• Uncategorized
  • 0

এই সময়ের লেখায় ভজন দত্ত – তৃতীয় পর্ব

করোনা – এক পাতি পাব্লিকের ডায়েরি

তৃতীয় পর্ব

আচ্ছা ধরে নেওয়া যাক,চীনের নববর্ষের সময় থেকেই (২৫ জানুয়ারি,২০২০)না হয় বিশ্বের মানুষ জানলেন করোনা বা COVID-19 মানব বাহিত একটি ভাইরাস। তখনো কিন্তু একজনও ভারতীয় এই ভাইরাসের সংক্রমিত হয়নি।বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সংক্রমণের খবর আসতে শুরু করেছে।পাতি পাব্লিকের মনে প্রশ্ন কি জাগে না, আচ্ছা আমরা কি তখন থেকেই এই ভাইরাসের মোকাবিলা করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতাম না? ফেব্রুয়ারিতে আমরা কি করেছি তবে!জানুয়ারি থেকেই দিল্লি বিধানসভার ভোটের ভটভটি স্টার্ট হয়ে গেছে।সেখানে ৭ ফেব্রুয়ারিতে ভোট হয়েছে আর ১০ ফেব্রুয়ারি তার ফল ঘোষণা হয়েছে। তার আগে তো আমরা কাশ্মীর ও এন আর সি ও সি এ বি, পরে সি এ এ নিয়ে চরম ব্যস্ত থেকেছি। সারাদেশে আগুন জ্বালিয়ে নেভানো তো আর কম কাজ নয়!প্রধানমন্ত্রীই তো তার টিভি বক্তৃতায় বললেন, এই করোনাও আগুনের মত ছড়ায়। তো তখন যদি একটু বলে দিতেন, মিত্রদের, ভাইবোনদের, দেশবাসীদের তাহলে তো আর আজ এই দিন দেখতে হতো না!তখন আমাদের
দেশের মানুষ একদল সেসবের পক্ষে গলা ফাটিয়েছে তো আর এক দল বিপক্ষে গলা বা ঘণ্টা ফাটিয়েছে। নেতা-নেত্রিরা সব জনসভায় জনসভায় মিত্রদের, ভাইবোনদের আশার বাণী শুনিয়েছেন।একটা পাতি ভাইরাস নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো সময় তাদের কারো ছিলো কি? জানিনা সেই সময়ের মধ্যে এবিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যস্তরে নীতিনির্ধারকেরা কোনো নীতি তৈরির জন্য কোনো সভা করেছেন কি না! আজ দেশের ১৩৫ কোটি মানুষকে যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তার কি তবে কোনো দরকার পড়তো!হ্যাঁ,মাত্র ০.০৫% লোককে এয়ারপোর্টে যদি থামানো যেত, তাহলে কি আজ এই উন্নয়নের আচ্ছা দিন আসতো?

একুশ দিনের এই তো সবে দুদিন মাত্র অতিক্রান্ত।
সকালে পড়িমরি করে খাবার সংগ্রহ করে মানুষ যখন ঘরে বসে বসে সময় কাটাচ্ছেন তখন পাতি পাব্লিকের মনে এসব প্রশ্ন না ওঠাই স্বাভাবিক। রেশনটা ঠিকঠাক মিলে গেলে প্রতিশ্রুতির টাকাটা অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট হয়ে গেলে আগামী দশবছর আবার তাদের আমরা মাথায় করে রাখবো। তেনারা তো মানুষ নন সাক্ষাৎ ভগবানের অংশ। কিন্তু এই যে দুঃসহ সময়ে তেনারা ছাড়া তো দেশে আর কোনো মন্ত্রী-সান্ত্রি নেই!
সুখটানের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে পাতি পাব্লিক ভাবে,বিড়ির দামও শালা বাড়তি! আলু তো টঙে উঠে বসে আছে,গমের ট্রাক নাকি আজ ঢুকবে!
মা-বাবার আটাটা হলে আর ইসবগুল লাগে না, নাহলে আটা কে কিনতো!রেশনে একহপ্তার দুটাকার চাল, আবার খোকার ইস্কুলেও দুকেজি চাল ও আলু পেয়েছে। কদিন তো চলবেই। দেখা যাক। তারপর কীভাবে কী হয়!
আজ এই লেখার সময় যে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আজ সাতশো ছাড়ালো, সেরে উঠলেন ৬.২%, প্রাণ গেল ১৬জনের। এই সাতশোর মধ্যে পাতি পাব্লিক কজন আছেন! একজন পরিচারিকা অসুস্থ হয়েছিলেন কোলকাতার পণ্ডিতিয়ায় ওয়েসিস এপার্টমেন্টে। তিনি কেমন আছেন এখন? রাষ্ট্রের পরিসংখ্যানে ঠিক তথ্য দেখানো হচ্ছে তো?১৩৫ কোটি মানুষের দেশে সাতশো সংখ্যাটা কিছুই নয়। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলিতে আক্রান্ত ও মৃত মানুষের পরিসংখ্যানের নিরিখে এই সংখ্যা তো কিছুই না।

আমাদের দেশের চিকিৎসকরা বলছেন,আগামী চার-পাঁচ দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোয়ারান্টাইন ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। লকডাউন ছাড়া গতি নেই। গরীব মানুষের স্বার্থে কেন্দ্র সরকার এক লাখ সত্তর হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন এই করোনার দিকে তাকিয়ে। আমাদের দেশে চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই। চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সংক্রমণ ঠেকানোর ব্যবস্থাও তেমন নেই । নেই, নেই, নেইয়ের তালিকা দীর্ঘ। মানুষের সেবার কাজে যারা যুক্ত সেই স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য কেন্দ্র সরকার ৫০ লক্ষ টাকার বিমার ঘোষণা করলেন আজই।

টিভিতে পাতি পাব্লিক মুগ্ধ চোখে দেখলো, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সোশ্যাল ডিস্টেন্স বজায় রাখার জন্য রাস্তা থেকে আধলা ইট দিয়ে কীরকম গোলদাগটা আঁকলেন! সেই গোল দাগটা যদি পাতি পাব্লিক, দামি পাব্লিক সবাই মনে রাখতে পারেন তবে আমরা কি এই যুদ্ধ জয়ী হতে পারবো না! আমাদের ঢাল নেই, তরোয়াল নেই কিন্তু আমদের নিধিরাম সর্দারের ঐতিহ্য আছে। পারতে তো হবেই।শহরে বস্তির ভেতরে কিন্তু জীবন থেমে নেই! ছোট্ট একটুকরো ঘরে গাদাগাদি করে থাকা যায় কতক্ষণ!তারওপর কাজ নেই। বিনোদন নেই।আড়াল দেখে যে যেখানে পারছে বসে পড়ছে তাস নিয়ে। চার থেকে আট জন খেলছে, দর্শক সংখ্যাও তাই। কীকরা যাবে! ওরা যে সোশ্যাল ডিস্টেন্স জানে না!
হোয়াটসঅ্যাপে আজ আবার একটি মেসেজ পেলাম, জানি না এটায় আবার কি কি ভুল আছে! ঐযে নেট দুনিয়ায় চলছে মিথ্যা, ভুল তথ্যের একটা প্লাবন।পাতি থেকে হাতি সব পাব্লিক না জেনে, না বুঝে সেসব শেয়ার করে চলেছেন নিরন্তর। সাবধান থাকতে হবে শুনছি কিন্তু কীভাবে? ইউ এন ও-র লোগো দিয়ে, হু-এর লোগো দিয়ে তৈরি হচ্ছে মিথ্যা খবর। তাদের লাইক চাই, ভাইরাল নামের ভাইরাস তাদের যে বড্ড প্রিয়!
আসুন পড়ে নিই সেই মেসেজটি।
“10টি মিথ্যা সংবাদ থেকে সাবধান থাকুন –
1:- অনেক লাশের সাথে ইতালি শহরের ছবি।
সত্য – একটি চলচ্চিত্র থেকে নেওয়া একটি দৃশ্য।
2:- 498 / – জিও বিনামূল্যে রিচার্জ করুন।
সত্য – সংস্থাটি এ জাতীয় কোনও দাবি করেনি।
3:- লোকেরা সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে এরকম একটি ছবি।
সত্য – ২০১৪ সালের একটি শিল্প প্রকল্পের চিত্র ।
4:- ডাঃ রমেশ গুপ্তের বই প্রাণী বিজ্ঞানে করোনার চিকিৎসা হয়।
সত্য হ’ল হয় না।
5:- ডাঃ নরেশ চৌহান জাতীয় জরুরি অবস্থার আবেদন করেছেন।
সত্য – ডঃ চৌহান কোনও আবেদন করেননি।
6:- ১৩৪ জন ভুক্তভোগীর চিকিৎসার পরে সংক্রমণে পড়ে যাওয়া এমন এক দম্পতির ছবি।
সত্য – ছবিটি কোনও চিকিৎসক দম্পতির নয়। বিমানবন্দরে এক দম্পতির ছবি।
7:- কোভিড 19 করোনার ওষুধের ছবি।
সত্য – এটি কোনও ওষুধ নয়, এটি একটি পরীক্ষার কিট।
8:- 12 ঘন্টা পর্যন্ত করোনার ভাইরাসের জীবন থাকে।
সত্য – 3 ঘন্টা থেকে 9 দিন।
9: – রাশিয়ায় – 500 সিংহ রাস্তা।
সত্য – একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্য।
10:- ইতালির কফিনের ছবি।
সত্য – এটি একটি 7 বছরের পুরনো ঘটনার চিত্র, এটির করোনার সাথে কিছুই সম্পর্ক নেই।”
কেউ কি আট নং তথ্যটি সম্পর্কে একটু আলোকপাত করবেন? প্লিজ….

(চলবে)

(তাং ২৬/০৩/২০২০, সময় রাত ১০-৩০ মিনিট)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।