• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় সংঘমিত্রা সরকার কবিরাজ

ছুটি

কিরে চা টা খা। ঠান্ডা হয়ে যাবে যে। কি এতো ভাবছিস। যা হবার তাতো হবেই সাবধান থাকা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই তুই আর আমি এতো ভেবে কি করতে পারবো বল ?  নে চা টা খেয়ে নে।
“হুমম খাচ্ছি বৌদি মনি”..আসলে সারা মাস টা কাজ না করে এরকমভাবে মাইনে টা নিতেও খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু উপায় কি বলো। এইসময়  তোমাদের ও তো দোকান বন্ধ। আমি কাল থেকে যেমন কাজে আসতাম তেমনি আসবো বৌদি। এসেই বাথরুমে ঢুকে হাত পা ধুয়ে তুমি একটা শাড়ি দিও তাই পরে পরিষ্কার হয়ে তোমার কাজ করে দেবো। কাজ না করে টাকা নিতে আমার ও খুব খারাপ লাগছে। তাছাড়া বাড়িতেও আর বসে থাকতে ভালো লাগছে না। কাজ ছাড়া কি চুপচাপ বসে থাকা যায়। তাছাড়া আমি জানি তুমি এতো  কিছু কাজ একা করতে একদম পারো না , তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমার একটুও ভালো লাগছে না।
তোকে আর এতো পাকামি করতে হবে না। অন্য সময় তো ছুটি ছুটি করে  ঝগড়া করিস। এখন ছুটি খা।
যদিও এই কথা গুলো বলে রান্নাঘরে চলে যায় রুমেলা। কিন্তু সেখানেও সেই কি চিন্তা মুক্ত হতে পারে । সত্যিই তো আজ এতদিন হলো  লক ডাউন আর করোনার দাপটে তাদের  ছোট্ট কাপড়ের দোকানটা বন্ধ।  ছোট হলেও পুরোনো চালু দোকান তাদের । কিন্তু এই চৈত্র সেলের বাজারে দোকান বন্ধ থাকা  মানে চরম ক্ষতি। তারপর কর্মচারীদের মাইনে , কাজের মেয়ের মাইনে। সে আর ভাবতে পারে না। কিন্তু ওদেরকে এই সময় মাইনে না দিলেই বা কি করে চলবে। সারাবছর তারাই তো পাশে থাকে। মন শক্ত করে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। তার চিরজীবনটাই সংগ্রামের। বিনাকারণে এক মেয়ে হওয়ার জন্য অরিরিক্ত বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য তাকে পরিতোষ কম অত্যাচার তো করে নি। সে এক দিন গেছে। সেদিন ও সে  লড়াই চালিয়ে গেছে।  অনেক সহ্যের পর একদিন মেয়ের হাত ধরে এক কাপড়ে বাড়ি  ছেড়েছিলো। কারণ সে বুঝেছিলো এই অত্যাচারের কোনো শেষ নেই।হ্যাঁ বাবা তাকে বাপের বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছিলেন। তবে সে কারো গলগ্রহ হয়ে থাকে নি। লোন নিয়ে কিছু বাবা সাহায্য করেছিলেন ,এইভাবে সে একটি কাপড়ের দোকান খুলেছিল, যেখানে মালকিন কর্মচারী সবাই বর তাড়ানো অভাগিনী।   আজও  ঠিক কিছু না কিছু উপায় হবে। তবে এতো কিছুর  মধ্যেও সবিতার কথা শুনে  তার ভারী ভালো লাগলো। মনটা নরম হয়ে ভিজে গেলো। তার শুকনো জীবনে চলার পথে এরাই তো মরুদ্যান।
 এই শোন ,এখন ই  পয়লা বৈশাখের  বোনাস টা দিতে পারছি না। পরের মাসে দোকানটা খুলুক , তারপর দেখছি। তুই এই নতুন কাপড়টা নিয়ে যাস আর মেয়েটার জন্য এই জামাটা নিয়ে যা। হ্যাঁ আর কাল থেকে একটু সকাল সকাল কাজে চলেই আসিস, রাস্তা ঘাটে ভিড় হওয়ার আগে,  তোরা না এলে  আমার ও একা ভালো লাগে না । ১লা বৈশাখে মোটেও ১লা থাকতে  ইচ্ছে হবে না, বুঝলি।সবিতা আর রুমেলা দুইজনেই একসাথে হেসে ওঠে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *