অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় মৌসুমী রায়
লকডাউন
শালা ,এবারের সেলের বাজারটাই মাটি ।
বিরসমুখে ভাবে বাবলু , বৌকে দিয়ে অতগুলি সায়া কাটালাম ! সব তো ডাঁই হয়ে পড়ে থাকবে ।মহাজনকে তো তাঁর টাকা শুধতেই হবে ।পয়সার ব্যাপারে শালা,এক নম্বরের হারামী !
বাবা,ও বাবা , সোহমের ঘ্যানঘ্যানে ভাবনায় ছেদ পড়লো বাবলুর !
মাকে বলোনা ,আজ মাংস রান্না কত্তে !
কতদিন খাইনা ।
মা মাংস কোথায় পাবে রে ? তোর বাবা মনে হয় এনে দিয়েছে ? হাসতে হাসতে ছেলেকে শুধায় চন্দনা ।
বলোনা মা ,বাবাকে !
বাবলুর থমথমে মুখ দেখে চুপ করে যায় সে ।তবু প্রথম মেয়েটা মরার পর এই ছেলে ।বড় আদরের সোহম তাদের ।
কষ্ট হলেও ছেলের বই ,জামাকাপড় আদর যত্নে কসুর রাখেনা বাবলু !
হতাশ ভাবে চন্দনার দিকে তাকায় সে ।মুখ নীচু করে চন্দনা ।তাঁর ও যে কোন পথ জানা নেই ।
ফুটপাথে জামা ,গেঞ্জী ,সায়া ,রুমাল এসব নিয়ে বসে বাবলু ।আজ পনের দিন লকডাউন ।ঘরে যা তোলা পুঁজি ছিলো ,একটু একটু করে তাও শেষ ।ছেলে হবার পর থেকে চন্দনা তোলাকাজ আর করেনা ,ঘরে বসে হেম করে ।ডজনে পঁয়তিরিশ টাকা ।লকডাউনে সে কাজ ও বন্ধ ।মাল ঘরে পড়ে ! সায়াও করলো কতগুলি ,মহাজন পয়সা দিয়েছে
কিন্তু লোকটার নজর ভালোনা ।
এসে দাঁড়ালেই চন্দনার অস্বস্তি হয় ! কেমন হাঁ করে চেয়ে থাকে তাঁর দিকে ! গা শিরশির করে ওঠে !
শুনছো ,চাল কিন্তু না আনলেই নয় !
ওবেলা আলুভাতে দিলাম ,সেও আর নেই ।
কি করবে ?
দেখি ।
একপা দুপা করে বাবলু মদনের বাড়ি পৌঁছলো ।
মদন দা ,ও মদনদা !
কে ?
আমি বাবলু ,দাদা ।
দাঁড়া ,আসছি ।
ইয়ে কিছু টাকা যদি দিতেন ,
তুই তো আগের টাকাই এখনো শোধ দিস নি শালা।
ঘরে একদানাও চাল নেই দাদা ।ছেলেটার জন্যেই এলাম !
কেন পার্টি থেকে কিছু দেয় নি ?
সব বাড়িতে দিচ্ছেনা ।ওরা যাদের গরীব মনে করছে !
তুই তালে বড়লোক !
লকডাউন টা উঠুক ।সব শোধ দিয়ে দেবো দাদা , বাবলু হাত চেপে ধরে মদনের ।
এক কাজ কর !
রাতের দিকে চন্দনাকে একবার পাঠিয়ে দিস বরং ! এখন তো ঘরে নেই কিছু ।
কথাটা শুনে , তীব্র চোখে বাবলুর দিকে চাইলো চন্দনা ! কি করবে সে ?ভয়ে হাতপা হিম হয়ে যাচ্ছে ! কিন্তু…
লকডাউনের নির্জন রাত !চন্দনা বেরিয়ে আসছে , মদন মহাজনের বাড়ি থেকে ।
মহাজনগিন্নী এগিয়ে এলেন খানিকটা ,
ভালো থাকিস মা ,তোর কথা উনি সবসময় বলেন ! আজ আমার মেয়েটা বেঁচে থাকলে তোর পানাই হোতো কিনা !
আঁচলে চোখ মুছে ,ভারী ব্যাগটা নিয়ে বাড়ির দিকে দ্রুত পায়ে হাঁটা দিলো চন্দনা …