• Uncategorized
  • 0

ছোটোগল্পে যজ্ঞেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়

সমাপতন

এই অসময়ে যখন সারা পৃথিবী ঘরে থাকার কথা বলছে, ঠিক তখনই মাতঙ্গ কে বের হতে হলো ঘর থেকে বহু দূরের কর্মক্ষেত্রে। তার মতো অনেককেই বের হতে হয়েছে, কারন তারা না গেলে যে খাদ্যদ্রব্যের চেনটা কোথাও না কোথাও ভেঙে পড়বে আর তার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনাহারে কাটাতে হবে এই মহামারীতে। তাই নিজের জীবনকে বিপন্ন করেও একটা মানবিক আহ্বানে ছুটে গেছে, তারও কিছুটা ভূমিকা থাকুক এই অসময়কে কাটিয়ে উঠতে, অন্তত প্রান্তিক মানুষরা তাদের খাবারটা যেন পায়।
কিন্তু এই সঙ্কটকালে কে বা তাদের থাকতে দেবে, কিন্তু মজার ব্যাপার থাকার জায়গা ঠিক একটা জোগাড় হয়ে গেলো এই অসময়ে। তাদের মহিলা সহকর্মীরাও একই ভাবে অন্য জায়গায় রাত্রিযাপন করছে।
মাতঙ্গ এই সময়ে যখন বাড়িতে প্রথম দিকে, তখন মনে ভাবনা আসতো তার মফস্বল শহরে কি একজনও আক্রান্ত হয়নি? ফলে সাবধানতা অবলম্বন করেছে যতোটা পেরেছে বিধি মেনে, বাড়ির লোকদেরও সাবধান করেছে কারণ তার বয়স্ক বাবা মা ও যে এরকম পরিস্থিতি আগে দেখেনি। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বড় জায়গায় এসে তার মফস্বল শহরকে দূর থেকে কেমন একটা রক্ষাকবচ পড়িয়ে দিলো নিজে থেকেই। কারন তার কাজের জায়গায় অনেক কিছুই ঘটতে পারে, সে সতর্ক থাকলেও তার সাথে কাজ করা নানা ধরনের লোকজন সতর্ক না হলে সবটাই যে বৃথা, অতর্কিতে বাসা বাধবে এই মারন রোগ। সাথের মহিলা সহকর্মীদের ব্যাপারটা আরো কঠিন যতই আমরা পুরুষ মহিলা সমান এর স্লোগান তুলি, কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি অসুবিধা তাদের রয়েই যায়। তাদের নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে স্বামী সন্তান যেখানে গৃহবন্দী সেখানে স্ত্রীকে ছুটতে হয়েছে এমনকি কর্মস্থলে রাত্রিবাস করতে হচ্ছে।
কাজের ফাঁকেই উঠে আসছে নানা কথা, অনেকটা নিরুপায় হয়েই বলছে সবাই। এক মহিলা সহকর্মী বলছে, তার হয়তো শ্বশুর বাড়িতে আলোচনা চলছে, দেখো বৌমা কেমন ছেলেকে রেখে ধেই ধেই করে কাজ করতে চলে গেলো। এর কোনো জবাব নেই মাতঙ্গ বা অন্য কারো কাছে। সেও যে নানা প্রশ্ন নিয়ে বসে আছে যার উত্তর কারো কাছে নেই। দিনরাত এক অজানা আতঙ্কে পার হচ্ছে। কাজের মধ্যে থাকতে থাকতে ভয়টাও কেমন গা সওয়া হয়ে পড়েছে। নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় উঠে আসছে, যে আমার মধ্যে ভাইরাস প্রবেশ করলেও আমার যা ইমিউনিটি কিচ্ছুটি করতে পারবে না, এ যেন নিজেকেই নিজের সাহস জোগানো, সাহসের প্রতিযোগিতা চলছে নিজেদের মধ্যে, ভিতরে ভিতরে শোনা যাচ্ছে রাখালের পালে বাঘ পড়ার গল্প।
দেখতে দেখতে কাজ একটু হালকা হয়ে এলো, কিছুদিনের জন্য তাদের দিনরাতের মেহনত সার্থক হলো, হয়তো কয়েক দিনের জন্য বাড়ি ফেরা যাবে। কিন্তু এ কি, সবার মনের মধ্যে একটা ধন্দ কাজ করছে, মাতঙ্গও এর বাইরে নয়। মাতঙ্গরা দিনের পর দিন যে ভাবে কাজ করে গেছে, তাতে তারা সম্পুর্ন সুস্থ তো? প্রতিনিয়ত এ প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে তাদের বিবেক। এর ফল হয়তো ভোগ করতে হবে বাড়ি গেলে তাদের পরিবারকে। বাড়িতে অনেকেরই বয়স্ক মা বাবা ছোট সন্তান।
হঠাৎ করে এতোদিন পর মাতঙ্গ তার নামের সার্থকতা খুজে পেলো, স্কুলে এই নিয়ে তাকে কম কথা শুনতে হয়নি। মাতঙ্গ কথার একটা অর্থ যে হাতি বা হস্তি। সে অনেকবার পড়েছে বা শুনেছে যে হাতিদের সমাজে কোন হাতি দলছুট হয়ে মনুষ্য সমাজে চলে আসার পর নিজের সমাজে ফিরে গেলে তার সমাজ আর তাকে গ্রহণ করে না, বহিষ্কার করে তাকে। আজ মাতঙ্গও কিছুটা ভাগ্যের পরিহাসে সেই দলছুট হাতির সঙ্গী।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।