• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ১৩) 

বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সি – ১৩

পুরীর সমুদ্রে প্রায় গলা সমান জলে দাঁড়িয়ে ঢেউ আর আকাশ দেখছেন বল্টুদার বৌ। ঘন্টা চার হয়ে গেছে। বৌদি তখনও জলে। আস্তে আস্তে সবাই উঠে গেছেন পাড়ে। সূর্য মাঝ আকাশ থেকে সরে কিছুটা পশ্চিমের দিকে এগিয়ে চলেছে। ক্ষিদেও পেয়েছে কম না। তাই বৌদির অপেক্ষা না করে যে যার মত হোটেলে চলে গেলো। বৌদির সেসব দেখার সময় কোথায়। নোনা জলের অদ্ভুত একটা টান অনুভব করেন তিনি। এমনিতেই নুন খেতে ভালোবাসেন। খাবার পাতে আলাদা করে নুন খান,বল্টুদার সঙ্গে ঝগড়া করে কাঁদলে চোখের জল ঠোঁটের কোনায় এলেই টুক করে জিভটা বাড়িয়েই চেটে খেয়ে নেন। সমুদ্রে স্নান করতে করতে ঠোঁটে লাগা জলও যে কোন ফাঁকে চেটে ফেলেন খেয়াল থাকে না। এহেন লবনপ্রিয় বৌদির সমুদ্রের প্রতি যে অতিরিক্ত টান থাকবে সে কথা বালাই বাহুল্য।
স্নানে প্রায় যখন মাতোয়ারা বৌদি, সমুদ্রে কতদূর চলে এসেছেন কোনো খেয়াল নেই, এমন সময় সামনে তাকিয়ে দেখেন একটু দূরেই জাহাজ। কি অপূর্ব দৃশ্য। এর আগে সমুদ্রে স্নান করতে নেমে কখনো চোখের সামনে জাহাজ দেখেননি তিনি। খুশীতে লাফাতে ইচ্ছে করছে যেন তার। মাথার উপর দিয়ে সিগাল উড়ে যাচ্ছে। দু-চারটে ডলফিন লাফিয়ে চলে যাচ্ছে এদিক থেকে ওদিক। ঢেউ বাড়ছে। জাহাজ যত সামনের দিকে আসছে ঢেউ আরো বাড়ছে। আর ঠিক ততটাই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বৌদির উছ্বাস। আনন্দে আর একবার লাফ দিলেন বৌদি……এই যা….পায়ের তলায় মাটি নেই তো…
এই প্রথম যেন বৌদি একটু টেনশনে পরলেন। যদিও তিনি ভালোই সাঁতার জানেন৷ কিন্তু তাতে কি! দিক যদি একবার ভুল হয়ে যায় তাহলেই হয়েছে আর কি। পিছন ফিরে পাড়ের দিকে ঘুরে তাকালেন বৌদি…আশ্চর্য,সব কিছু উধাও। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। পাড় তো নয়ই,,পাড়ের উঁচু উঁচু হোটেল কিম্বা লম্বা ওয়াচ টাওয়ার পর্যন্ত নয়। প্রমাদ গুনলেন বৌদি। বল্টুদার কথা মনে এলো। নিশ্চই খুব ভাবছে তার কথা। নিশ্চই সাংঘাতিক উদ্বেগে রয়েছে। এর আগে কতবার সমুদ্রস্নানের সময় বল্টুদা বৌদিকে বলেছে ওত দূরে যেতে না,অত বেশী স্নান করতে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বল্টুদার কথা এমনিতে শোনবার বান্দা নয় বৌদি। কিন্তু বিপদ এলেই একমাত্র কাছের জনের কথা মনে আসে। এক্ষেত্রেও তাই।
এগিয়ে চলেছেন পাড়ের দিকে। অল্প কিছুটা যাওয়ার পর মাটি পায়ে পেলেন। এগিয়ে যাওয়া ঢেউ গুলো আরো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বৌদিকে। প্রায় উড়তে উড়তে সামনের দিকে চলেছেন বৌদি।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *