• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ১২০)

পর্ব – ১২০

বাসন্তীবালা তাঁর স্বামীর কাছে এসে বললেন, ছোটখোকা যে মাছ না হলে ভাত মুখে তোলে না। অথচ সবাই বলছে ইন্দিরা গান্ধী মরেছে বলে বাইরে না বেরোনো ভাল। তোমার জামাই তো প‌ইপ‌ই করে বলে রেখেছে শ‍্যামলী যেন কিছুতেই বাইরে না যায়। তা তোমার মেয়ে শুনলে হয়! যা একটা মেয়েকে গর্ভে ধরেছিলাম!
শশাঙ্ক পাল বললেন, আমি জপ করছি, বিরক্ত কোরো না।
বাসন্তীবালা রাগ দেখিয়ে বললেন, আমি জানি, আমার কোনো কথাটাই আর তোমার পছন্দসই হয় না। সেই কবে বলেছিলাম চেনাজানা ঘর থেকে সম্বন্ধ এসেছে। নিজেদের বাড়ি গাড়ি, ব‍্যাঙ্কে অঢেল টাকা, জোর করে লাগিয়ে দাও বিয়ে। তুমি শুনেছিলে আমার কথা?
শশাঙ্ক পাল বললেন, নিজের মেয়েকে তুমি চেন না? সেদিন থানায় তো আমায় পাঠালে। ওসি যথেষ্ট ভদ্রলোক। কি বলল জানো?
বাসন্তীবালা বললেন, তাকেও নিশ্চয়ই ছোটবড় কথা বলে এসেছে সে?
শশাঙ্ক পাল হেসে বললেন, না না, দেখলাম, ওসির খুব ভালো লেগেছে শ‍্যামলিমাকে।
বাসন্তীবালা বললেন, তা ভাল লাগবে না কেন, মেয়ে তো আমার দেখতে শুনতে খারাপ নয়। গায়ের রঙটা তনুর মতো না হলেও উজ্জ্বল শ‍্যামবর্ণ বলা যায়।
শশাঙ্ক বললেন, আরে না না, দেখতে দিয়ে কথা হচ্ছে না। সে একটা এতবড় থানার ইনচার্জ। একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখে ওসব ভাববে কেন?
বাসন্তীবালা বললেন, তুমি আর হাসিও না বাপু। ভরযুবতী মেয়েদের দেখলে মুনি ঋষিদের পর্যন্ত মাথা ঘুরে যায় , তো একটা ওসি কোন্ ছার!
শশাঙ্ক পাল স্ত্রীকে বললেন, না গো, এ লোকটা অন‍্যরকম। বেশ ভাল।
বাসন্তীবালা বললেন, হুঁ, তুমি একবার দেখেই সব বুঝে গেলে। কি ভাবো আমাকে? ঘরে থাকি বলে দিন দুনিয়ার কোনো খবর রাখি না, তাই না?
শশাঙ্ক পাল বললেন, হ‍্যাঁ গো, দিন দুনিয়ার খবর রাখতে গিয়ে তুমি পেটের ছেলে দুটো উচ্ছন্নে গেছে, সে খবরটা পাও নি!
বাসন্তীবালা বললেন, হ‍্যাঁ, বিঁধে বিঁধে কথা তো বলবেই। কথায় বলে না, হাতি যখন পাঁকে পড়ে, তখন চামচিকেতেও লাথি মেরে যায়।
 শশাঙ্ক পাল বুকপকেট থেকে পঞ্চাশটা টাকা বের করে দিয়ে বললেন, আর এখন কিছু দিতে পারব না। হালচাল খারাপ। বুঝে শুনে চলো। আর শোনো, আমার জন্য ফল মোটেও আনাবে না। আমি খাব না।
বাসন্তীবালা বললেন, কেন, খাবেনা কেন শুনি! তোমাকে ডাক্তার বলেছে না, সময়ের ফল রোজ একটু করে খেতে হবে। আর টেনশন করা চলবে না।
শশাঙ্ক পাল বললেন, তুমি এবার আমাকে রেহাই দেবে?
 শ‍্যামলী বাবার ঘরে এসে বলল, বাবা, আমি একটু বেরোচ্ছি। দেরি করব না।
শশাঙ্ক পাল বললেন, বোস্, তোর সঙ্গে কথা আছে।
বাসন্তীবালা বললেন, হ‍্যাঁ রে, কাল সারারাত যে দুচোখের পাতা এক করিস্ নি, সে খেয়াল আছে? আজ মোটে বের হবি না। অরুণ বার বার করে বলে রেখেছে।
শ‍্যামলী বলল, মা, অরুণদা রাতে ঘুমিয়েছে কি না, জানতে চাও নি? এমন তো হতেও পারে, আমার জন্য উদ্বেগ করে তিনি রাতের ঘুম নষ্ট করছেন!
বাসন্তীবালা বললেন, সে কি রে শ‍্যামলিমা? তুই কাল দেরি করছিলি বলে সে কত টেনশন করছিল, তা যদি তুই দেখতিস!
মা, অরুণদাকে বুঝতে হবে, শ‍্যামলী একটা ন‍্যাতাজোবড়া পুতুল নয়। নিজের দায়িত্ব নেবার হিম্মৎ তার আছে। সে অনেক ব‍ড় বড় ঝড় সামলেছে। দরকার ছিল বলেই সে কাল গিয়েছে বন্ধুর খোঁজ নিতে।
শশাঙ্ক বাসন্তীবালাকে ইঙ্গিতে চুপ করতে বলে শ‍্যামলীকে জিজ্ঞাসা করলেন, হ‍্যাঁ রে, উকিল বাবুর ফি তো দেওয়া হয় নি। কে বেল করিয়ে দিল, জানি না পর্যন্ত। টাকাটা মিটিয়ে না দিয়ে শান্তি পাচ্ছি না।
শ‍্যামলী বলল, আমাকে কি করতে বলছ, বলো।
শশাঙ্ক পাল বললেন, গুরুদেবের আশ্রম থেকে কোনো ব‍্যবস্থা করে নি, এটা ঠিক। ন‌ইলে সেদিন রাতেই বিল পাঠাতো। হিসেব করে দেখলাম, ব‍্যাঙ্কে বেশি টাকা নেই। উকিল অনেক টাকা চেয়ে বসলে বিপদে পড়ে যাব।
শ‍্যামলী বলল, টাকা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা কোরো না।
শশাঙ্ক পাল খরখরে গলায় বললেন, তুই কি আমায় বাচ্চা ছেলে ভেবে স্তোক দিচ্ছিস? টাকা আসবে কোথা থেকে শুনি? ইন্দিরা গান্ধী মরে গিয়ে একটা বিচ্ছিরি অবস্থা হল। কাজ কারবার সব লাটে উঠে গেল।
শ‍্যামলী বলল, বাবা, তুমি চিন্তা কোরো না। আমি বাজারে যাচ্ছি। ফল এনে দেব। তুমি খাবে।
বাসন্তীবালা বললেন, তাহলে একটু মাছ আর মিষ্টিও যদি আনিস্, জানিস তো মাছ না হলে অতনু ভাত খেতে পারে না।
শশাঙ্ক পাল গর্জে উঠে বললেন, অ্যাই, তুই বাড়ি থেকে এক পা বাইরে বের হবি না। বের হবি তো ঠ‍্যাং খোঁড়া করে রেখে দেব। মনে নেই, ওরা জুয়া খেলতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। আবার শোনানো হচ্ছে, মাছ ছাড়া ভাত খেতে পারে না! দুটো বাঁদরকে মাথায় তুলে আমার লাইফটা হেল করে দিল। খবরদার তুই মাছ আনতে যাবি না।
বাসন্তীবালা চোখে আঁচল চাপা দিলেন। বললেন, পেটে যাকে ধরতে হয়, সেই শুধু বোঝে ছেলেমেয়ে কি জিনিস!
শ‍্যামলী বলল, মা , পেটে ধরেছি এসব বলে সেন্টিমেন্টাল হোয়ো না। বাবার কথাটা বোঝার চেষ্টা করো। আজ ওদের হাতে টাকা দিতে তুমি পর্যন্ত ভরসা পাও না। কেননা তুমি জানো টাকা হাতে পেলেই জুয়ার আড্ডায় ভিড়ে যেতে পারে।
বাসন্তীবালা বললেন, ঠিক আছে, ঠিক আছে, ওরা খেতে বসলে আখার ছাই বেড়ে দেবো। বলবো, এই ছাই পাঁশ গেল্। না যদি খাস্ তো আঁশ বঁটি দিয়ে মাথাটা নামিয়ে দেব।
শ‍্যামলী বলল, মা বাগানের ওদিকটায় কটা লাউ হয়েছে। আজ আমি বড়ি দিয়ে লাউ রাঁধব। দেখো সবাই চেয়ে চেয়ে খাবে।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।