• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সীমন্তি চ্যাটার্জি (পর্ব – ৫)

স্রোতের কথা

পর্ব ৫

আমার স্কুলের নাম ফার্নহ্যাম স্কুল আ্যান্ড কলেজ।লন্ডনের সব চেয়ে প্রেস্টিজিয়াস পাঁচটা স্কুলের মধ্যে একটা।..ভূমিসূতা বসুমল্লিকের পরিচয় ছাড়া শুধুমাত্র মেরিটের জোরে কতটা আমি এই স্কুলে আ্যাডমিশন্ পেতাম তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। দিম্মা অবশ্য চাইতো আমি দিম্মার কাছে থেকেই পড়াশোনা করি।আর সেটা আমার জন্য ও খুব লোভনীয় ছিল। কিন্তু সেই রাত..যে রাতের পর আমি সময়ের আগেই বড়ো হয়ে গেছিলাম.. আমি নিজেই চেয়েছিলাম রেসিডেনসিয়াল কোনো স্কুলে থেকে পড়াশোনা করবো।আর দিম্মাও কেন জানি সেভাবে বাঁধা দেয়নি, হয়তো চেয়েছিল দিম্মা ছাড়াও আমি পৃথিবীটাকে নিজের মতো করে চিনে নিই। তাই পাঁচ বছর বয়স থেকে এই সফোমোর ইয়ার অর্থাৎ সতেরো বছর পর্যন্ত এই স্কুল ই আমার সেকেন্ড হোম। এই স্কুল ই আমাকে শিখিয়েছে জীবনের বিভিন্ন রং কখনো ধূসর কখনো রঙিন।এখান থেকেই আমি পেয়েছি আনন্দ, কখনো যা দুঃখ হয়ে গেছে, আবার সেই দুঃখ ই দূরে গিয়ে খুশী এনে দিয়েছে।এখান থেকেই পেয়েছি ভালোবাসা….পেয়েছি শৌনক কে..নাঃ শৌনকের কথা এখন মনে আনতে চাই না তাহলে হয়তো আমার আবেগ কে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবো না যা এই মুহূর্তে খুব ই দরকার। কিন্তু ভাবনা তো আসেই, আজ এখন যেমন স্কুলের পার্কিং জোনে গাড়িটা পার্ক করতে করতে মনে হোলো তবে কি আমার আর এই স্কুলের সম্পর্কে এবার একটা বিচ্ছেদ অপেক্ষা করছে??। আমার চিন্তার স্রোতে বাঁধা পড়লো দিম্মার চিৎকারে।….ওয়াও সার্সী দেখ দেখ .. …….. দেখলাম.. এই গাড়ী টা আমার স্কুলের পার্কিঙে কি করছে?এই গাড়ী তো পৃথিবীতে কয়েকটা মাত্রই আছে।। আমি দিম্মার দিকে অর্থবহ দৃষ্টিতে তাকালাম। দিম্মা বললো তোর মাউসি ম্যাডাম কি ব্যাঙ্ক ডাকাতি করছে নাকি আজকাল…এই এই দিম্মা প্লিজ আস্তে ..কেউ শুনলে সর্বনাশ।/… আমাদের প্রিন্সিপাল শেইলা জারভিস্ কে আমরা আড়ালে মাউসি বলে ডাকি ওনার মুখের ফিচার্সের জন্য। দিম্মা টা না সত্যি যা তা।।দিম্মা হাসতে হাসতে বললো আই আই ক্যাপ্টেন, চলো এখন তোমার মাউ….না না শেইলা ম্যামের অফিসের দিকে।প্রিন্সি ম্যামের অফিসের দিকে যেতে যেতে এক অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলাম …যে সব স্টুডেন্ট আমার সামনে পড়ছে তারা হয় অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে নয় তো তাদের আলোচনার বিষয় টা আমি কেন্দ্রিক হয়ে উঠছে অন্ততঃ তাদের বডি ল্যাঙ্গোয়েজ তো তাই বলছে…..আমি কারোর দিকে না তাকিয়ে প্রিন্সি ম্যামের ঘরের সামনে আসতেই বন্ধ দরজার ভিতর দিয়ে প্রনীতা ম্যামের উত্তেজিত গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম।…. আপনারা ভাবতে পারবেন না কিভাবে স্রোতস্বিনী এক মূহুর্তের মধ্যে আমাকে রেসকিউ করলো,না হলে তো আমি….প্রনীতা ম্যামের কথার মধ্যেই দিম্মা দরজায় নক্ করলো। ঘরের কথা সম্পূর্ণ থেমে গেল, প্রিন্সি র গলা শোনা গেল হু জ্ দেয়ার?? আমি উত্তর দিলাম… ইটস্ মি ম্যাম.. স্রোতস্বিনী।কয়েক সেকেন্ড পরে দরজা খুললেন প্রনীতা ম্যাম ই। আমাদের প্রিন্সির কোনো অর্ডার্লি বা সেক্রেটারি নেই।এক হিউম্যানয়েড রোবট আমান্ডা ই ওনার সব কাজকর্ম করে, যাকে উনি মাঝে মাঝেই সুইচ্ অফ করে রেখে দেন। টেকনোলজির মিনিমাম ব্যবহারের রুল ফলো করেন আর কি।।ঘরের মধ্যে ঢুকতেই চোখ টা নিজের বশে আর থাকলো না। তিন জন নতুন আসা মানুষ না কি অতিথির দিকে আটকে গেল। একদম প্রথম চেয়ারটাতে যে বসে আছে, তাকে আমি এটা নিয়ে ষষ্ঠ বার দেখলাম।আজ আর রোব নেই….,এক সমুদ্রনীল টি শার্ট আর গাঢ় রঙের জিন্স..জিন্সের লোগোটার দিকে যে কারোর চোখ যাবেই, এত দামী জিনস্ আমাদের মতো স্টুডেনটদের কাছে যে শুধু আলোচনার বিষয় তাই নয়,স্বপ্নও।এত রূপ কি (হ্যাঁ এই ছেলের ক্ষেত্রে রূপ ছাড়া আর কোনো বিশেষন মাথায় এলো না।) কোনো সাধারণ মানুষের হয়? এখন তার সমুদ্রের মতো নীল চোখ দুটো আমার দিকেই নিবদ্ধ। তার ঠিক পাশের চেয়ারে যিনি বসে আছেন তাঁকে হ্যান্ডসাম বললে কমিয়ে বলা হবে। বয়স মনে হোলো তিরিশ থেকে চল্লিশের মধ্যে।তবে সৌন্দর্য ছাপিয়ে চোখ কেড়ে নেয় তাঁর স্নেহ মাখানো দুটো চোখ আর বন্ধুত্ব পূর্ণ মুখের আশ্বাস মাখানো হাসি।এক লহমার জন্য আমার মনে হলো … আমার যদি এরকম একজন বাবা থাকতো।…ভাবনার মধ্যেই আমার চোখ টা ওনার পাশের চেয়ারে গেল …আর সেখানেই আটকে গেল। আমার ইনস্টিংকট দিয়ে বুঝলাম দিম্মাও ঐ চেয়ারের দিকেই তাকিয়ে আছে।.. এবং এটাও বুঝলাম ইনি না চাইলে কারো সাধ্য নেই তাঁর দিক থেকে চোখ সরাতে পারে। কে ইনি?? রক্ত মাংসে গড়া কোনো মানুষ??না অন্য জগৎ থেকে আসা আধুনিক পোশাক পড়া কোনো ছদ্মবেশী গডেস!!!! পরণে সাদা রঙের টপ ব্লাউজ ,ঐ রঙের ই ব্লেজার, প্রতিটা ইঞ্চি মাপ দিয়ে বানানো ফিগারে একটা হাল্কা পিচি পিঙ্ক কালারের ব্যাক স্লিটেড নী লেনথ স্কার্ট…ঐশ্বরিক কারুকার্য খচিত মুখ আর পিঠ বেয়ে নেমে আসা চুলের ঢল!!!ডিভাইন শব্দটার যদি কোনো চেহারা হয়,তবে সেটা যে এটাই,এ নিয়ে কারোর বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকতে পারে না।ঐ অবয়বের চারপাশে যে একটা লুমিনাস অরা বা জ্যোতি বিচ্ছুরিত হচ্ছে, তার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।….এই ঘোরের মধ্যেই শেইলা ম্যাম কথা বলে উঠলেন।.. ম্যাডাম মিরান্ডা ,…এই হোলো আমাদের স্রোতস্বিনী আর উনি স্রোতস্বিনীর অফিশিয়াল গার্ডিয়ান..ওর গ্র্যানী.. বিখ্যাত সায়েন্টিস্ট ভূমিসূতা বসুমল্লিক।…আর উনি হলেন…..এক স্বর্ন ঘন্টা যেন বেজে উঠলো…এ এক এমন কন্ঠস্বর যে স্বরের রেশ হয়তো সারাজীবন থেকে যায়…. হাই স্রোতস্বিনী…..আমি মিরান্ডা প্রিস্টলি… হাই প্রিস্টেস আ্যান্ড সুপ্রিম ডিন অফ্ দ্য “ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট অফ্ সুপার পাওয়ার এ্যান্ড ম্যাজিকাল এবিলিটি”… ওয়েলকাম টু আওয়ার ফ্যামিলি।…..আমাদের পরিবারে তোমাকে সুস্বাগতম।

ক্রমশ….

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।