• Uncategorized
  • 0

বিশ্ব কবিতা দিবসে শর্মিষ্ঠা সেন

অনুক্ষণ 

প্রিয় বাবা,
দেখতে দেখতে দশ বছর পার
সেদিন চলে যাবার আগে বলেছিলে,
“দেখিস,আমি ঠিক ভালো হয়ে যাবো ৷”
বাবা, তুমি ঠিক মোটেও বলোনি
একসময় প্রদীপের তেল ফুরিয়ে এসেছিল
নিভে গিয়েছিল শেষমেষ
সলতে পোড়া, কালো প্রদীপের বুক আমি দেখিনি
মনে রেখেছি, ” ঠিক ভালো হয়ে যাবো ৷”
তাই  আমার সাথে আজও ছায়ার মতো ৷

দীঘির জলে রোদ্দুরের ঝিকিমিকি তারা ,
বাবা, এখনও গুনি জানো ? আর
যেখানে কচুরিপানা ভাসে , ফুল দেখি অনিমেষ ৷
তুমি বলতে  ‘কচুরিপানার ফুল খুব সুন্দর ‘
আমি বলি সবচেয়ে সুন্দর অথচ কেমন অকুলীন  !
হালকা বেগুনীর মাঝে হলুদ ছিটে পানাফুল তোমার স্নেহের মতোই নরম ৷

ছুটন্ত রেলগাড়ী থেকে যখন গাছপালা দেখি ,
পাশে বসে তুমি এখনও কানে কানে বলো ,  ‘মানি, গাছগুলো কিন্তু ছুটছে না পাল্লা দিয়ে ৷’
খোলা দরজার সামনে দাঁড়ালেই ,
‘ একদম দরজা থেকে মুখ বার করবে না ৷’
সিগন্যাল ,ল্যাম্পপোষ্ট সরে সরে যায় …. স্টেশনের নামটাও ৷
জংশনে বুড়ো বটগাছ , গোটা ছয় , যেন শামিয়ানা, অর্কিড গায়ে নিশ্চুপ – ওদের দেখিয়ে বলতে,
‘এদের বয়স প্রায় একশত’ , মনে পড়ে বাবা ?

রিক্সায় বসে ধরে থাকা আর নিরন্তর প্রশ্নোত্তর ?
এখনও করি বাবা , জানো ? মনে মনে….
ঐ যে বালির ঢিপিতে সদ্য চোখ ফোঁটা বাচ্চা কুকুরেরা শীতে জুবুথুবু , দেখলে মনে পড়ে , কেমন তুমি আমার গায়ে চাদর টেনে দিতে !
এখনও তেলেভাজা কেনার সময় –
‘কখনও খেয়োনা, ঐ তেলগুলো বিষ হয়ে যায় পুড়ে পুড়ে ৷’
রাগ কোরো না ! খাইনা ওসব ! শুধু কখনও খুব লোভে দু একটা …..

রাস্তায় কল খোলা পেলে ছুটে যাই
তুমি বলতে ‘পৃথিবীটা কংক্রীটে মুড়ে দিল…জল থাকবেনা একদিন ‘ তোমার মতো করে ভাবার মানুষ চারপাশে কই আর !
‘বুড়ো ভিখিরিকে পয়সা দিওনা , মুড়ি দিয়ে এস ‘
আজও রাস্তায় পয়সা চাইলে বিস্কুট দিই, কী জানি , যদি সত্যিই এর পয়সা কেউ কেড়ে নেয় !

হিসেব করলে বছর দশ …..অথচ কেউ জানেনা, তুমি আমার সাথে সবসময়
ঘরে বাইরে, পথে ঘাটে
আমার আঙুল তোমার হাত ধরে থাকে আজও ৷

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।