• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ১৬)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৩৬
সেইসময় ক্লাস ফোর কি ফাইভ পড়ি। এক বন্ধুর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। নাম সৌমিত্র প্রসন্ন সরকার। বাবার বদলির চাকরি। তাই এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতে হয়। বাবার সঙ্গে পরিবারও। সৌমিত্র আমাদের স্কুলে ছিল একবছরেরও কম। প্রচণ্ড অস্থিরে। যা মনে করত তাই করত। কারও কথা শুনত না। শিক্ষকের হাতে এইজন্যে তাকে প্রায়ই প্রচণ্ড মার খেতে হত। আমার সঙ্গেও তার বিশেষ কোনো যোগ ছিল না। তবুও তাকে মনে আছে আমার। যে আমি কত কত কথা মুহূর্তে ভুলে যাই, সেই আমি কি করে সৌমিত্রকে মনে রাখলাম! মনের কোন কোণে সে এতদিন পর্যন্ত বন্দি আছে। আর কেনই বা আছে? একটা দিনের কথা খুব মনে পড়ছে। আমাদের প্রাইমারি স্কুলের সামনেই একটা দোকান ছিল। আমরা টিফিনবেলায় সেই দোকানে থেকে কুলের আচার কিনে খেতাম। একদিন টিফিনে আমি কুলের আচার খাচ্ছি। সৌমিত্র হঠাৎ এসে হাজির। আমি ওকে কুলের আচারের ভাগ দিলাম। এরপর সৌমিত্র বলেছিল, ” আমি জানি তোর ভাগ আমি পাবই।” কেন বলেছিল তাও জানি না। আমার ওপর তার এমন কিছু জোর ছিল না যেখান থেকে সে এটা বলত পারে। তবে সৌমিত্রকে দেখে মনে হত সে কারও সঙ্গেই সম্পর্ক গভীর করতে চায় না। যেহেতু সে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় তাই তার কোথাও শিকড় গাড়া উচিত নয়। মনে হতো এটা সে রক্ত দিয়ে বিশ্বাস করত। এই মনে থাকাটা আমার কাছে সত্যিই রহস্যময়। হয়ত এটাই নিয়ম। কত কত কান্নার মধ্যে বর্ষায় রাস্তার ধারের একটা ফুটপাতে একটা কুকুরের কান্না যে কারণে আমৃত্যু মনে থাকে, সৌমিত্রও সেই কারণে আজও আমার মনে অমলিন।
৩৭
আরও একজনের নাম মনে আছে। যাকে আমি জীবনে কখনও চোখে দেখি নি, ছেলে কি মেয়ে তাও জানি না। নাম ওডোনেল ডিকস্টা। একজন পোর্তুগীজ। একটি পত্রিকার তরফ থেকে মাইকেলের জন্মদিনে তার কবরে কবিতা পড়তে গেছি। যখন কবরস্থানে গিয়ে পৌঁছলাম তার একটু আগেই একজনকে কবর দেওয়া হয়েছে। মাটি তখনও কাঁচা। বোর্ডে তার নাম লেখা। ওই নামটুকুর মধ্যে দিয়েই তার সঙ্গে আমার পরিচয়। কবিতা পড়তে পড়তে আমি কেবলই পিছন ফিরে তার দিকে তাকাচ্ছি। মনে হচ্ছে সে যেন আমার কবিতা শুনছে। মনে হচ্ছে এ যেন তার অনেক দিনের ইচ্ছা। হয়ত সে মাইকেলের ভক্ত। তার জন্মদিনে তো আর জন্মানো হল না। অবশ্য জন্মেছে কি না তাই বা কে জানে। তাই মাইকেলের জন্মদিনে মরে সে গুরুর সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায়। কবিতা শুনবে বলেই আজকের এই বিশেষ দিনে তার চলে যাওয়া। হয়ত এই স্বতন্ত্রতার জন্যেই ওডোনেল ডিকস্টাকে আমার পঁচিশ বছর পরেও মনে আছে

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।