শিকড়ের সন্ধানেতে আজ “হাম্পি” – লিখেছেন প্রাপ্তি সেনগুপ্ত

১. এমন বহু জায়গা আছে,যেখানে ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখা সম্ভব। আজ এমন একটা জায়গার সাথে আলাপ হোক। কর্ণাটক রাজ্যের উত্তরে তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে আজকের ব্যাঙ্গালোরু থেকে ৩৪৩ কি.মি এবং বেলারী থেকে ৭৪ কি.মি. দূরে অবস্থিত একটি গ্রাম হাম্পি।
২. UNESCO-এর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ১৯৮৬ সাল থেকে এর গৌরবময় উপস্থিতি।
৩. দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজধানী হাম্পি, তার ধ্বংসাবশেষেও তৎকালীন বিজয়নগর সাম্রাজ্যের উৎকর্ষতার সাক্ষ্য আজও বহন করে।
৪. ১৫৬৫ সালের তালিকোটার যুদ্ধে এই শহরের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং বাহমনি রাজ্যের সুলতানের দ্বারা এই নগরটি ধ্বংস হয়।
৫. যদিও বিজয়নগর সাম্রাজ্যের বহু আগে থেকেই হাম্পির উল্লেখ পুরাণে পাওয়া যায়। পুরাণ মতে,দক্ষ যজ্ঞে সতীর দেহত্যাগের পর তিনি ব্রহ্মা কন্যা পম্পা রূপে জন্মগ্রহণ করেন এবং পুনরায় ঘোর তপস্যার পর শিবকে পতিরূপে লাভ করেন।শিব-পম্পার বিবাহস্থলই পম্পাক্ষেত্র। সংস্কৃত পম্পে কন্নড়ে পরিবর্তিত হয়ে হয় হাম্পে। যা বর্তমানে হাম্পি নামে পরিচিত।
৬. আবার রামায়ণের ঋষ্যমুখ, হেমকুট, গন্ধমাদন প্রভৃতি পাহাড় ঘেরা বালি, সুগ্রীবের রাজধানী বিখ্যাত কিষ্কিন্ধাই হল মধ্যযুগীয় বিজয়নগরের রাজধানী হাম্পি।
৭. হাম্পির স্থাপত্যের প্রায় সবটাই গ্রানাইট পাথরের মনোলিথিক স্ট্রাকচার।
৮. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের তুলুবা বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা কৃষ্ণদেব রায়ের সময় হাম্পি তার উৎকর্ষতার শিখরে পৌঁছায়।নিকোলো-দ্য-কন্টি, আব্দুর রজ্জাক, নিকিতিন, ন্যুনেজ প্রমুখ তৎকালীন বিদেশি পর্যটকদের লেখায় বিজয়নগর সাম্রাজ্য ও তার রাজধানীর সমৃদ্ধির উল্লেখ পাওয়া যায়।
৯. পররর্তীকালে রবার্ট সিওয়েলের Forgotten Empire: Vijaynagar বইতে হাম্পির বিস্তৃত বর্ণনা পাওয়া যায়। ১৮০০ সালে ভারতের প্রথম সার্ভেয়ার জেনারেল কলিম ম্যাকেঞ্জি বিশ্বের সাথে হাম্পির পরিচয় করান।
১০. হাম্পিতে ৫০০-র বেশি ঐতিহাসিক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যার মধ্যে মুখ্য আর্কষণ হল- বিরূপাক্ষ মন্দির, বিঠ্ঠল মন্দির কমপ্লেক্স, উগ্র নরসিংহ, বরাহ মন্দির,হাতিশালা, দরবার হল, বিজয় ভিত্তালা মন্দির, বিষ্ণু মন্দির, কমল মহল, কৃত্রিম জলাশয়, সুগ্রীব মন্দির প্রভৃতি।