা বনগাঁ যে বাড়িতেই এসেছেন দেখা করতে, বা আড্ডা দিতে তারা জানেন আমি ঠিক কী আর কাদের পড়ি। আকাশ আমার জেলার একজন কবি যাকে আমি পড়ি। ওই ব্যাটা ফণীর সময়ে কোনো এক বিকেলে ফণী নিয়ে খিল্লি করে লেখা কিছু পড়ে বেশ উত্তেজিত ছিলো আর তার ফলে ফেসবুকেই সে আবেদন জানায় যে ফণী নিয়ে ইয়ার্কিটা না মারতে। চোখটা আমার তখনই পড়ে। ওর সাথে কমেন্টবক্সেই কয়েকটি কথা হয়, আমার বুঝতে দেরি হয়নি ওর অস্বস্তির কারণ। ও সংবেদনশীল, ওর কষ্ট হচ্ছিলো। ওটাই ওর মানবিকতা। ওকে আদর। আমায় এই আমফান নিয়ে লিখতে রসদ দিলো
টাইটানিক সিনেমাটা বহুদিন দেখা হয়নি, তবু বেশ চোখে ভাসে সেই শেষের সিনগুলো। সেইযে টাইটানিক ডুবছে আর একদম বেহালাবাদক করুণ সুরে বেহালা বাজাচ্ছেন। তারা কি জানতেন না তারা ডুবতে চলেছেন? সিনেমায় সব হয়। বেশতো অন্যদিকে তাকাই? সহজ উদাহরণ সবসময়ই অগ্রাহ্য হয়, কঠিনকেই যেন ঠিক লাগে। অগত্যা… দু দুখানা বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবী দেখেছে। আর সাহিত্য দেখেছে যুদ্ধে যাওয়া বা না যাওয়া কবিদের হাতের ছাপ। কোনো হাতের ছাপ রক্তে লাল, কোনোটা চোখের জলে ধূসর। এদের থেকে আর একদল কবি ছিলেন যারা যুদ্ধের রক্ত, বা চোখের জল না দেখে কেউ যুদ্ধকে দেখেছেন প্রেমিকা রূপে, কেউ দেখেছেন বাড়িতে ফেলা আসা বউ, কেউ দেখেছেন নতুন সূর্যের আলো, কেউ বা পরমমিত্র, কেউবা সৈনিক রক্তে দেখেছেন তাজা গোলাপের বাগ। ‘পিস ইজ দা রেজাল্ট অফ ফাইট’— এই তত্ত্ব ঠিক ভুল নিয়ে আলোচনায় যাচ্ছি না, তবে এনারা কেউ ফেলনা নন, খিল্লিবাজও নন। রোমান্টিক ওয়ার পোয়েটরা কি গাছে ফলেছিলেন? এখানেও কথা আছে, ওনারা হলেন গিয়ে কবি, এই ছোটছোট ছেলেমেয়েগুলো কি কবি যে এরা লিখবে! আমি হরিদাস পাল, আমি লিখলে নয় হতো!
আসলে চাপটা অন্য জায়গায়। আমি যাকে কিছু মনে করি না, তার লেখা আবার কিছু হতে পারে নাকি! প্রতিটি শতকে কত মানুষ লেখে, কবি হয় ২/৩ জন। না স্যার। কবি কেউই থাকে না, তাদের কবিতাটা থেকে যায়। যেমন ফণী এলো না, অথচ কারুর কারুর অর্ধশিক্ষিত বাঁদরামো থেকে গেলো
আমফান নিয়ে ছোটদের খিল্লি করার মতো পর্যাপ্ত সময় নেই। তারা আমার, আপনার মতো বেকার ফেসবুকে বসে ডায়লগবাজি করে না। তারা সেটাই লেখে যখন তার মনে আসে যা। তারা লিখতে লিখতে খেলে, তারা খেলতে খলতে লেখে। দুই এর সাথে এক যোগ করে মহাশূন্যের থেকে ডেরিভেটিভ করে আরো এক জোগার করে মোট চার করে জীবন দেখে না
আবার প্রথম কথাতেই ফিরে লেখাটায় ইতি টানবো। চিন্তা, টেনশন আমাদেরও হয়। দায় দায়িত্ব আমাদেরও কিছু কম নেই। সুতরাং নিজের চাকায় তেল দেওয়া বেটার, যদি ঘোরে। যদিও জানি ও চাকায় কুজো, কলসি, হাড়ি তৈরি হবে না দেখুন না যদি চায়ের ভাঁড় অন্ততপক্ষে হয়। এই প্রাক বর্ষার বেশ রোমান্টিক বৃষ্টি চলতে শুরু করেছে এসময়ে গরম চা-টা কিন্তু বেশ লাগবে… সিগারেট ছেড়ে দিতে চাইছি, তাই ওটা থাক