…আমার খোলা হাওয়ার কথা কাউকে বলি না। সে পালে লাগল কি না খোঁজ না রেখেই যে পানসি ভাসিয়েছি, তা স্রোতের টানে যাবে জানি অনেক দূর। সেইখানে ফটিক আছে। তোমরা ফটিককে চেন না? আমার নৌকায় চড়ে জল মাপার খেলা ওর। মাপতেই থাকে — আর জল খেলতে খেলতে জোয়ার চলে আসে, ভাঁটা হয়; আমাদের সকাল-বিকেল সব সময় একই রকম।
ওপারে ধান বলেছে। যে চাষীর রাজা, সে এবার আসবে বলেছে। ও ধান সোনার রং। চাষীর রাজার আগুন রঙের সঙ্গে মাথা নেড়ে খেলা করে। আমি আর ফটিক যাবো। তবে এ ছোট নৌকায় রাজা উঠলে হয়। ধান কুড়িয়ে রেখে এসে না হয় তবে আবার উজান পাড়ি দেবো।
শুনেছি, অস্তর নেই এ রাজার। বশীকরণ গান আছে। তাতে পাখি-পশু, এমনকি জলের মাছও রাজার কাছে বাঁধা পড়ে যায়। জলে বান ডাকলে রাজা শান্ত করে দেন। সে বান তখন বুকের মধ্যে এসে আছাড়িপিছাড়ি খায়।
রাজার ভালে ফাগের তিলক, মাথায় পলাশের মুকুট। রাজা হেঁটে গেলে আম্রকুঞ্জ মুকুল ঝরায়, ছায়া দেয় ছাতিম পাতা। রাজা এসে সিংহাসনে বসেন। সঙ্গে সঙ্গে কিচমিচ করা পৃথিবী শান্ত হয়ে আসে। গল্প শোনে।
ছোট ছোট ছেলের গল্প, মেয়ের গল্প। সেই যে একজন ছিল, যে অনেক-অনেক দূর যাবে বলেছিল, কিন্তু তাকে যে রাজার খোঁজ এনে দেবার কেউ ছিল না। সে কথা শুনতে পেয়ে রাজা নিজেই রাতনিশীথে তার কাছে এসেছিলেন। সে তখন ঘুমের দেশে।
আর একজন ছিল। অমল যে তাকে ফুল আনতে বলেছিল। রাত পেরিয়ে গেল বলে রাগ হল কি অমলের? সে তো জানতো না। যদি ঘুমের দেশ থেকে ফিরে তার খোঁজ চায়, সে তাই বলে গেল — “সুধা তোমায় ভোলে নি”
ঢেউ উঠবে, ঢেউ পড়বে — পাড়ি দেওয়ার অনেক দূর। বৈশাখবেলা পার করে পঁচিশ ভোরের পার রাজার বাড়ি পৌঁছে যাবো পানসি নিয়ে। খোলা মাঠ, আলো — নীল আকাশের নীচে,
…সেইখানে আমার ছুটি
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন