আমার দিম্মার বাড়ির নাম সত্যিই ‘ভালোবাসা’। ভারতবর্ষ থেকে আনা মাটি বলে একটা মেটিরিয়ালের সঙ্গে ইস্পাত বলে একটা কি যেন ও প্লিথেরিয়াম মিশিয়ে আমার দিম্মার বাড়ি তৈরি।প্লিথেরিয়াম ইউনিভার্সের সবচেয়ে দামী ধাতু। আমার দাদু ওয়ার্ল্ডের বিখ্যাত ইন্জিনিয়ার দের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনিই ভালোবেসে দিম্মাকে এই ‘ভালোবাসা’ গিফ্ট করেছেন।দিম্মার মুখেই শুনেছি,২০৫০ সাল থেকে ৩০৫০ সাল পর্যন্ত মানুষ পাগলের মতো টেকনোলজির উন্নতি করেছিল আর তা করতে গিয়ে সমস্ত প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পৃথিবী প্রায় ধ্বংস হতে বসেছিল।কতো রকমের অজানা ভাইরাস, ক্ষতিকর রেডিয়েশন, পলিউশন পৃথিবীতে বাসা বেঁধে মানব সমাজের অস্তিত্ব কে একেবারে মুছে ফেলার উপক্রম করেছিল।এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে পৃথিবীর সমস্ত দেশ নিজেদের বদলে ফেলতে বাধ্য হয়। কোনো পথ খোলা না পেয়ে ঈশ্বরের শরনাপন্ন হয়। এবং তখনই ঘটে মিরাকল্। অদ্ভুত কিছু মানুষের আবির্ভাব হয়। তাঁরা ই মানুষ কে বাঁচার পথ বলে দেন। তাঁরা কে?কোথা থেকে এসে কোথায় চলে যান,কেউ জানেনা,অথবা কেউ কেউ জানে। তাঁদের নির্দেশেই পুরোনো পৃথিবীর সব নিয়ম…. ঈশ্বর বন্দনা, তন্ত্র, পুজোপাট বিভিন্ন রিচুয়াল সবকিছু মানুষ আস্তে আস্তে ফিরিয়ে আনে।এই ভাবে তাঁরা এই ব্রহ্মান্ড কে রক্ষা করেন। এবং তাঁদের বানানো নিয়ম অনুযায়ী মানুষ সমস্ত ক্ষতিকর টেকনোলজি যেগুলো এতটুকুও প্রকৃতির ক্ষতি করবে… তা সম্পূর্ণ ত্যাগ করে।এখন আমরা সবার আগে পরিবেশের কথা ভাবি, প্রকৃতির সন্তান দের, মানুষের সুস্থতার কথা ভাবি।আর আমরা সেই মানুষ গুলো ….যাদের নাকি অবতার বলে, তাঁদের শেখানো পথে চলি। খুব প্রয়োজন না হলে কৃত্রিম কিছু ব্যবহার করি না।আর প্রাকৃতিক সম্পদ গুলো ও নাকি আমরা আগের চেয়ে অনেক বাড়িয়েছি। যদিও আগের এইসব কথা আমরা স্কুলে বা বড়দের (আমার ক্ষেত্রে যেমন দিম্মা)থেকেই জেনেছি। তবু আগের থেকে আমাদের এই পৃথিবী অনেক অনেক সুন্দর।সেই সব অবতার রা এখনও নাকি পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে আছেন। মানুষ বা প্রকৃতি বিপন্ন হলে তাঁরা নিজেদের ইচ্ছেমতো বা প্রয়োজন অনুযায়ী এসে হাজির হন।যাই হোক, আমি প্রায় আমার দিম্মার বাড়ির কাছে এসেই গেছি।দিম্মার বাড়ির সামনের প্রায় তিন একর জায়গা জুড়ে ল্যাভেন্ডার,গোলাপ,হায়াসিন্থ আরো কতরকমের নাম না জানা ফুলের বাগান এখন আমার ঝাপসা চোখের সামনে। মাঝখানের সরু রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে চললাম।ঐ দেখো,সামনেই রোমিও জুলিয়েট দুজনেই দৌড়ে আসছে।এই ডগি দুটো গাড়ি ঘোড়া কিচ্ছু মানে না।একেই চোখে ভালো দেখতে পাচ্ছি না,তার উপর এরা একদম সামনে।ফ্লাইট মোড অন করে সবে গাড়ি টা কে উপরে তুলেছি,……. সার্সীইইইই আবার???? বলেছি না, দরকার না হলে টেকনোলজি না??? ততক্ষনে আমি প্রায় দিম্মা কেই পেরিয়ে গেছি।বিচ্ছিরি ধপাস করে গাড়ী টা ল্যান্ড করালাম।আর একটু হলেই কি যেন একটা ফুল গাছ নষ্ট হয়ে যেত।।কোনমতে গাড়ী টা একপাশে পার্ক করেই সোওওজা গিয়ে দিম্মার নরম শরীর টা জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজে দিলাম…..,আঃ কি শান্তি।দিম্মার হাত গুলো আমার পিঠে র উপর স্বান্তনার প্রলেপ মাখিয়ে দিচ্ছে।দিম্মার গায়ের সেই অপূর্ব ল্যাভেন্ডার চন্দন না কি কি সব যেন নামের গন্ধের মধ্যে ডুবে যেতে যেতে বুঝতে পারলাম শরীর না হোক,মনের চিন্তা টা এরমধ্যেই কমতে শুরু করেছে।আরো শক্ত করে দিম্মাকে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বললাম,দিয়া প্লিজ আমাকে সারিয়ে দাও।।।
এর ঠিক দুঘন্টা পরে।
…..তোর ঠিক কবে থেকে এই অসুবিধা গুলো শুরু হয়েছে??….দিম্মা আমার সামনে একটা বাটি রেখে জিজ্ঞাসা করলো।..আমি আরাম করে আগুনের সামনে বসে…দিম্মা আমার টি শার্টের উপর একটা স্টোলের মতো জিনিস জড়িয়ে দিয়েছে।জিনিস টা তুলোর মতো হালকা অথচ দিম্মার আদরের মতো গরম ।এটা নাকি ভারতের কাশ্মির থেকে আনা।পশমিনা না কি যেন নাম।যাই হয়ে যাক না কেন,কেনাকাটি দিম্মা ইন্ডিয়া থেকেই করবে।… প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে খাবারের দিকে তাকালাম… অদ্ভুত একটা কি যেন সাদা সাদা খাবার।… আমার চোখ দেখে দিম্মা হেসে ফেললো।…আরে খেয়ে দেখ,….এটা খই বলে একটা জিনিস ,আর এর সাথে ইয়োগার্ট,বাতাসা,আমন্ড আরো অনেক কিছু দিয়েছি,সব আমার বাড়িতে তৈরি।রাতে তোর ফেভারিট মাছের ঝোল আর ভাত।আর কথা না বাড়িয়ে মুখে দিলাম,সুস্বাদে,সুগন্ধে মুখের ভিতর টা ভরে গেল।দিম্মা আর কিছু না করে শেফ্ হলেও ওয়ার্ল্ডের সেরা হোতো।….. খেতে খেতেই দিম্মাকে সব বলতে লাগলাম।ঐ ছেলেটার কথা বলবোনা ভেবেও বলে দিলাম,বেস্ট ফ্রেন্ড কে কিছু লুকোতে নেই।দিম্মা একটাও কমেন্ট না করে সব টা মন দিয়ে শুনলো।।তারপর আস্তে আস্তে বিশাল ফ্রেন্ঞ্চ উইন্ডোটার সামনে গিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আমিও পায়ে পায়ে দিম্মার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম,সন্ধে হয়ে আসছে।একটা আবছা অন্ধকারের পরদা ধীরে ধীরে নেমে আসছে দিম্মার বাগানের গাছ,ফুল বাড়ি আর গোটা চরাচরের উপর।এক সময় দিম্মা আমার দিকে তাকালো….বড় বড় টানা টানা চোখ দুটো দিয়ে যেন আমার ভিতরটাও দেখার চেষ্টা করলো বা কি জানি , হয়তো দেখতেই পাচ্ছিলো।যে ভিতরের আমি টাকে হয়তো আমিও জানি না।একসময় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো….চল তোকে একটা জিনিস বানিয়ে দি,একটু ইনহেল্ করলে হয়তো সর্দি টা থেকে আরাম পাবি। বলতে বলতেই দিম্মা চঞ্চল হয়ে উঠলো…. রোমিও জুলিয়েট টাকে নিয়ে আর পারি না।কখন সন্ধে হয়েছে, কোথায় বাড়ি আসবে,তা না দেখ,জঙ্গলে পাখিদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আমি হেসে বললাম।না না ওরা ঐ যে। তোমার ল্যাভেন্ডার খেত ছাড়িয়ে ঐ দূরে রাস্তায় রিচার্ডসন দের পুসি টার সাথে খেলছে।।….বলতে বলতেই আমি থেমে গেলাম,….আরে দিয়া…. আমার চোখ তো একদম ঠিক হয়ে গেছে!!!!আগের চেয়ে বরং বেটার… আমি তো অনেক দূরের জিনিসও অনেক বেশি ক্লিয়ার দেখছি গো!!! তুমি কি খাবারে কোনো মেডিসিন মিশিয়ে ছিলে???দিম্মা অদ্ভুত ভাবে আমার হাসিমুখে র দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ… তারপর নিজেও একটু হেসে বললো….না রে, আমি কিছু মেশাই নি।তুই দেখতে পাচ্ছিস,কারণ দিনের আলো আর নেই। অন্ধকার নেমে এসেছে তাই….যত রাত বাড়বে,তুই আরো ভালো দেখবি, আমাদের থেকেও ভালো….কাল সকালে আবার তোর ভিশন আগের মত অস্পষ্ট হয়ে যাবে।।দিম্মার কথা আমার মাথায় কিছুই ঢুকলো না।অথবা একটু একটু ঢুকলো। অসম্ভব আতংক নিয়ে দিম্মার দিকে তাকালাম।দিম্মা আমার কাছে এগিয়ে এল…..খুব কাছে দুহাত দিয়ে আমার মুখটা ধরে আমার দিকে অসীম স্নেহে তাকিয়ে বললো…যাই হয়ে যাক,তোর দিয়া তোকে কোনোদিন একা ছেড়ে দেবে না….. সবসময় তোর কাছে তোর সঙ্গে সঙ্গে থাকবে।…..এই কথা গুলো আমার মন ছুঁয়ে গেলেও মাথার ভার,আতংক খুব একটা কমাতে পারলো না।….কোনো রকমে গলা টা পরিস্কার করে দিম্মার দিকে তাকালাম…….দিম্মা এর মানে…….আমি ….আমি কি!!!!????দিম্মা ফায়ার প্লেসের আগুনটার দিকে তাকালো ….. হ্যাঁ সার্সী…. আমার মনে হচ্ছে তুই নির্বাচিত…….ইউ আর চোজেন।