• Uncategorized
  • 0

মনের কথায় কৃপা বসু

আমার এক একসময়ে ছাদ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। মনে হয় কেন বেঁচে আছি, কার জন্য বেঁচে আছি….
ছাদে গিয়ে মাদুর পেতে বসি, মাথার উপর দিয়ে প্লেন উড়ে যায়, গ্রীষ্মকালের সন্ধে বেলায় হাওয়া দিলেই আমের গন্ধ ভাসে। ছোটবেলায় কাঁচা মিঠা আম নুন লঙ্কা দিয়ে মাখিয়ে ছাদে বসে খেতাম, মা চুলে তেল দিয়ে চুল বেঁধে দিতো….
স্কুলে যাওয়ার সময় মা থালায় ভাত মেখে খাইয়ে দিতো! বহুদিন হয়ে গেল মায়ের হাতে ভাত খাইনি, স্কুল ড্রেসটা এখনো আলমারিতে তোলা আছে…..
বাবা অফিস থেকে ফেরার সময় হাতে করে আর জিলিপি নিয়ে আসে না। এসব ভাবতে ভাবতেই চোখ লেগে আসে, আমি স্পষ্ট দেখতে পাই একটা মাঝবয়সী ছেলে সিঁড়ির কোনায় দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে….
কারেন্ট অফ হয়ে যায়, ভয় পেয়ে আমি দৌঁড়ে পালাতে যাই, ছেলেটা হাত টেনে দেওয়ালে ঠেসে ধরে আমায়….
আমার ওই হাতের স্পর্শ বড্ড চেনা লাগে, ওই স্পর্শ আমি আগেও কোথাও পেয়েছি, মনে পড়ছে না ঠিক…
ছেলেটি কানের কাছে মুখ রেখে বলে,
“সময়ের শেকলে আমাদের জীবন আটকে আছে নন্দিনী! এইটুকু মুহূর্তই আমরা পেয়েছি, আমরা স্বাধীন এখন! আমাদের মধ্যে আর কেউ নেই, কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না এই মুহূর্তে!
এসো আমরা একে অপরকে ভালোবাসি, একে অপরের মধ্যে ডুবে যাই, ঠোঁট ডুবিয়ে খুঁজে বেড়াই আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন”….
ব্যাকগ্রাউন্ডে হঠাৎ একটা গান বেজে ওঠে,
“আজ জানে কি জিদ না করো! হাম তো মর যায়েঙ্গে, ইউহি লুট যায়েঙ্গে, এয়সি বাতে কিয়া না করো! আজ জানে কি জিদ না করো”…..
ছেলেটির গলার আওয়াজ শুনে আমার ফারহান দার কথা মনে পড়ে। এইরকম একটা সন্ধে বেলায় আমার জন্মদিনের দিন ফারহান দা এসেছিল দেখা করতে এক গাছা বেল ফুলের মালা আর একটা চিঠি নিয়ে, অনেকগুলো চকলেটও এনেছিল….
ফারহান দা যখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল, তখন আমি পেছন থেকে জাপটে ধরে ফারহান দাকে বলেছিলাম,
আমার যৌবন তোমায় ছাড়া বড্ড বেমানান, বড্ড ফাঁকা, আমি তোমায় ছাড়া নিঃস্ব ফারহান দা!
অনেকদিন আমায় কেও ছুঁয়ে দেখেনি, চোখের পাতা থেকে ঘুম কেড়ে নেয়নি। অনেকদিন আমি রক্ত মাংসের শরীর ছুঁয়ে প্রেম করিনি, আমার বুকে অনেকদিন কেউ হাত দেয়নি, বুকের ভেতরটা অনেকদিন কেঁপে ওঠেনি।
ভিড়ের ভেতর চলতে গিয়ে অনেকদিন থমকে দাঁড়াইনি কারোর জন্য! আমায় একটু আগুন দিতে পারো? ভেজা পিঠ সেঁকে নেবো…..
আমায় চিলেকোঠার ঘরে টেনে নিয়ে গিয়ে আদর করতে পারো? অনেকদিন আমি কারোর সামনে ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হইনি, আজ হতে চাইছি, তুমি এই সময় চলে গেলে মরে যাবো ফারহান দা….
যদি ভালোবাসো, কথা দিলাম সব মৃত্যু পেরিয়েও তোমার কাছে থেকে যাবো ফারহান দা, কথা দিলাম….
সেটাই শেষ দেখা আমাদের, তারপরে আর কোনোদিন ফারহান দার গায়ের গন্ধ পাইনি, ফারহান দার স্পর্শ পাইনি….
আমি এই ছেলেটির গা থেকে ফারহান দার গন্ধ পাচ্ছি কেন! গলার আওয়াজে এত মিল কেন, ছেলেটি ঘাড়ের কাছে মুখ রাখলে আমি এত শান্ত কেন হয়ে যাচ্ছি!….
হঠাৎ কারেন্ট আসে, আমি দেখি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফারহান দা! যে ফারহান দা আমার জন্মদিনের পরের দিন বাইক এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।