• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৬৫)

পর্ব – ৬৫

গোবিন্দ গল্প করে যেতে থাকে। বাইরে শান্তনু আর অতনু বিরক্ত হচ্ছে আন্দাজ করে শ‍্যামলী অস্বস্তি বোধ করতে থাকে। তাছাড়া বাবাকে পুজোর খরচটা বুঝিয়ে দিতে হবে। অথচ বাবা মাও স্মৃতিচারণে ডুবে গিয়েছেন।
শ‍্যামলী নিজের ঘরে গিয়ে পোশাক বদলে এল। রাতপোশাকের উপর একটা গাউন। তারপর বাবার ঘরে ঢুকে দেখতে পেল গোবিন্দ চোখ মুছছেন। শ‍্যামলী মাকে চোখের ইঙ্গিতে জিজ্ঞাসা করল গোবিন্দর কান্নার কারণ কি? মা তাকে চুপ করে থাকতে বলল।
শ‍্যামলী খানিকক্ষণ শুনে বুঝতে পারল  ভাইঝির অকালমৃত্যু নিয়ে অনেক দিনের জমানো চোখের জল ঝরছে গোবিন্দর।
সে গোবিন্দকে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছিল আপনার ভাইঝির?”
গোবিন্দ বলল, “সেটাই তো জানা গেল না। মারা গেল কুড়ি বছরের মেয়ে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন রাতারাতি লাশ পুড়িয়ে ফেলে তারপর খবর দিল।”
শ‍্যামলী প্রতিবাদ করে বলল,
“সে কি কথা? বাপের বাড়ির লোককে বডি দেখাবে না? আনন‍্যাচারাল ডেথ হলে বডি মর্গে থাকবে। ইনকোয়েস্ট হবে। পোস্ট মর্টেম হবে। তারপর শবদাহ।”
“তুই থাম্ দিকি নি। একেবারে জজ ব‍্যারিস্টার এসেছে কোথা থেকে!”
বাসন্তীবালা মেয়েকে ঝামরে ওঠেন।
গোবিন্দ বলল, “আমি কি জানি না ভাবছ? অতো বড় উকিল বাড়িতে কাজ করি আজ পনেরো বচ্ছর হল। জানি না কোন্ জিনিসটা?”
শ‍্যামলী গর্জে উঠে বলল, “জানেন তো পুলিশ কেস করেন নি কেন?”
গোবিন্দকে ইঙ্গিতে থামতে বলেন শশাঙ্ক। রাত্রি হয়েছে। বাড়ির লোকজন খাবে। শোবে। আগামীকাল ষষ্ঠী।
গোবিন্দ ইঙ্গিতটা বোঝে। রাত অনেক হয়েছে। তাকে ফিরতে হবে। সদর দরজা বন্ধ না করিয়ে অনসূয়া ঘুমাতে যাবেন না। গোবিন্দ বলে, “থাক্ শ‍্যামলী, ওসব পুরোনো কথা।”
“আশ্চর্য ব‍্যাপার তো! কুড়ি বছর বয়সে একটা মেয়ের আনন‍্যাচারাল ডেথ হল। আর আপনি বলছেন আপনি তার কাকা, আর বলছেন পনেরো বছর ধরে উকিলের গাড়ি চালান, আপনি নিশ্চুপে হজম করলেন?”
শশাঙ্ক পাল মেয়েকে বলেন, “আজ আর থাক শ‍্যামলিমা। এ গল্পের কোনো শেষ নেই। ওকে বাড়ি যেতে দে।”
ভ‍্যাঁক করে কেঁদে ফেলল শ‍্যামলী। “বাবা, আমাদের দেশে মেয়েদের জীবনের কোনো দাম নেই। তাই গুরুদেব হয়ে মেয়েদের ধর্ষণকারীকে লোকে অর্থসাহায্য করে। বিয়ের পর মেয়েদের মৃত্যু হলে বাপ মা মুখে কুলুপ আঁটে।”
চেয়ারে বসে বাবার পায়ের কাছে উপুড় হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে শ‍্যামলী।
এমন সময় শান্তু ঘরে ঢুকেই বোনের পিঠে একটা কিল মারল। “গুরুদেবের বিরুদ্ধে আর একটা কথা বললে খুন করে ফেলব।”
বাসন্তীবালা ছটফট করে ওঠেন। “ওগো, মেয়েটাকে ও মেরে ফেলবে। ওকে আটকাও।”
গোবিন্দ উঠে দাঁড়িয়ে শান্তুকে বলেন, “শশাঙ্কদার ছেলে হয়ে তুমি এরকম করতে পারলে আমি ভাবতেই পারছি না।”
অতনু ঢুকে পড়ে গোবিন্দকে শাসালো, “অ্যাই অনেক রাত হয়েছে, বাড়ি যা।”
গোবিন্দ একবার শশাঙ্ক পালের দিকে, আর একবার বাসন্তীবালার দিকে তাকাল। তাঁরা মাথা নিচু করে বসে আছেন। এক পা এক পা করে গোবিন্দ বেরিয়ে চলে গেল।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।