• Uncategorized
  • 0

গল্পে পরেশ নাথ কোনার

আতঙ্ক

শ্রী ভূমি আবাসনে থাকে শুভ। ডাক্তার শুভব্রত রায়।ডাঃ শুভব্রত স্থানীয় হাসপাতালে কর্মরত। শ্রী ভূমি আবাসনে কারো কিছু হলে তারা ডাঃ রায়ের কাছে ছুটে যায়।ডাঃ রায় তাদের কাছ থেকে কোন ফিস্ নেয় না। তাছাড়া বাড়িতে যতক্ষণ থাকে পাড়ার লোকের জন্য অবারিত দ্বার। মায়ের আদেশে গরীবদের কাছে কোন ফিজ নেয় না।’ডাক্তারের চেম্বার’ বলতে যা বোঝায় তা নয় ,বাড়িতে থাকলে দেখে দেয়।সে কারণে পাড়ায় ডাক্তার রায়ের একটা ভালো ইমেজ আছে।ঐ আবাসনে ই থাকে ভাস্কর তফাদার। রাজনীতি র সাথে জড়িত।সময়ে অসময়ে রোগীর আনাগোনা তফাদার বাবুর পছন্দ নয়। আবাসনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাস্করের সাথে ডাঃ রায়ের একবার উতপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিল। সেই থেকে দু জনেই দু জনকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলে। আবাসনের যে কোনো অনুষ্ঠানে ডাঃ রায়কে সভাপতি করা হয়।এটি তফাদার বাবুর মনঃপুত না হলেও মেনে নিতে হয়। রাজনীতি করা লোকদের এই একটি দোষ তারা সর্বত্র আসন চায়।
ডাঃ রায়ের বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দু বছরের একটি কন্যা আছে। হাসপাতাল, ডিউটি, রোগী দেখা,মা, স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে গতানুগতিক জীবন কেটে যাচ্ছিল ডাঃ রায়ের।কোভিড-১৯ এসে সারা বিশ্ব, সারা দেশের চরিত্র যেমন বদলে দিয়েছে তেমনি বদলে দিয়েছে মানুষের জীবন,বিশেষ করে চিকিৎসক ও চিকিৎসার সাথে যারা যুক্ত সেই সব মানুষদের।গুরু দায়িত্ব এসে পড়েছে তাদের উপর।
ডাঃ রায়ের হাসপাতালটি ও কোভিড চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে। পরিকাঠামো গত সামান্য কিছু অসুবিধা থাকলে ও ডাক্তারের পবিত্র কর্তব্য আর ভয়ানক অসুখে ভোগা অসহায় মানুষ গুলোর কথা চিন্তা করে ডা: রায় এবং তার সহকর্মী ডাক্তার বন্ধুরা, নার্স, সহযোগী সমস্ত কর্মী যারা আছে তারা সবাই তাদের জীবন পণ করে রোগীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যে সমস্ত নির্দেশাবলী দিচ্ছে এবং কোভিড পেশেন্ট মারা গেলে তার মৃতদেহ কী ভাবে সৎকার করা হচ্ছে এই সব খবর এবং ছবি ,ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপে দেখে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে।যদি তার মৃত্যু হয়, তার মৃতদেহের কী পরিণতি হতে পারে এই সব কথা চিন্তা করে বেশিরভাগ রোগীর “নার্ভাস ব্রেকডাউন”হয়ে যাচ্ছে।কোভিডের কোন ওষুধ নেই — এই চিন্তাতেই রোগী আরো বেশী দুর্বল হয়ে পড়েছে। সর্বাগ্রে এদের প্রয়োজন কাউন্সেলিং।কোভিড মানেই মৃত্যু নয় —– এই সত্যটা মানুষকে বোঝাতে হবে। এই গুরু দায়িত্ব এসে পড়েছে ডাক্তার, নার্স দের উপর।
একটানা চিকিৎসা করতে করতে ডাঃ রায়ের মনে ও ক্লান্তি আসে।আজ বাইশটা দিন বাড়ির সংগে কোন সম্পর্ক নেই। স্ত্রী পরমার উপর সংসারের সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে হাসপাতালে ই দিন যাপন। বৃদ্ধা মা ও ছোট্ট মেয়েটির ফুট কলাই এর মতো বারবার মনে পড়ে।
আজ বাইশ দিন পর ডাক্তার শুভ ব্রত রায় বাড়ি ফিরবে কথাটা তাদের শ্রী ভূমি আবাসনে চাউর হয়ে যায়।মা, ও স্ত্রীর মুখে একটা স্বস্তির হাসি। আবাসনের আবাসিক রা শঙখ ধ্বনি দিয়ে ফুল ছিটিয়ে তাকে বরণ করে নেবার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু পাড়ার কিছু ছেলে ,বউ ব্যাপারটিকে ভালো ভাবে নেয় নি। ডাক্তারের কাছ থেকে রোগটি পাড়ায় ছড়িয়ে পড়তে পারে এই আতঙ্কে তারা একজোট হয়। ভাস্করের কানে কথাটা এসেছিল কিন্তু সে সে ভাবে এটির গুরুত্ব দেয় নি। তাছাড়া ডাক্তার কে
একটু বে ইজ্জত করুক মনে মনে এটাই চাইছিল।
ডাক্তার গাড়ি থেকে নামতেই আবাসনের মেয়ে বউরা শঙ্খ ধ্বনি করতেই আশপাশ থেকে মানুষজন জড়ো হয়ে ডাক্তারকে ঢুকতে বাধা দেয়। এই নিয়ে আবাসনের আবাসিক দের সাথে তাদের তর্কাতর্কি বেঁধে যায়। ইতিমধ্যে পুলিশ আসে ।আসে স্থানীয় কাউন্সিলর।তারা সবাই মিলে বোঝালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
যাদের জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্ত্রী,মা, কন্যাকে ছেড়ে এত গুলো দিন কাটিয়ে এলো তাদের এই আচরণ ডাঃ রায়কে ভারাক্রান্ত করলেও মানুষের অসহায়তা র কথা বিবেচনা করে,কন্যার হাসি মাখা মুখখানি কে দেখে সব ভুলে ডাক্তার শুভ ব্রত রায় হাসতে হাসতে আবাসনে প্রবেশ করল।।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।