• Uncategorized
  • 0

প্রবন্ধে স্নেহাশীষ চক্রবর্তী

সেচ্ছা অবসর জীবন-যাপন গত এক দশক।

চলো কবিতায় বলি

কবি কবিতা লেখেন না, কবিতা লিখব মনে করলেই কি আর কবিতা লেখা সম্ভব, মনে হয় না । সে ক্ষেত্রে কবিতার যে গ্রহণযোগ্যতা সারা পৃথিবী জুড়ে আছে সেটাই হয়তো থাকত না । আসলে পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আসেন যাদের চিন্তন, অভিজ্ঞতা, বোধ থেকে এমন কিছু নির্যাস বেরিয়ে আসে এবং সেটি যখন ছান্দসিক ভাবের প্রকাশ ঘটায় সেটিই আমাদের কাছে হয়ে ওঠে কবিতা । কবি বা ব্যক্তির মননে যে চিত্রকল্পের জন্ম হয় তার অনুভূতি তিনি পৌঁছে দেন সাধারণ মানুষের কাছে সাধারণ মানুষের কল্পনাকে আরো বিস্তার ঘটানোর জন্যই । ভাষা আবিষ্কারের পরে এই কাব্যধারাই পৃথিবীতে বিচরণ করেছে প্রথম থেকে – আর ভাষা যখন সাহিত্যের রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে তখন কবিতা ও তার কাব্যিক প্রকাশ মানুষকে মোহিত করেছে ক্ষণে ক্ষণে । যেখানে চিত্রকল্প হয়তো ছোটো বা বৃহৎ সেটি কিন্তু পাঠকের বা সাধারণ মানুষের বিচারে আসেনি প্রথমেই – পাঠকের বা সাধারণ মানুষের কাছে প্রথমেই যেটি বিচার্য মনে হয়েছে সেটি হল, সময় স্থান কালের নিরিখে কোনো কবির ভাবপ্রকাশ যখন সাধারণের সীমা অতিক্রম করে অসাধারণত্বে পৌঁছায়, কালের সীমাকে অতিক্রম করে কালোত্তীর্ণ হয়ে ওঠে – তখন আক্ষরিকভাবেই কবিতার সংজ্ঞা নিরূপিত হয় । অর্থাৎ, কবিতাকে কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞার মধ্যে সীমাবদ্ধ করা যায়নি আজও । সৈয়দ শামসুল হক বলেছেন, ”কবিতা হচ্ছে সর্বোত্তম ভাবের সর্বোত্তম শব্দের সর্বোত্তম প্রকাশ” । আবার শেলী বলেছেন, “কবিতা হলো পরিতৃপ্ত এবং শ্রেষ্ঠ মনের পরিতৃপ্তি এবং শ্রেষ্ঠ মুহূর্তের বিবরণ।” কবিতার সংজ্ঞা নিয়ে যত বিরোধই থাক না কেন, কবিতা যে মননের সঙ্গে মননের, চেতনার সঙ্গে চেতনার এক সুখস্পর্শ, যা শুধুই অনুভূতির – হয়তো অনেকক্ষেত্রে বাহ্যিক প্রকাশ ঘটেই ওঠে না । একটি কবিতার সৃষ্টি অনেকক্ষেত্রেই মনে হতে পারে যেন একটি কালের সৃষ্টি হল, যে কাল চিরবহমানা নদীর মতোই চিরবিরাজমান থাকবে আমাদের সকল প্রজন্মের কাছেই – ভালো অনুভূতি কখনো কি হারিয়ে যায় ? যায় না । কবিতাও ঠিক তেমনই – সে রেখে যায় এমন এক অনুভূতি যে শুধুই আত্মকে সন্তুষ্ট করতেই থাকবে প্রতিনিয়ত । সমকালকে অতিক্রম করে পরবর্তীকালেও কবিতা রয়ে যায় চির আয়ুষ্মান চিরযুবার মতো সবুজ ।
আজ থেকে আশি লক্ষ বছর আগে এপ বা শিম্পাঞ্জীর মতো কিছু প্রাণী আফ্রিকার বনাঞ্চলে বসবাস করত, তারা নিজেদের মধ্যে কুড়ি-ত্রিশটি শব্দের সঙ্গে নিজেদের ভাবের আদানপ্রদান করত । ভাষার প্রত্যক্ষ লিপির আকারে প্রকাশ আমাদের কাছে প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণানুসারে । কিন্তু নৃবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের কথ্য ভাষার উৎপত্তি আজ থেকে চল্লিশ হাজার থেকে ষাট হাজার বছরের পুরনো, আর সেটি ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’-এর ( মানুষের প্রথম ভাষা ) । যেমন মানুষ হাতিকে হাতি বলেছে বাঘ নয়, বাঘ বললে কিন্তু আজকেও হাতি আমাদের কাছে বাঘ নামেই পরিচিত থাকত । মানুষের ভাষা এত পুরোনো হলেও বাংলা ভাষা কিন্তু মাত্রই ইতিহাস ঘাটলে তেরোশো বছরের একটি ইতিহাস পাওয়া যাচ্ছে ।
কবি ও কবিতার সম্পর্ক নিয়ে বলতে গেলে কবি অমিতাভ পালকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা যেতে পারে যে, কবিতা হল দীর্ঘ দাম্পত্যের সেই সুপরিচিত প্রশ্ন – আপনি কেন আপনার এত পুরোনো ও বুড়িয়ে যাওয়া সঙ্গীর জন্য এত কিছু করেন ? আসলে উত্তর কিছুই আসে না । হয়তো উত্তর নেই বা হয়তো উত্তর একটাই, আসলে কবি ও কবিতার সম্পর্ক বহু পুরোনো দম্পতির মতোই – কিছু অনুভূতি ও কিছু না বলা, না চাওয়াকেও হাতের সামনে পৌঁছে দেওয়া । আসলে কবিতা হল বস্তুপুঞ্জের আর্তনাদের সশব্দ এক বহিঃপ্রকাশ । কবিতা আমার মনে হয় –
“নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্ৰাণি নৈনং দহতি পাবকঃ।
ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ ॥
অচ্ছেদ্যোহয়মদাহ্যোহয়মক্লেদ্যোহশোষ্য এব চ । …” ( শ্রীমদ্ভগবদগীতা – ২ য় / ২৩ -২৪ )
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।