• Uncategorized
  • 0

টুকরো গদ্যে দীপ শেখর চক্রবর্তী

সংসার

দীর্ঘ সময় পর কারো সঙ্গে ঘর করতে ইচ্ছে করছে আজকাল।মন্ত্র পড়ে না লোক দেখিয়ে নয়।ফাঁকা ছাদে দাঁড়িয়ে দূরের রান্নাঘরের জানালা দিয়ে লাল রঙের আলো দেখার মতো।মনে হচ্ছে দুপুরবেলা স্টেশনে বসে দুজনে মিলে দেখি ওপর প্রান্তে কিভাবে মাথা নীচু করে হেঁটে যাচ্ছে রোদ।সকালবেলা কাজে বেরোনোর আগে চুপিচুপি দেখে আসি পুরনো ইশকুল টা।মনে হচ্ছে একেকটা সন্ধে অর্থহীন হেঁটে যাই পাশাপাশি গলির পর গলি। নৈঃশব্দ্য একটা মোড়।তারপর আরেকটা অন্ধ বিশ্বাস। বসন্তের রাতে সেই বনের ভেতরে রাজার বাড়ির খোঁজ।মনে হচ্ছে আরেকবার আয়োজন করি। ধার বাকি করে ফিরিয়ে নিয়ে আসি সেই বইগুলো যেগুলো একদিন ছেড়ে চলে গেছিলো আমাকে। জীবন সেই পুরনো বইগুলোই তো বারবার পড়া।বহুদিন পর আশ্চর্য ঘর করার বোধ জেগে থাকছে।গানের মতো প্রাণের ভেতরে সবসময়। চাদরের ওই দিকটা টানটান করে তোলা।বাদ্যযন্ত্র টির হারিয়ে যাওয়া তার টি আবার লাগিয়ে নেওয়া।বহুদিন পর এমন মনে হচ্ছে।জানি না কেন।
এমন ঘর করার কথা ভাবলে মনটা খুব অস্থির হয়।বাড়ির বাইরে গাছেদের দিকে তাকিয়ে থাকি।পাতাগুলো চুপিচুপি ঝরে যায়।বাতাসের গায়ে দোলা লাগায়।একা একা হেঁটে বেড়াই। কাউকে খুঁজি না।লুকিয়ে থাকি বরং। একটা অজানা ভয় লাগে।
তবু বহু বছর পর খুব ঘর করতে ইচ্ছে করছে। সামান্য কে নিয়ে ঘর।একটা পাঞ্জাবি রোদে মেলা।একটা শাড়ির আঁচলে ঘাম মুছে নেওয়া।রাতের বেলা অন্ধকার ঘরের ভেতর দূর থেকে ভেসে আসা লাল ছোট আলো।নরম বুকের ভেতরে একটা ঘর। আমের মুকুল গন্ধ।
আমার সমস্ত শরীরে সেই আম কুরোনোর বালক ছুটে বেড়ায়।
ভোর হয়। বেরিয়ে পড়ি রোদের মধ্যে।একা একা কোথায় যে যাই।মাঠের ভেতর? হুহু করে বুক।ছোট্টবেলার খেলার সঙ্গিনী কোথায় হারিয়ে গেছে! তার হাত ধরেই তো ফিরে আসতে পারতাম সমস্ত বিচ্ছিন্নতা সরিয়ে নিজের কাছে।
আমার পুরনো শহরতলির কাছে।যে বন্ধুদের অভিমান করে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম তাদের কাছে।
সবাই হাত থেকে ফেলে দিয়েছে আমায়।নইলে এতো করে দেখেছে যে সে দেখার মাঝে আমি আড়াল হয় গেছি।দীর্ঘদিন পর মনে হচ্ছে কেউ অন্তত নির্বাসনের দেশে নিয়ে চলুক। সামান্য একটা ঘরের পেছনের কল পাড়ে যেন সমস্ত অস্তিত্বকে ভেজানোর মতো একটা স্নান করতে পারি।আমার সমস্ত ক্লান্তি মুছে যাক।
মুছে যাক এই বানিয়ে তোলা সভ্যতা আমার জীবন থেকে।অরণ্য ডাকে আমাকে।আমাকে ডেকে ডেকে নিয়ে চলে এই প্রকৃতি।আমি সমস্ত হারানোর মাঝে নিজেকে এই অসীমের মাঝে পেয়েছি ।
বহুদিন পর ঘর করতে ইচ্ছে করছে করো সাথে।মন্ত্র পড়ে না।লোক দেখিয়ে না।শুধু পাশাপাশি চুপিচুপি থেকে যাওয়া।একটা সামান্য ঘর। কলতলা।একটা টিমটিম করা আলো।মন খারাপের ভেতর একটা রেডিও বেজে চলা।
প্রতিদিন একটা ছবি। অথবা প্রতিদিন একটা গল্প বা কবিতা।তাকে শোনানো।তার টা শোনা।এই যে কি সুখ।
ভালোবেসে এর থেকে বেশী কিই বা দিতে পারি? একটা গভীর রাতে বাড়ি ফেরার মতো থাকা।থেকে যেতে ইচ্ছে করে।ঘরে ফিরে সেই দুপুরের কিছু বেঁচে যাওয়া খাওয়া। একটা নতুন বই আমাদের সারারাত জাগিয়ে রাখে।
রাতের বেলা রেলগাড়ির শব্দ আসে খুব ।বুকের ভেতর একটা ব্যাথা ।কিভাবে যে খায়।
বহুদিন পর একটা ঘর করতে ইচ্ছে করে।মনে আয়নার সামনে এসে বসি ।অপেক্ষা করি।তার অপেক্ষা।তার অপেক্ষামান মুখের কথা,সুন্দর সৃষ্টি করে।
মন্ত্র পড়ে নয়। এ সহবাস নয়। এই হল সম বাস।এমন ঘরের কথা ভেবে বুকের ভেতরটা ভরে ওঠে।কিছুই কি দিতে পারি আমি?
একদিনের একটা ছবি।একদিনের একটা লেখা।একদিনের একটা না পারা।
একদিনের একটা কান্না।বুকের ভেতর নদী হলে যেতে পারে। ভাসাতে পারে,ডোবাতে পারে।
জীবনের একটা মানে দিতে পারে।যেমন ছাদে উঠে দূর থেকে দেখি একটা রান্নাঘরের লাল আলো জ্বলে আছে।
আর সেই দেখে তারাদের চোখ সর্বদা ছলছল করে ওঠে।
বহুদিন পর ইচ্ছে করছে তাকে পাই,যার সাথে একটা এমন ঘর করা যায়।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *