• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় মানসী গাঙ্গুলি

আমিও

দেড়বছরের ছোট্ট তিন্নিকে ঠাকুমার কাছে রেখে বাবা-মা বেরিয়েছিলেন কাকার বিয়ের বাজার করতে। তা আর হল না। পথ দুর্ঘটনার বলি হলেন তাঁরা। বিয়ে বন্ধ। শোকে কাতর ঠাকুমার পক্ষে আর কাকার বিয়ে দেওয়া সম্ভব হলো না। মাকে না পেয়ে ছোট্ট তিনি কেঁদে বেড়ায়,সারারাত ঠাকুমাকে ঘুমাতে দেয় না। একে পুত্রশোক তায় বয়স হয়েছে,তাই কাকাই দায়িত্ব নিলেন রাতে কাছে নিয়ে ঘুম পাড়াবার।
মায়ার বশবর্তী হয়ে প্রফেসর কাকা তাকে যত্ন করে বুকের মাঝে নিয়ে ঘুম পাড়ান। ঠাকুমা নিশ্চিন্ত। তিনবছর বয়স হলে কাকার কাছে পড়াশোনা শুরু হল,স্কুলে ভর্তি হল। কিন্তু সারাদিন সে স্কুলে ঝিমোয়,লেখাপড়াও ঠিকমতো শিখতে পারে না। ঠাকুমা ভাবেন বুদ্ধি কম। দিনদিন তিন্নি ভীত-সংকুচিত হয়ে পড়তে লাগল,কারো সঙ্গে কথা নেই,সর্বদা চুপচাপ। দেখতে দেখতে ১২বছর বয়স হল,ঋতুমতী হল ও। পড়ার বই নিয়ে বসে থাকে রাত পর্যন্ত,এভাবেই যেন রাতটা পার করে দিতে পারলে বাঁচে কিন্তু না পার পাবার উপায় নেই,কাকা এসে উঠিয়ে নিয়ে যান শুতে।
কিছুতে রেজাল্ট ভালো হয় না দেখে ঠাকুমার ইচ্ছায় এক দিদিমণি এলেন পড়াতে। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি তিন্নির মায়ের জায়গা নিলেন,ভালবাসায় জয় করলেন তাকে,পেলেন তার মনের খবর। পাশে থেকে তাকে সবরকমভাবে মানসিক শক্তি যোগাতে লাগলেন,বোঝালেন তাকে মুক্তি পেতে গেলে পড়াশোনা শিখতে হবে।
এতদিনের ভীত তিন্নি ভরসার আঁচলের ছায়ায় ভেতরে ভেতরে বিদ্রোহী হয়ে উঠতে লাগল। এতদিন প্রতিবাদ করবার সাহস ছিল না ওর। কোথায় যেত ও তাহলে? এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়াই হবে ওর প্রতিবাদ,তার জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। দিনরাত এক করে তিন্নি পড়াশোনা করতে লাগল,  একের পর এক পরীক্ষায় দুর্দান্ত রেজাল্ট করে এগিয়ে চলল ও। নিজের ওপর আস্থা ছিল না ওর মোটে,এখন ও আত্মবিশ্বাসী,কিন্তু মুখে হাসি নেই,নেই কোনও বন্ধু।পড়া শেষ হলে চাকরি নিয়ে চলে যায় দূরে,কাউকে কিছু না জানিয়ে,ঠিকানা না রেখে। এখন ও স্বাবলম্বী,কারও ওপর নির্ভরশীল নয় আর। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিল তিন্নি একদিন #আমিও। লিখল তার জীবনের করুণকাহিনী কাকাকে ট্যাগ করে,কিভাবে তিনবছর বয়স থেকে বিকৃতকাম কাকার যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ও সেই কথা। ছিছিক্কারে ভরে যায় কাকার ফেবুর দেওয়াল।
এটাই ওর প্রতিবাদ ও প্রতিশোধ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।