উত্তর ভারতের পাঞ্জাবে বাজার যেতে না দেওয়ায় জনৈক পুলিশকর্মীর হাত রক্তাক্ত ক’রে দিয়েছেন এক ব্যক্তি। অপরদিকে সরকারী সুরক্ষানীতি মেনে ঘরে থাকায় দক্ষিণ ভারতের কেরলে দৈনন্দিন রোগাক্রান্তের হার প্রায় শূন্যে এসে ঠেকেছে। আসুন, এই সাফল্যকে সকলে মিলে খুঁটিয়ে দেখি…
.
.
.
.
১। পাঞ্জাবের প্রতিটি ঘরে সরকার ন্যূনতম চাহিদা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেনি, যেমনটি ক’রেছে কেরল সরকার। নিজেরা অনাহারে থেকে গেলেও স্ত্রী-সন্তানকে চোখের সামনে ম’রতে দিতে পারেনা মানুষ। আবার…
২। কেরলের মানুষ সঠিক অর্থে শিক্ষিত হওয়ায় বর্তমানের গৃহবন্দিত্বকে বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষিতে ‘সঙ্গনিরোধ’ হিসাবে বুঝতে শিখেছে, যা পাঞ্জাববাসীর পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই জেনে বা অজান্তে প্রায় দায়িত্ব নিয়ে মৃত্যু ছ’ড়াচ্ছে তারা। আবার…
৩। পেটের চিন্তা না থাকাতেই নিশ্চিন্তে মস্তিষ্কের ক্ষুধা মেটাতে পেরেছে ১০০% কেরলবাসী, অতএব সরকারও সাধারণ রাজ্যবাসী মানুষকে নিয়েই গঠিত হ’য়েছে। দুটি বিষয়ই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় পাঞ্জাববাসীর পক্ষে এদের কোনোটিই করা সম্ভব হয়নি। আবার…
৪। রোগ প্রতিরোধে কেরলের পদক্ষেপের প্রতিচ্ছবি কেবল কেরলেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে, কিন্তু পূর্বে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে একা পাঞ্জাব নয় সমগ্র ভারতবর্ষও কেরলের শাসক দলের ওপর বিন্দুমাত্র ভরসা রাখেনি। মানুষের দূরদর্শিতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা ক’রেও বলা যেতে পারে তারা নিজেদের সুপরিকল্পনার এমন কোনো উদাহরণ জনসমক্ষে দিতে পারেনি যাতে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করা যায়। আবার…
৫। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়েও কেরলে প্রতিটি ঘর নিশ্চিন্তে চ’লতে পারছে, যেহেতু বিত্তশালী না হ’লেও সেখানে প্রতিটি পরিবারই মোটামুটি যথেষ্ট স্বচ্ছল আর যারা তা নয় তাদের দায়িত্ব প্রশাসনের অর্থাৎ পরোক্ষে বাকিদের। অপরদিকে ভারতবর্ষের সর্বাধিক সংখ্যক বিত্তশালী কৃষক পাঞ্জাবের বাসিন্দা হ’লেও সমস্যার অধিকতর প্রভাব পড়া রাজ্যগুলির এটি একটি। আবার…
৬। রাষ্ট্রের মতামতের পক্ষে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে পাঞ্জাব, তারপরেও সে ভুগছে। অপরদিকে রাষ্ট্রের বিরোধিতা ক’রে স্বমতে অনড় থেকে লাভবান হ’য়েছে কেরল। আবার…
৭। বিপদে যেকোনো কেরল সরকারেরই এই দক্ষতা নতুন কিছু নয়, তারপরেও তার এতোদিনের নীতিবাগীশ দলটির ওপর ভরসা রাখেনি ভারত। পাঞ্জাবও স্বেচ্ছায় স্বমতের অন্যথা করেনি এক্ষেত্রে। অতএব…
ন্যূনতম চাহিদার সুষম বন্টন হয়না ব’লেই সঠিক শিক্ষার বিকাশ হয়না আর আপাত অর্থে শিক্ষিত যারা তারাই নির্বাচনে এমন সরকারের ওপর ভরসা রাখে যারা পূর্ণ পাঁচটি বছর হাতে পেয়েও সুষম বন্টনে অক্ষম থাকে। এবার আসুন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে…
.
.
.
.
গত ৮ই এপ্রিল রাত্রের দিকে মহাচীনের বিরূদ্ধে রাষ্ট্রসঙ্ঘের আদালতে মৃত্যুমিছিল জন্ম দেওয়ার অভিযোগ দায়ের ক’রেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অভিযোগের কেবল ২টিই ফলাফল হ’তে পারে। মহাচীন দোষী অথবা নির্দোষ। দোষী সাব্যস্ত হ’লে বিশ্বে এর মূলতঃ যে ২টি প্রভাব প’ড়বে, প্রথমতঃ সাম্যবাদের ওপর থেকে বহুকালের জন্য ভরসা উঠে যাবে সারা বিশ্বের, যার ফলে বহু দেশ থেকে এতোদিনের ‘আদর্শ বিরোধী রাজনীতি’ অপসারিত হ’য়ে একনায়কতা প্রতিষ্ঠিত হবে, দ্বিতীয়তঃ সারা বিশ্বে একমাত্র শক্তিধর রাষ্ট্র হিসাবে বেঁচে থাকবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সেটিই হবে সর্বাধিক বিপজ্জনক। বুদ্ধিমান ও স্বৈরাচারী ব্যক্তিত্ব যদি রাজনীতিবিদ হয়, সে সমগ্র মানবজাতির পক্ষেই অত্যন্ত ভয়ানক বিষয়। রাষ্ট্রসঙ্ঘ সে’কথা নিজেও জানে। সাধে কি সে আর মহাচীন সমর্থিত এমন এক প্রার্থীকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাথায় এনে ব’সিয়েছে যে ব্যক্তি আদপে চিকিৎসকই নন?
কিন্তু একবার মহাচীন দোষী সাব্যস্ত হ’য়ে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সম্রাট ব’লে মেনে তো নিতেই হবে আর তা কখনোই রাষ্ট্রসঙ্ঘ ঘ’টতে দিতে পারেনা। প্রজার জন্যে রাজাধিরাজকেও তো তাঁর রাজধর্ম ‘নিরপেক্ষ বিচারক্ষমতা’ বিসর্জন দিতে হয়। অতএব সে’ও চেষ্টা ক’রবে যাতে মহাচীন অবশেষে নির্দোষই প্রমাণিত হয়। মার্কিন কূটনীতিবিদেরাও সে’কথা জানেন। এ’ও জানেন যে রাষ্ট্রসঙ্ঘের আদালতে মহাচীন নির্দোষ প্রমাণিত হ’তে পারলেও জনগণের আদালতে সে ইতিমধ্যেই দোষী সাব্যস্ত হ’য়েছে। কিন্তু এই উত্তাল সময়ে যে সমস্ত দেশগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের নিজস্ব দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবে (হোক না হোক, দায় তাদেরই ঘাড়ে নিশ্চিত প’ড়বে) অপরাধ থাকা সত্ত্বেও সেই প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে নামের আগে ত্রাতা বিশেষণ নিয়ে প্রধান বিরোধী হিসাবে উঠে আসবে সাম্যবাদ, যারা দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে একত্রিত হবে মহাচীনের নেতৃত্বে। ফলস্বরূপ যে সমস্ত দেশগুলিতে না চাইতেও সাম্যবাদী সরকার গঠিত হবে, তারা তাদের নেতার কথামতো যেনতেন প্রকারেণ নিজভূমে মার্কিন পণ্যের বাণিজ্যিকরণ বন্ধ ক’রে দেবে আর অর্থনৈতিক এই ঝুঁকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর যেখানেই নিকনা কেন, ভারতের ক্ষেত্রে ভুলেও নেবেনা।
এখন আর কী? অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। কোনো আদর্শকে নয়, নৈতিকতাকে নয়, সরাসরি ভারতের একাংশের প্রশাসনকে নিজের প্রথম শ্রেণীর দৈনিকে সাধুবাদ এবং তা জনসমক্ষে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে ওষধির পরিবর্তে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পরে। অতএব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের “পাল্টি খাওয়া”র প্রক্রিয়া কেউ জেনেও জানলোনা, বাকি পৃথিবী ও দেশবাসী জানলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরপেক্ষতা, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জানলো প্রয়োজনে তার ‘মিত্ররাষ্ট্র’টি বিরোধীদের মাথাতেও হাত রাখতে পারে, সর্বোপরি মহাচীনের অস্ত্র হিসাবে বহুজনের সমর্থন থাকলেও দিনের শেষে তার হাত-পা র’ইলো বাধা। রাষ্ট্রসঙ্ঘ ২ পক্ষকেই পরোক্ষে ‘অলিখিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি’র অন্তর্ভুক্ত ক’রে শান্ত রাখতে পারলো, কারণ শত্রুতা সে দমন ক’রতে পারবেনা। সে’ও নিজের আপাত দায়িত্ব পালন ক’রে খুশীতে থাকলো।
বিজ্ঞানের এক তত্ত্ব ব’লছে, মানুষ পৃথিবীতে এসেছে আফ্রিকা মহাদেশের এক শ্রেণীর হিংস্র বানর থেকে যে কারণে যুদ্ধপ্রিয়তা তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জানিনা সে তত্ত্বকে প্রমাণ ক’রে মানুষ বিজ্ঞানে আরেকটি অধ্যায় যোগ ক’রতে চ’লেছে, নাকি পশুত্বের দিকে নিজেকে আরেক পা এগিয়ে রাখছে?