গুচ্ছকবিতায় প্রভাত মণ্ডল
by
TechTouchTalk Admin
·
Published
· Updated
১. তটিনী
মৃদু হিল্লোল
মৃদু সমীরণ
তটিনী ঝড়ায়ে তব রূপ ।
কুলু কুলু কলধ্বনি
বাতাসে মিশিছে আজ
মাথা পরে জ্বলিতেছে ধূপ ।
ঘন কালো ও গহীনে
আঁখি পাতি চাহি দেখি
ঝরিছে তোমা অশ্রুজল ।
কহিছ কত কথা
অন্তরে লয়ে ব্যথা
তবু দাতা তুমি অবিরল ।
শ্রাবণে ভরিয়া কায়া
চঞ্চলা মধুর গতি
খুলে দাও সব মন প্রাণ ।
তাহা দেখি কূলে তব
বিহগ-বিহগী যত
ধরিয়াছে সেই সুর তান ।
ভরিয়া বৃক্ষশাখা
ফুটিয়াছে নানা ফুল
সমীরণে তাহা মৃদু দোলে ।
তটিনী তুমি সখি
মোর মনে শত ব্যথা
ঘুচায়ে দাও অশ্রুজলে ।
২. রথের টান
স্তব্ধতা ,
আজও জনমানসে দিকে দিকে
এ যেন সেই বিপুল শোক ধরণী বুকে ।
ওদের ভাষাহীন ক্রন্দনে
সিক্ত আঁখির পানে ,
চাহিয়া দেখি লুণ্ঠিতা ওই
নীরব রথের টানে ,
স্তব্ধ যাত্রা গভীর রাত্রে
করজোড়ে মাগে ভিখ ,
শোষিতের ব্যথা শোষকের বুকে
তীর হয়ে দেখা দিক ।
যদি কভু বাজে হৃদয় তন্ত্রী
ত্যাজিয়া উপাধি নেত্রী- মন্ত্রী
সাধারণে যায় মিশি ,
আঁধার মুছিয়া সেইদিন ওগো
অবসান হবে নিশি ।
শায়িত শোষিত যুগ হতে যুগ
ক্ষতে রক্তে ব্যথা ভরা বুক ,
তবুও টানিছে রথের রশি
সুর তাল লয়ে বাজাছে বাঁশি ,
লয়ে বুকে ওগো কত শত ব্যথা ,
বঞ্চিত মুখে পুঞ্জিত হাসি
তবু প্রতিবাদ হীন মুখ ,
দৈন্যতা আর দারিদ্র্যতায় ওদের চিরসুখ ।
৩. বৃহৎ স্বপ্ন সর্বনাশা
বৃষ্টি মুখর প্রভাত বেলা
বাদল ঝিরিঝিরি
একলা আকাশ একলা বাতাস
মনের সাথে আঁড়ি ।
স্মৃতির পটে স্বপ্ন আঁকা
মেঘের আঙিনায়
দুঃখ-ব্য্যথা অভিমানে
জীবন বয়ে যায় ।
কারো সাথে কতক আঁড়ি
কারো সাথে ভাব
জন্ম হতে মৃত্যুবধি
হাজার অভিশাপ ।
কেউবা মনের ক্ষুদ্র ঘরে
জ্বালিয়ে দিয়ে আলো
আলো ছায়ায় নিজের জগৎ
সেইটে বুঝি ভালো ।
ছোট্ট জগৎ ছোট্ট আশা
জীবন জুড়ে ভালোবাসা
জগৎ সীমার উপহাসে
দেয়না কভু ধরা ।
বৃহৎ স্বপ্ন বৃহৎ চাওয়া
সর্বনাশা তীব্র জ্বালা
মনের বনের আঙিনাতে
সেথা গরল শুধু ভরা ।
৪. আমরা সভ্য
চারিদিকে নিস্তব্ধ নিশ্চুপ ,
অগণিত স্বপ্নেরা শুধু বিচরণ করে
আঁধোরাতে ।
বুভুক্ষু মানুষের ক্ষুধার্ত চোখ ,
আমার চোখে চোখ রেখে কি যেন বলতে চায়
বারেবারে ।
সভ্য জগতের আলোক মেলায় ,
তবুও কোথায় যেন পুঞ্জীভূত অন্ধকার আজ
অভিমানী ।
শত শত নক্ষত্র সমগ্ৰ আকাশ ব্যাপী বিচরিত ,
পৃথিবীটা তবুও অন্ধকারে একাকিত্ব
নির্জন ।
আমার দিগন্তরের একলা আকাশ ,
সাগর জলে ভিজিয়ে দিয়ে আলোর বাতি
জ্যোৎস্না রাতে ।
তখন ফুটপাতেতে পথের ধারে ,
ছেঁড়া কাঁথার আস্তরণে কাঁপতে থাকে
পথ শিশুটি ।
আমার সভ্য জগৎ প্রাতের বেলা ,
গর্ব করে অহং ভরে চিৎকার করে বলে
আমরা সভ্য ।
৫. সততার মূল্য
শামুকের মধ্যে মুক্ত খুঁজছো বুঝি !
কি করে পাবে ! মুক্ত তো শুনেছি ঝিনুকে থাকে !
অহংকারীকে বিবেকের পাঠ শেখাচ্ছো !
ওদের বৈরাগ্য কোথা ? যে তুমি বিবেক জাগাবে !
অসতের কাছে সত্যের দীপ্তমন্ত্র যতই পাঠ করো
সততার কাঞ্চনসুধা ওরা স্পর্শ করতে ভয় পায় ।
অসাধুতার রক্তচক্ষু দিয়ে ওরা সততার বাকরূদ্ধ করে
তবু ভীত না হয়ে সততার দ্বারে তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে ঠাঁই ।
বিবেকের কাছে ওগো , বিবেক খুঁজবে তুমি
শামুকে না খুঁজে তুমি , ঝিনুকে মুক্ত খুঁজো ,
অসতের পাল্লা ভারি সতের শূন্য ভুবন
তবুও সত্যের কাছেই ওগো , সততার মূল্য জেনো ।