• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ১১)

এগারো

আর্যমা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরল। ওর স্পর্শে আন্তরিক উষ্ণতা অনুভব করলাম। কিছুক্ষন নষ্টালজিক আলাপচারিতার পর আমি সোজাসুজি আমার টপিকে চলে এলাম। সব কথায় ওকে ডিটেলসে বললাম, চুপচাপ মন দিয়ে ও সব শুনল। ওর কাছ থেকে একথা জেনে খুব নিশ্চিন্ত হলাম যে এখনও পর্যন্ত যে এরিয়ায় ঘটনাগুলি ঘটেছে সেটা আর্যমার এলাকার মধ্যেই পড়ে। আর্যমা আরও বলল, “ড্যুড আই হ্যাভ সাম কয়ারিজ”। আমি বললাম, “সিওর”। “ইউ ক্যান প্রসিড অ্যাজ ইউ লাইক। এই জন্যই তো তোর সঙ্গে দেখা করতে চাইলাম আমার মাথায় ভাবনা চিন্তা সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে। কোনো কিছু শেপে আনতে পারছি না”। আর্যমা জিজ্ঞাসা করল, “তুই কি সখের গোয়েন্দাগিরি শুরু করেছিস? তা না হলে এইভাবে ব্যাপারটার প্রতি লেগে রিলি কেন?”
আমি বললাম, “দেখ আমি আগা গোড়াই চিন্তাশীল। কিছুটা সন্দেহপ্রবণও। যতক্ষন না নিজেকে নিজে পুরো ব্যাপারটা বোঝাতে পারি ততক্ষণ  স্বস্তি পাই না। আমার অপরাধী ধরার কোন ইচ্ছা নেই। যদি আদৌ তেমন কেউ থেকে থাকে। শুধু নিজে পুরো ব্যাপারটা জানতে চাই যেহেতু আমি এর সঙ্গে কোনো না কোনও ভাবে জড়িত”। আর্যমা হেসে বলল, “হ্যাঁ জানি। জ্যাঠামো করা তো তার স্বভাব। চিরটাকাল নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অকলমন্দ লোক ভাবিস। অবশ্য আমরাও সবাই তাই ভাবতাম। তবে সেটা কলেজে পড়ার সময়। আসলে এই সব ব্যাঙ্কে ফ্যাংকে চাকরি না করে তোর আমাদের লাইনে আসা উচিত ছিল। ডোন্ট মাইন্ড, বাট আগেও আমি তোকে এই কমপ্লিমেন্ট দিয়েছি যে তোর মধ্যে কিন্তু একটা কোল্ড ব্লাডেড ক্রিমিনাল মাইন্ড আছে”। বলেই আর্যমা হো হো করে হেসে উঠে নিজের কোল্ড কফিতে একটা জব্বর চুমুক দিল। আমিও হাসলাম পুরানো আর্যমার ঝলক দেখে। এবার আর্যমা সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞাসা করল “আচ্ছা তোর সাথে থাকে যেই ছেলেটির কথা বললি, সে কে? ওকি বিশ্বাসযোগ্য? তোকে এত সাপোর্ট করছে কেন? মানে তোর সঙ্গে সঙ্গে সব জায়গায় কি করতে যায়? আর কোনো কাজ নেই ওর?” আমি বললাম, “না, না, ওকে নিয়ে চাপ নেই। আসলে ও খুব খামখেয়ালি টাইপের। এক্সাইটমেন্ট খুব ভালোবাসে। হয়তো অ্যাডভেঞ্চার বা থ্রিলের গন্ধ পাচ্ছে বলেই তৎপড়তা দেখাচ্ছে। ছেলেটা ট্যালেন্টেড আর খুব বুদ্ধিমান। আর সবচেয়ে বড় কথা আমার খুব নেওটা। মানে আমার ফ্যান বলতে পারিস”। আর্যমা হেসে বলল, “বাব্বা! একেবারে ফ্যান?” আমি হেসে বললাম, আরে ঠিক বোঝাতে পারলাম না তোকে। ছেলেটা যুক্তিবাদী তবে আমার যুক্তি এবং বিবেচনার কাছে হেরে গেছে নানা সময়ে। তাই এই বশ্যতা বা অ্যাডমায়ারেশন যা ভাবিস”।
আর্যমা এবার জিজ্ঞাসা করল, “ওই ধাঁধাটার কথা কাউকে বলেছিস আর? নাকি বাড়িতে এসেই প্রথম বললি?” আমি বললাম, “বাড়িতে এসেই প্রথম শ্রেয়ানকে বললাম। বাট, হিসাবমতো আগের দিন অলরেডি ডাকাতি হয়ে গেছে”। আর্যমা বলল, “তার মানে তোর অজ্ঞান অবস্থাতেই ওরা ইনফরমেশনটা পায়। হয়তো তোর থেকে অথবা অন্য কারও কাছ থেকে। আমার তো মনে হয় অন্য কোনো সোর্স থেকে সলিউশনটা পেয়েছে ডাকাতেরা। আবার তোকে যারা কিডন্যাপ করেছিল তারা আর যারা ডাকাতি করেছে তারা পৃথক দল বা লোকও হতে পারে”। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। জিজ্ঞাসা করলাম “লকার নাম্বারটা কত রে? আমার সঙ্গে মিলেছে?”
আর্যমা বলল, “একদম মিলে গেছে। লকারটা ছিল লেক গার্ডেনস-এর এক বাসিন্দার। নামটা সাম চোঙদার না কি যেন একটা। আমি অফিসে গিয়ে তোকে ডিটেল একটা রিপোর্ট স্ক্যান করে মেল করে দেব। তুই লেগে থাক। পুলিশ তো নিজের কাজ করবেই। পাশাপাশি তুইও লেগে থাক”। আমি বললাম, “ডেফিনেটলি। আর একটা ফেভার প্লিজ”।
আর্যমা মুচকি হেসে বলল, “বাইকটা তো? পৌঁছে যাবে তোর বাড়তি। শুধু পোস্টাল এবং ই-মেল অ্যাড্রেসটা কৃপা করে দিয়ে যান”। আমি সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়ালাম। আর্যমা আবার বলল, “চল তোকে লিফট দিয়ে দিই” আমি বললাম, “লাল বাতি গাড়ি তো? ক্ষ্যামা দে মা, আমার এগারো নাম্বার-ই বেঁচে থাকুক”। বেরিয়ে আসতে গিয়ে আরেকটা কথা মনে পড়ল। ঘুরে বললাম, “এই যে চাবিটা, বাইকের” ভাগ্যিস বেরোনর আগে শ্রেয়ানের কাছ থেকে বাইকের চাবিটা নিয়ে এসেছিলাম।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।