অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় মৃত্তিকা মুখোপাধ্যায়
by
·
Published
· Updated
ভয়
দেশজুড়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি।অদেখা এক মারণ ভাইরাসের আতঙ্কে গৃহবন্দী মানুষজন।মুম্বাই তে একটা প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করে রাণা।লকডাউনের জেরে Work from home হলেও কোলকাতায় পরিবারের কাছে ফেরা হয়নি তার।
‘^-তুই চিন্তা করিসনা।আমি যতটা পারবো,কাকু,কাকীমার খেয়াল রাখবো।তুই একা একা আছিস্।নিজের যত্ন নিস্।সিগারেট কম খাস্।আর স্পন্ডেলাইটিসের ব্যথাটা যাতে না বাড়ে।একটু নিয়মিত exercise টা করে আমাকে ধন্য করিস্।”
তৃষা।রাণার পাঁচ বছরেরsteady girlfriend.সব ঠিক থাকলে এ বছরের শেষে দুজনের বিয়ে হবার কথা।
-“তুই জ্ঞান দিস্না।গত সাড়ে তিন বছর আমি এখানে একাই আছি তৃষা।তুই বরং নিজের খেয়াল রাখিস্।কেন যে নার্সিং পড়তে গেছিলি তখন!! নে,এবার নিজের জীবন বাজি রেখে আর্তের সেবা কর্।নিজের কথা ভাবিসনা তুই।বিরক্তিকর!তখন জোর করে আটকে দিলেই ভালো করতাম।”
কটাস করে কেটে যায় লং ডিস্টেন্স কলটা।ধুত্তোর!! সারা দেশের লোক এখন ঐ এক ফোনেই মশগুল। work from home বা আড্ডা from home .
অফিস ক্যান্টিন আর হোম ডেলিভারি-বেশ চলছিল।কে জানতো,এই পরিস্থিতি হবে!! মা অনেকবার টুকটাক রান্না শেখানোর চেষ্টা করেছিল। এখন complete lockdown ঘোষণা করেছে সরকার।মহারাষ্ট্র ই সবচেয়ে বেশী affected.দোকান খুলছে খুব কম।সপ্তাহে একদিন গিয়ে কিছু জিনিস আনলেই হবে।এক কাপ কফি নিয়ে টিভিটা অন করে রাণা।গোবিন্দভোগ চাল,আলু,ডিম দিয়ে এবেলা চালিয়ে নেওয়া যাবে।বাড়ির লোকজনের খবর পাওয়ার জন্য এখন সবসময় উদগ্রীব হয়ে আছে সবাই।সবচেয়ে উদ্বিগ্ন লাগে তৃষার জন্য।এই যুদ্ধের ও সামনের সারির সৈনিক।চাপা স্বভাবের রাণা দুশ্চিন্তা, ভালোবাসা কোনটাই সেভাবে মন খুলে বলতে পারেনা।তার কষ্ট তাই অনেক বেশী।ক্রমাগত এক খবর থেকে মন সরাতে টিভিটা mute করে রাখে।মহামারী আটকাতে বারবার ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে।সারি সারি নিরাশ্রয়,বুভুক্ষু,দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের মুখ।মৃত্যুমিছিল দেশজুড়ে।রাণা খবরের মাঝেই চাল,আলু,ডিম প্রেশারকুকারে বসিয়ে ফিরেই দেখে স্ক্রিনে ফুটে উঠছে তৃষার হাসপাতালের খবরটা।ওখানে কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষের মধ্যে কয়েকজনের টেস্টে পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে।সেই সঙ্গে সেইসব মানুষের সরাসরি চিকিৎসায় নিযুক্ত দুজন নার্সও কোভিড 19 পজিটিভ।রাণার চোখের সামনে টিভির পর্দাটা দুলতে থাকে। সেই বেশী caring,ঘ্যানঘ্যানে মেয়েটার মুখ মনে পড়ছে বারবার।টেবিলের ওপরে রাখা মোবাইলের স্ক্রিনে মায়ের নম্বর ভেসে উঠছে সমানে।কিছুতেই রিং হয়ে যাওয়া ফোনটা ধরার শক্তি পাচ্ছেনা রাণা…..