(ডাইনিং টেবিলে সকলে) প্রীতি- উফফ, আজ সারাদিন যা কাটলো না! জাস্ট অসাম! পরিমল- তা বটে, অনেকদিন পর খুব মজা হলো। পরমা- মজা তো আমারও হয়েছে, তবে সেটা টের পাবো কাল সকালে কোমর ব্যথায়। উফফ, এই বয়সে এতো ঘোরাঘুরি পোষায়! বললাম তোরা যা, আমরা বুড়োবুড়ি বাড়িতে থাকি… জুঁই- না না মা, কী যে বল! তোমরা না গেলে এত আনন্দ হতোই না! প্রিয়ম- বাবা, একটা কোশ্চেন… প্রসূন- হ্যাঁ বাবা, বল। প্রিয়ম- আচ্ছা বাবা, ঐ যে তখন পেঙ্গুইন দেখালে… প্রীতি- পেঙ্গুইন! চিড়িয়াখানায় পেঙ্গুইন কোথায় পেলি রে! প্রিয়ম- না পিসি, বাবা দেখিয়েছে! ও বাবা, দেখালে না? সেই যে, টাইগারের খাঁচার দিকে যেতে গিয়ে… প্রসূন- ওহো, ইয়েস! আরে, ওটা একটা ডাস্টবিন, যার শেপটা পেঙ্গুইনের মতো! প্রিয়ম- হ্যাঁ ওটাই। আচ্ছা বাবা, রিয়েল পেঙ্গুইন কতো বড় হয়? প্রসূন- রিয়েল পেঙ্গুইন? মানে, ছোটবেলায় খুব ছোট থাকে, পরে একটু বড় হয়… জুঁই- কেন ভুলভাল শেখাচ্ছ ওকে? জানো না সেটা বলে দিতেই পারো! প্রিয়ম, তোমায় চিলড্রেন্স এন্সাইক্লোপিডিয়া কিনে দিয়েছি যে, নিজেই খুঁজে নিও! প্রীতি- আহা বৌদি, ছেলেটা একটা কোশ্চেন করলো… জুঁই- একটা নয় গো, সেই তখন থেকে বোধহয় একশোটা কোশ্চেন করলো! শুধুশুধু… পরমা- আহা, ওরও তো ইচ্ছে করে বাবাকে প্রশ্ন করতে! প্রসূন- হ্যাঁ, তাছাড়া আজ ওরই জন্মদিন! করুক না কোশ্চেন! পরিমল- দেখেছিস প্রসূন, প্রিয়মের মনে কতো প্রশ্ন জমে থাকে! নেহাত তোকে পায়না কাছে… এবার থেকে ওকে একটু সময় দিস বাবা! জুঁই- হ্যাঁ বাবা, আপনি বলুন তো! আমি বলে বলে হেরে গেছি! প্রসূন- ওক্কে, প্রমিস! এখন থেকে ওর প্রতিবছর জন্মদিনে আমরা একসঙ্গে বেড়াতে বেরোব। প্রীতি- ওঃ নো দাদা, ইউ মীন, বছরে একদিন মাত্র তুই প্রিয়মের সঙ্গে কাটাবি? প্রসূন- আরে না না, আমি সেটা বলিনি… জুঁই- আচ্ছা, এখন বলো, আজ যে ছেলেটা স্কুল ছুটি নিল, তাঁর লীভ লেটারটা কে লিখবে, তুমি না আমি? প্রসূন- দেখেছ! এই হচ্ছে দিদিমনি! ঠিক মনে রেখেছে যে আজ ছেলে স্কুল কামাই করেছে! জুঁই- শুধু দিদিমনি নয় স্যার, মায়েদের এগুলো খেয়াল করতেই হয়। তাহলে তুমি লিখছ তো? প্রসূন- আরে, তুমিই তো প্রতিবার লেখ! এবারও লিখে দাও, ঐ পেট ব্যথা, মাথাব্যথা কিছু একটা হয়েছিল! জুঁই- তার মানে! মিথ্যা বলব কেন! প্রসূন- একি! তাহলে বলবে যে জন্মদিন তাই বেড়াতে গেছিলাম! তা হয় নাকি! প্রীতি- কেন হয় না দাদা, হোয়াটস রং! প্রসূন- ম্যাডাম, এইসব ট্রিভিয়াল কারণে ছুটি নিলে প্যারেন্টদের প্রচুর কথা শুনতে হয়। আর ওদের প্রিন্সিপাল এমন কড়া, যে… জুঁই- সে যাই বলো, আমি মিথ্যে কারণ দেখাতে পারব না। প্রসূন- ওহ কাম অন, এগুলোকে মিথ্যা বলে না। ইনোসেন্ট লাইজ। জুঁই- লাই আবার ইনোসেন্ট কী গো! লাই হলো লাই। প্রীতি- শোন দাদা, তুই কি অফিস ছুটি নিলে এইরকম ভুলভাল এক্সক্যুজ দিস? প্রসূন- আরে আমাকে অত ডিটেইল জানাতে হয় না। ছুটি নিচ্ছি, ব্যস। সিএল তো আমার হকের! জুঁই- স্কুলে তো সিএল নেই, তাই ছুটি নিতে হয়, আর তার কারণটাও লিখে দিতে হয়।
পরমা- তা হ্যাঁরে প্রসূন, অকারণে সুস্থ ছেলেটাকে অসুস্থ বলবি! প্রসূন- আচ্ছা, তাহলে বলো বাড়িতে গেস্ট এসেছিল, বা অন্য কিছু… জুঁই- আমি সত্যিই বুঝতে পারছিনা, জন্মদিন বললে অসুবিধেটা কোথায়! প্রীতি- রাইট! পার্সোনাল সেলিব্রেশন থাকতে পারে না কারো! প্রসূন- না রে প্রীতি, ওদের রুল হলো স্কুলেই জন্মদিন পালন করতে হবে। সব বাচ্চাই যদি নিজেদের জন্মদিনে ছুটি নেয়, তাহলে… জুঁই- বাবা, আপনি কিছু বলছেন না কেন? পরিমল- আমি একটু অন্য কথা ভাবছিলাম। এই যে প্রসুন একটু আগে বলল ‘ইনোসেন্ট লাইজ’, এটা খুব উড়িয়ে দেওয়ার কথা নয়। আমরা সকলেই হয়তো জীবনে এমন অনেক মিথ্যাই বলি, তাই না? প্রীতি- না বাবা, আমি মিথ্যা বলি না। প্রসুন- এটাই তোর একটা মিথ্যা কথা। স্কুলে পড়তে তুই মাঝেমধ্যেই টিফিন না খেয়ে পয়সা জমাতিস, আর মা কে বলতিস খেয়েছিস, মনে পড়ে? পরমা- সেকিরে, প্রীতি, তুই… প্রীতি- ওহ মা, কতোদিন আগেকার কথা ওসব… প্রসূন- আর এগুলো যদি মিথ্যা হয়, তাহলে জুঁইও অনেক মিথ্যা বলে। জুঁই- আমি! প্রসূন- ইয়েস ম্যাডাম, তুমি! আমি অফিসের লং ট্রিপে গেলে যতোবার কল করি, তুমি বলো ‘সবাই ভালো আছি!’, কিন্তু আমাকে ছাড়া ভালো থাকা কি পসিবল? সত্যি বলো! জুঁই- ধ্যাত, তুমি না, একটা… পরিমল- ভেবে দেখলে, আমরা সকলেই কিন্তু কিছু না কিছু মিথ্যা বলেই থাকি সারাদিন। তোর মা ও নিজের কষ্ট হলে চেপে থাকে, বোধহয় সব মহিলারাই এমন হয়… প্রীতি- আমি মোটেই চেপে থাকিনা, চেঁচামেচি করি। প্রসূন- তুমি এক্সেপশনাল কেস বোন আমার! পুরো অবতার! কোত্থেকে যে অবতীর্ণ হয়েছ! প্রীতি- দ্যাখো বাবা, দাদা আবার আমায় খ্যাপাচ্ছে! পরমা- আচ্ছা, তুমি কী কী মিথ্যা বলেছ বা বল শুনি? পরিমল- সে অনেক। স্কুল কলেজে তো ইয়ত্তা নেই, অফিসেও… পরমা- ওইজন্যেই ছেলেটাও শিখেছে। পরিমল- বোঝো! প্রসূন কি শুধু আমার একার ছেলে নাকি! আর তাহলেও, প্রীতি তো বললো ও মিথ্যা বলে না, তার ক্রেডিট বুঝি কেবল তোমার? পরমা- অবশ্যই আমার! ছেলেটা তোমার স্বভাব পেয়েছে, আর মেয়েটা আমার! পরিমল- বাঃ! এ তো ভালো বিচার! প্রসূন- মা, প্র্যাক্টিকাল হতে গেলে কিছু মিথ্যা বলা চলে। তবে তার জন্য যেন কারো ক্ষতি না হয় সেটা দেখতে হবে। চাণক্যই তো বলেছেন অপ্রিয় সত্য না বলতে, তার বেলা? প্রীতি- দাদা, ওটার কন্টেক্সট আলাদা। ভুলভাল রেফারেন্স দিস না প্লিজ! প্রসূন- আচ্ছা, তাহলে ঐ যে বলে, “একং সদ্ব্বিপ্রাঃ বহুধা বদন্তি”, মানে সত্য একটিই, তাকে ব্রাহ্মণেরা ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা করেন, তার বেলা? সেগুলো মিথ্যা নয়? এই যে প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যমে নিজেদের ইচ্ছামতো সমস্ত ঘটনা পরিবেশিত হয়, এগুলো মিথ্যা নয়? প্রীতি- দাদা, তুমি অধম, তাহা বলিয়া আমি উত্তম হইবনা কেন, এটা পড়িসনি? মিডিয়া ধান্দাবাজ, তাই সত্যকে নিজেদের সুবিধামতো ম্যানিপুলেট করে। তা বলে আমাদেরও কি সেটাই করতে হবে? পরমা- দ্যাখ প্রসূন, এখন যতো চাণক্যই দেখাস না কেন, মিথ্যে কোনোদিন জিততে পারেনা। যে কোন সম্পর্ক, যে কারো চরিত্রের মূলই হলো সত্য। পরিমল- আহা, বড় দামী কথা বললে গো! এভাবে তো কোনোদিন ভাবিনি আগে! পরমা- ভাবোনি, তো এখন ভাবো, আর ছেলেটাকেও ভাবাও। একটা মিথ্যে চাপার জন্য পরপর মিথ্যে বলেই যেতে হয়। পাপে পাপ বাড়ে বই কমে না। জুঁই- ঠিক বলেছেন মা! আপনার ছেলেকে নিয়ে আমার ততোটা চিন্তা নেই, কিন্তু আমাদের প্রিয়ম যেন কোনদিন সত্যিকথা বলতে ভয় না পায়, এটা আমাকে নিশ্চিত করতেই হবে! প্রিয়ম- আমি বুঝে গেছি মা, আমি কাল মিসকে কী বলব।
পরিমল- কী বলবে দাদু? প্রিয়ম- বলব, যে আমার জন্মদিন ছিল তো, তাই আমার বাবা আমাকে একটা গোটা দিন গিফট দিয়েছিল। সেই গিফটটা কাজে লাগাবার জন্য আমরা ফুল ফ্যামিলি কাল একসঙ্গে চিড়িয়াখানা বেড়াতে গেছিলাম। সায়েন্স সিটিও যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দাদু দিম্মা টায়ার্ড থাকায় যাওয়া হয়নি। জুঁই- না না, অতকিছু বলতে হবে না, শুধু বলিস বেড়াতে গেছিলি ফ্যামিলির সঙ্গে বার্থডে সেলিব্রেট করতে। গুড বয়। প্রসূন- আর তারপর যদি প্রিন্সিপাল আমাকে ডাকে, আমি কিন্তু যাব না, তুমি যেও, কেমন? প্রিয়ম- না বাবা, প্রিন্সিপাল কিছু বলবে না। লাস্ট উইকে উনি আমাদের শেখাচ্ছিলেন ফ্যামিলি বণ্ডিং কেন ইম্পোর্ট্যান্ট। আমি বলব, সেই বণ্ডিং বাড়াতেই আমি একসঙ্গে বেড়াতে গেছিলাম! তা ছাড়া, এবার অ্যাসাইনমেন্টে প্যারাগ্রাফ রাইটিং আছে ওয়ান ডে অ্যাট দ্য জু, সেটারও প্র্যাকটিস হয়ে গেল!! পরিমল- জ্জিও বেটা, তুমিই আমাদের নাম রাখবে দেখছি!
(সক্কলের হাসি!)