• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে বিতস্তা ঘোষাল (পর্ব – ৫)

কু ঝিক ঝিক দিন

৫.

প্রতিটি মানুষের জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা ঘটার জন্য কোনও আগাম নোটিশ ছিল না।ফলে ঘটনাগুলো ঘটলে কি করতে হয় বা কি করা উচিত তা নিয়ে পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া হয় না।আর তা হয় না বলেই অনেক অনেক দৃশ্যাবলী কেবল মনের গভীরে থেকে যায়। দিনের আলোয় সেগুলোকে মেলে দেখা হয় না।রোদ জল উষ্ণতা শীত বসন্ত শরত কোনোটাই সেই সব বিষয়গুলোকে স্পর্শ করতে পারে না।শুধু যে মুহূর্তে তারা আসে নীরবে ভাসিয়ে দিয়ে যায় । তারপর ধীরে ধীরে সেখানে পলি জমে।হঠাৎই একদিন সেই পলির মধ্যে থেকেই ফল্গুধারা বইতে থাকে ।এতদিন ধরে জমে থাকা কথার স্তূপ বেরিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় ।প্রশ্ন করে , সব ঠিক চলছে তো!
এই যেমন আমার কথাই বলি।এই দীর্ঘ জীবনে কত কিছুই তো দেখলাম।কত চরিত্রর মুখোমুখি দাঁড়ালাম।তাতে যেমন ধূসর শেড আছে, তেমনি সাদা ও আছে ।আবার সাদা কালো মানে ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট কম্বিনেশনও রয়েছে ।কখনো কখনো সেই সব ঘটনা , চরিত্র এমন ভাবে হাতছানি দেয় তাদের সে ডাক উপেক্ষা করতে পারি না। মনে পড়ে এই তো সেদিন সিঁথির বাড়ির একতলায় জানলার ধারে বসে পর্দা ফাঁক করে রাস্তা দেখছিলাম ।না, শুধু রাস্তা দেখছিলাম বললে মিথ্যে বলা হবে ।বাড়ির পিছনে রায়পাড়া কোয়ার্টারের একটি ছেলেকে দেখছিলাম ।সে আমাদের বাড়ির পাঁচিল টপকে জানলার পাশ দিয়ে বড় রাস্তায় উঠলো।তার কাঁধে গিটার ঝুলছে ।আমি যখন ছাদে যাই তার গিটার বাজানো শুনি।
বেশ হ্যান্ডসাম সে।আমাদের স্কুলের অনেক বন্ধুই তাকে পছন্দ করে।আমারও তাকে দেখতে ভালোই লাগত।
কিন্তু একদিন যখন সে আমাকে প্রপোজ করল, আমার সব ভালো লাগা হঠাৎ করেই মিলিয়ে গেল।কেন আর তাকে ভালো লাগলো না তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারব না, কিন্তু তাকে দেখার যে টান অনুভব করতাম তা যেন বুদবুদের মত উবে গেল।
তারপর কতবার কত জায়গায় দেখেছি তাকে।কখনো কাঁধে গিটার, কখনো রিকশায়, কখনো বা বাইকে।সে
তাকায়, আমিও তাকাই ।অথচ বুকের ভিতরে যে মাদল বেজেছিল একদিন, তা আর বাজে না।
এমনি করেই তো কত বছর কেটে গেল, কত মুখ মুছে গেল, সেখানে নতুন মুখ এলো. . .
এতদিনে বুঝেছি , প্রেম ভালোবাসা সম্পর্ক আসলে মায়া।আমাদের পুরো জীবনটাই এক মায়া।চারদিকে ছড়িয়ে নানান উপকরণ ।সেগুলোর টান উপেক্ষা করা দুষ্কর ।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে চারদিকে আত্মীয় স্বজন প্রিয় মুখেদের মৃতদেহ দেখে অর্জুন যুদ্ধ করবে না বলে কৃষ্ণের কাছে আকুতি জানাচ্ছে।আর কৃষ্ণ বলছে, চারপাশে পড়ে থাকা কেউ তোমার নয়, কিছুই তোমার নয়।এমনকি তুমিও নিজের নও।সবই এক মায়া।
সবাই এই মায়া নিয়েই বেঁচে থাকি।
মায়ায় বেঁচে থাকা , এমনি এমনি বেঁচে থাকা ।যতটুকু বাঁচা ততটুকুই সম্পর্ক ।
ওই যে শববাহী গাড়ি ফুলে ফুলে ঢেকে নিয়ে চলেছে . . . গাড়িতে সে একাই. . তার পরে একা একাই চিতায়, কবরে. . .
একার জার্নিটা তখন থেকেই তো শুরু. .
কিংবা শেষ. .
জীবনচক্র চলতেই থাকে . . আবার জন্ম আবার মৃত্যু . . .
সবই কেবল মায়া. . .

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।