• Uncategorized
  • 0

গল্পে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক

পন্ডিতের মতিচ্ছন্নতা

কৃষ্ণানন্দ ভট্টাচার্য-মশাই এই আধা-শহরের স্কুলের হেডপন্ডিত।
ন্যায়তীর্থ,পন্ডিতমশাই, স্কুলের পন্ডিতগিরি ছাড়াও এ অঞ্চলের লোকেদের পারত্রিক ক্রিয়া-কল্যাণে উপদেশ দিয়ে থাকেন এবং শ্রাদ্ধাদি অনুষ্ঠান করিয়ে ভালোই অর্থ উপার্জন করেন।একে কুলীন-বামুন, অন্যদিকে হাইস্কুলের পন্ডিত;তো প্রায়শই ‘ব্রাহ্মন-ভোজন’-এর নিমন্ত্রণের ডাক পান।; ভালো-মন্দ খাবারের সাথে বিদায়-পর্বের আয় (দক্ষিণা) ভালো ই হয়। শহরের দোকানের সাথে চুক্তি করাই আছে,মাসে একবার করে এসে বিভিন্ন সামগ্রী তারা নিয়ে যায়-সে সব বিক্রয় বাবদ অর্থও নেহাৎ কম নয়। বামুনের এটা উপরি-পাওনা;পইতের সময় যা হোক একটু খরচ-খরচা হয় বটে,তবে সেই বিনিয়োগ সারাজীবন ডিভিডেন্ড দিয়ে থাকে। এই গল্পের পন্ডিত-মশাই কুলীন হ’লেও একের বেশী দার গ্রহণ করেননি।যদিও ওনার ঠাকুরদা কত দার গ্রহণ করেছিলেন জানতে,দাদুর খাতা দেখে বলা সম্ভব।যাই হোক, আমরা এখন কৃষ্ণানন্দ ভট্টাচার্য,ন্যায়তীর্থমশাই-এর জীবনচর্যা নিয়ে পড়েছি।
ভট্টাচার্য মশাই’র বাড়ি একেবারে স্কুলের পাশেই।তাই কাজের দিন ক্লাস আরম্ভ হওয়ার পনেরো আগে ওয়ার্নি-বেল বাজলে উনি পোষাক-পরিচ্ছদে প্রস্তুত হন, দোদুল্যমান শিখার বন্ধনকে দেখন্-সই সুদৃঢ় করে,ঠিক ফাইনাল-বেল বাজার কয়েক মুহূর্ত আগে স্কুলে প্রবেশ করেন।অফিস-ঘরে তাঁর বসার চেয়ারের হাতলে চাদরটাকে পরিপাটি করে,ছাতাটি চেয়ারের পিছনে ঝুলিয়ে প্রার্থনা-স্থলের দিকে এগিয়ে যান।গত সাতাশ বছরের কোনদিনের তরে এর ব্যত্যয় হয়নি। প্রার্থনার পর স্কুলের পুরোনো পিওন সদানন্দ প্রত্যেক ক্লাস-টিচারের হাতে নির্দিষ্ট ক্লাসের খাতা ধরিয়ে,চক-ডাস্টার দিয়ে বাকি খাতা বগলে অফিস-ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
অফিস-ঘরটা একটু লম্বাটে ধরনের।দুটো জানালা ও একটি দরজা।একটি জানালার ধারে অফিসের বড়-বাবুর টেবিল। তিনি,
সহকারীর সাহায্যে জানালাটিকে কাউন্টার হিসাবে ব্যবহার করে স্কুলের যাবতীয় অফিস-সংক্রান্ত
কাজকর্ম সারেন।অফিস-ঘরের অন্য প্রান্তের জানালার কাছে স্কুলের সহকারী প্রধান-শিক্ষক মশাই’র টেবিল।তার উপরে কাঁচের তলায় চাপা টেবিল জুড়ে পাতা বছরের প্রথমেই তৈরী সারা-বছরের ক্লাসের স্থায়ী রুটিন।
টেবিলের দু’পাশে আছে দুটো করে চারটে হাতল-ওয়ালা চেয়ার।ঐ চেয়ার গুলোতে স্কুলের বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষক পন্ডিত মশাই,বাসুমশাই,সিংহ-রায় ও পতিতুন্ড মশাই বসেন।নব্য ও অল্পবয়সী শিক্ষক দের জন্য অফিসের ঠিক উল্টোদিকে রয়েছে স্টাফ-রুম। শিক্ষকদের অনেকেই এ স্কুলের ছাত্র,যাতে কোন পক্ষেরই কোন অসুবিধা না হয়,
প্রাণখোলা আলাপচারিতায় ব্যাঘাত না ঘটে,বয়সোচিত তারুণ্যের প্রবাহ যেন কোনভাবেই বাধাপ্রাপ্ত না হয়ে,তাই এই ব্যবস্থা। প্রবীনদের কেউই ক্লাস টিচার নন। খাতা,ক্লাস-টিচারদের দেওয়ার পর অবশিষ্ট থাকলে সদানন্দ ওগুলো সঙ্গে সঙ্গে সহকারী প্রধান-শিক্ষক মশাইয়ের কাছে জমা দেয়। সহকারী প্রধান শিক্ষক মশাই তৎক্ষণাৎ প্রবীণদের সঙ্গে আলোচনা করে অতি দ্রুত ক্লাস-রুটিনের পরিবর্তন ক’রে প্রবীণদের মধ্যে এক বা একাধিক জন গিয়ে অনুপস্থিত টিচারের পরিবর্তক হিসাবে ক্লাসে অবস্থার সামাল দেন। স্কুলের নিয়মানুবর্তিতায় যেন কোন ব্যাঘাত না ঘটে। শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা বোধ সব সময় বয়স্কদের কাছ থেকে ছোটদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। ছেলেরা বড়দের কাছ থেকেই সব শেখে,তাই সবাই সজাগ।
স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বয়স বেশি নয়; অন্ততঃপক্ষে ঐ প্রবীণ চারজনের চেয়ে বয়সে ছোট।নয়,নয় ক’রে তাঁদের প্রত্যেকেই প্রায়২৭/২৮বছর এই স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। স্কুলের কী শিক্ষক,কী ছাত্র,সবাই এদের সমীহ করে, সম্ভ্রমের চোখে দেখে। শিক্ষক-দিবসে নিকটবর্তী কলেজের অনুষ্ঠানে বাসুমশাইকে সভাপতি পদে বরণ করা হয়।পান্ডিত্য ও ব্যবহারে আদরণীয় বাসুমশাই প্রথম জীবনে ভারতের এক প্রথিতযশা দৈনিক পত্রিকায়
সাংবাদিকতা করেছেন। তারপর,ছাত্র ও মানুষ গড়ার কারিগরত্বে মনোনিবেশ করেছেন।আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর। প্রতি বছর বোর্ডের ফাইনাল পরীক্ষার সাফল্য তার সাক্ষ্য বহন করে।
মাত্র একমাস হ’লো ভট্টাচার্য-মশাই’র স্ত্রী-বিয়োগ হয়েছে।এই প্রবীন বয়সে বিপত্নীক হওয়ার ঝক্কি অনেক।পন্ডিতমশাই-এর সংসারে তাঁকে বাদ দিয়ে মাত্র তিনটি প্রাণী-স্ত্রী রমনী,কন্যা শতাক্ষী ও পুত্রের জয়দেব।তার মধ্যে একজন চলে গেলেন।কন্যা এবার উচ্চ-মাধ্যমিক ফাইনাল পরীক্ষা দেবে।পড়াশোনায় মোটামুটি–বাবার বিষয়ে আগ্রহী। পুত্রের জয়দেব ও পথে হাঁটে না।কমার্স নিয়ে স্থানীয় কলেজে বি,কম পড়ে,এবার ডিগ্রী ফাইনাল পরীক্ষার্থী। পড়াশোনা ছাড়া অন্য সব বিষয়ে সে আগ্রহী।পন্ডিতমশাইও বাবার একমাত্র পুত্র ।ওঁনার ঠাকুরদা কুলীনের ধর্ম বজায় রেখেছিলেন—-তাঁর ঠাকুরমারা কতজন এবং কে কোথায় থাকেন,আছেন কিনা–সবই তাঁর অজানা। ঠাকুরদার খাতাটা ওঁনার বাবা সিন্দুকজাত করে রেখেছিলেন, বর্তমানে চাবিটা আর পাওয়া যাচ্ছে না।ঐ কৌলীন্য বজায় রেখে ঠাকুরদা বহু বঙ্গ-নারীকে অনূঢ়া অবস্থা থেকে উদ্ধার করে এই সব সম্পত্তি করেছেন।স্থাবর,অস্থাবর সম্পত্তি র যা পরিমাণ তাতে তাঁর চাকরি করার দরকারই হয় না। কিন্তু তিনি পিতাকে কথা দিয়েছেন স্বোপার্জনের উপর গুরুত্ব দেবেন,উপযুক্ত হ’লে তবেই যজমানি,পারত্রিক ক্রিয়া-কল্যাণে নিজেকে জড়াবেন।উনি ন্যায়তীর্থ, সুতরাং ঐ সব বৃ‌ত্তি-গ্রহণ করতে তাঁর বাধা নেই।পিতা কর্মের উপর গুরুত্ব দিতে উপদেশ দিয়েছেন,বংশ-গরিমা যেন গৌণ হয়,কারণ কুলীনের ঘরে কুলজী,বংশ-তত্ত্ব বড় গোলমেলে।শরৎ-চাটুজ্জ্যে মশাই’র ‘বামুনের মেয়ে’র গল্পের প্রভাবই পন্ডিত মশাই’র পিতার মনে কুলীনের কৌলীন্য কে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।কুলীন-বংশ গরিমার প্রতি বিরাগী ছিলেন। তিনি প্রায়ই
বলতেন’জন্ম হউক যথা তথা,কর্ম হউক ভালো’।কর্মই মানুষের পরিচয়,জন্ম মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। মানুষের পরিচয় তার কর্মে,তার আচার,ব্যবহারে।তাই তিনি সব সময় পুত্রকে কর্মপথের উপর গুরুত্ব দিতে উপদেশ দিয়েছেন।পন্ডিতমশাইও অক্ষরে অক্ষরে তা এখনও পর্যন্ত পালন করে চলেছেন। তিনি অধ্যয়ন,অধ্যাপনার সাথে পিতার যজমানদের পারত্রিক ক্রিয়া-কল্যাণের মধ্যেই নিজেকে আবদ্ধ রেখেছেন। তাঁর বিবেক সতত জাগ্রত। অঞ্চলের অনেক বামুনই
তো আছে,তবু লোকে তাঁর কাছেই উপদেশ নিতে আসে–যথার্থ ব্রাহ্মনের মতই তিনি নিষ্ঠাবান।
ইদানীং পন্ডিতমশাই’র স্কুল আস্তে একটু বিলম্ব হচ্ছে। ফাইনাল-বেল বেজে চলেছে,তিনি স্কুলে প্রবেশ করছেন।পোষাক,পরিচ্ছদ ও পরিপাটি থাকে না।শিখার বাঁধনটা ও আলগা হওয়ায় পিছনের চুলগুলো অবিন্যস্ত দেখায়।
গতা স্ত্রী-রমনীর কাজগুলো এখন তাঁর ঘাড়ে পড়েছে।ভোর হতে না হতেই গোয়ালের দুধেল গরুটা হাম্বা, হাম্বা রব তুলে দেয়। সুতরাং,ভোরে উঠেই তিনি গরুটাকে গোয়াল থেকে বের করে
সামনের খোলা জায়গায় একটা গোঁজে বেঁধে দেন।বেলায় কাজের লোক আসে, গোয়াল পরিস্কার করে।গোয়ালা দুধ দুহে যায়।সকালে চা তৈরি করে ঘুম থেকে
ছেলে, মেয়ে কে তোলেন। নিজে চা খেয়ে কাছেই বাজার থেকে আনাজপাতি কিনতে বের হয়ে যান।
এ অঞ্চলে বাইরের কাজের লোক পাওয়া গেলেও রান্নার লোক পাওয়া ভার।তাই তাঁকে স্ব-হস্তেই রান্না ক’রতে হয়।রমনী মেয়েকে কখনও রান্না-ঘর মাড়াতে দেয় নি। তাছাড়া শতাক্ষী এবার ফাইনাল পরী ক্ষা দিচ্ছে,তাই তিনি ওকে বিরক্ত করেন না।আর পুত্রের সংগে এবিষয়ে কথা বলার অর্থ, সময়ের অপচয়। রমনীকে বাবা-ই পছন্দ করে এনেছিলেন। রমনীও নিজগুণে সংসারকে রমনীয় করে তুলেছিলো।এখন সব অগোছালো। রান্না চাপিয়ে তিনি যখন ঘরের অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাঁর মনে হয় রমনী যেন বলছে ‘বুঝেছ এর নাম সং সার; তুমি পুঁথি নিয়ে থাকতে,এখন দেখ,আমায় তাহলে কী হ্যাপাই না পোহাতে হতো’!
রান্না শেষ করে, সামনের পুকুরে দুটো ডুব দিয়ে খেয়ে-দেয়ে,ছেলে-মেয়েদের খাবার টেবিলের উপরে রেখে যথা-সম্ভব
তাড়াতাড়ি তে তৈরী হ’য়ে তিনি স্কুলের পথে পা বাড়ান। মেয়ের পরীক্ষা সামনে,তাই সে বাড়িতে থাকে–পড়াশোনা করে। কাজের লোক বেলায় এসে বাইরের সব কাজ করে দিয়ে যায়। ছেলেটাকে ঠিক মনের মতো তৈরী করতে পারলেন না। স্কুলের সহ-কর্মীরা তাঁর মনের কথা বুঝতে পারেন, সান্ত্বনা দেন।আর কয়েকটা দিন, মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলেই ছেলের বিয়ের তোড়-জোড়; আবার সব ঠিক হ’য়ে যাবে।শতাক্ষীর বিয়ের বয়স হয়ে গেছে, কৌলীন্য ব্যবস্থা বজায় থাকলে,কবে কন্যাদায় থেকে তাঁকে মুক্ত হ’তে হোত! জীবনের এই পরিস্থিতি সাময়িক। সহকর্মীরা বলেন’আপনি ধার্মিক লোক, বুদ্ধিমান, আপনাকে উপদেশ দেওয়া ধৃষ্টতা’।
দেখতে দেখতে আরও তিনটে মাস কেটে গেল।শতাক্ষীর পরীক্ষা শেষ হয়েছে। পাত্র দেখা হচ্ছে। মেয়ের মাসী একটা উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান এনেছে।পালটি ঘর। বারান্দায় রমনীর ফটোর দিকে চাইলে মনে হয় রমনী যেন কিছু বলতে চাইছে।মেয়ে শতাক্ষী পরের ঘরে চলে যাবে।বলছে ‘দুঃখ ক’রোনা। মেয়েরা তো বাপের বাড়িতে বড় হবার জন্যই আসে’।
কয়েকদিনের মধ্যেই শতাক্ষীর বিয়ের হয়ে গেল। বাড়ি টা বড় খাঁ খাঁ করছে–মেয়েটা ছিল,সেও নেই। ছেলেতো বাড়িতে থাকেই না,ব’ললেই চলে। শোবার ঘরে তাঁর ও রমনীর বিয়ের সময়কালের ছবি আছে।
ওগুলো র দিকে তাকালে তিনি বুঝতেই পারেন না,কাদের ছবি, সময়ের কী কারসাজি! বারান্দায় টাঙানো ছবিটা জ্বলজ্বল করছে। মারা যাবার কয়েকদিন আগে কী যেন ,কী মনে ক’রে শহরে গিয়ে ফটোটা তুলে আসে। পরে বাঁধা নো হয়েছে।ঘরের মধ্যে কাজ করলে মনে হয় যেন রমনী ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে সব দেখছে।মুখে মৃদু হাসির ছোঁয়া-সব যেন লক্ষ্য রাখছে। রমনী র কথা চিন্তা করতে করতে তিনি অন্যমনস্ক হ’য়ে পড়েন।না, এবার ছেলেটাকে যজমানি করার পদ্ধতি গুলো ও শিখিয়ে দিতে হবে। হাজার হোক্ কুলীন ব্রাহ্মণের ছেলে। আবার বাবার কথাটা মনে পড়ে যায়,উপযুক্ত না হ’লে সে কখনও ব্রাহ্মন হ’তে পারে না বড় জোর ‘বামুন’ হ’তে পারে;তাও শিখতে হবে,পুজো-আচ্ছাদি;সংযম প্রথম প্রয়োজন। পুত্রের জন্যও পাত্রী দেখা হচ্ছে। সহ-কর্মীরা ও এবিষয়ে তৎপর হয়েছেন।পুত্র জয়দেবের বিয়ে হ’য়ে গেলে তিনি রাঁধা ভাত পাবেন। বাড়িটাও এত শূন্য বলে বোধ হবে না;শেষ জীবনে বাড়া ভাত খেয়ে অবসর নেওয়ার শান্তির আস্বাদনে তাঁর মন আনন্দে প্রফুল্ল হ’য়ে ওঠে।
রাতে শুতে যাবার আগে বারান্দায় রমনীর ছবিটা দেখে শোবার ঘরে রান। খাওয়া-দাওয়া কোন রকমে হয়, বাড়ির সব কিছু অগোছালো।আর,খাওয়া-দাওয়াই কী! শুধু ভাতে ভাত–এ অবস্থার কবে যে নিষ্পত্তি হবে! যাক বৌমা এলে ঘর আবার পূর্ণ হ’য়ে উঠবে। রমনী র ছবিটা খুবই জীবন্ত মনে হয়,সে যেন সব দেখছে। তিনি পন্ডিত মানুষ, আত্মা অবিনশ্বর, ঘুমের মধ্যেও তিনি রমনীর স্পর্শ
অনুভব করেন।
ছেলে জয়দেব যজমানিটা বেশ তাড়াতাড়ি রপ্ত ক’রে ফেলেছে,পুজো-আচ্ছাদিও এখন মন দিয়ে ক’রছে।সবই অভ্যাসের ব্যাপার।অভ্যস্ত জীবন যাত্রার একটু বিচ্যুতিতেই সব যেন এলোমেলো হ’য়ে রায়। বহিঃ প্রকৃতির মধ্যেই দেখা যাক্ না কেন,ঝড়ের সময় কেমন সব বিপর্যস্ত হয়ে।তারপর কালের গতিতে আবার স্বাভাবিক। জয়দেবের বৌ এলে সংসারের হাল ধরবে—সব ঠিক হয়ে যাবে,এই চিন্তা করতে করতে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।
জোর কদমে পাত্রী খোঁজা চলছে। রমনী থাকলে এ ব্যাপারে সেই অগ্রণী হোত।পাত্রী পছন্দ হয় তো ঘর পছন্দ হয় না,ঘর পছন্দ হয় তো পাত্রী মনোমত হয় না।যাই হোক্ জয়দেবের মামা এক পাত্রীর সন্ধান এনেছেন। মামাও ভাগ্নে পাত্রীর বাড়িতে গিয়ে পাত্রী পছন্দ ও করে এসেছে। মেয়েটি সুলক্ষণা,
পালটি ঘরও বটে। তবে আর দেরী করা ঠিক হবে না ভেবে তিনি মনস্থির করেছেন, শীঘ্রই গিয়ে পাকা কথা-বার্তা বলে আসবেন।
একদিন শুভক্ষণ দেখে তিনি পোষাক-পরিচ্ছেদে ছাতা নিয়ে বেরোবার সময় দেখেন বারান্দায় রমনীর ছবিটা যেন ম্লান দেখাচ্ছে।
ছেলের বৌ আসবে,পাকা কথা বলতে যাচ্ছেন,রমনীর মুখে তো হাসি হাসি ভাব থাকা উচিত। নাঃ!
ফিরে এসে ছবিটা পরিস্কার করবেন ভেবে দুর্গা, দুর্গা বলে ছাতা হাতে রওনা দিলেন।পথ কয়েক মাইল দূর।পুত্র জয়দেব বাড়িতে ই আছে। পুত্রের মধ্যেও
তিনি পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন।তাঁর আস্তে দেরি হবে ব’লে তিনি পথে নামলেন।
পন্ডিতমশাই,স্কুল থেকে সাতদিনের ছুটি নিয়েছেন। পরের সপ্তাহের প্রথমেই নাপিতকে সংগে নিয়ে একটু সেজেগুজে তিনি সকাল বেলাতেই বেরিয়ে গেলেন।
লোকে ভাবলো যে বিয়ের লগনসা চলছে,হয়তো পন্ডিত কোন বিয়ে দিতে চলেছেন। পরেরদিন——-সাড়ে দশটা নাগাদ পন্ডিতমশাই পুত্রের মনোনীত পাত্রীকে ঘরনী করে নিয়ে হাজির।’কুলীনের রক্ত তো তাই আর একবার দার গ্রহণ করলাম’ পন্ডিত সহাস্যে বলে উঠলেন————————।এ খবর রাষ্ট্র হ’তে দেরী হয় না।
কন্যা,শতাক্ষী শরমে আর পৈতৃক ভিটেতে পা রাখে না।পুত্র জয়দেব লজ্জায় বিবাগী হয়েছে। রমনী র ছবিগুলো বারান্দা থেকে অদৃশ্য অর্থাৎ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।পন্ডিত রাঁধা ভাত পাচ্ছেন।বাড়া ভাতে তাঁর চেহারায় চাকচিক্য দেখা দিয়েছে। বিকালবেলায় বাইরের রোয়াকে মৌজ ক’রে হুকোতে তামাকু সেবন করেন। শুধু চাপাস্বরে পন্ডিতের মতিভ্রষ্টতা এখানে-ওখানে শুনতে পাওয়া যায়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *