• Uncategorized
  • 0

অনুবাদ কবিতায় শৌভ চট্টোপাধ্যায়

শৌভ চট্টোপাধ্যায়ের (১৯৮৩—) জন্ম ও বেড়ে ওঠা হাওড়ার শিবপুরে। পড়াশোনার সুবাদে কিছুদিন লাখনৌ-তে বসবাস। এবং, বর্তমানে, কর্মসূত্রে দিল্লির বাসিন্দা। প্রায় দেড়-দশক যাবৎ কবিতা লিখছেন। কবিতা প্রকাশিত হয়েছে অনুবর্তন, কৃত্তিবাস, কৌরব, দাহপত্র, নতুন কবিতা, শুধু বিঘে দুই, যাপনচিত্র ইত্যাদি নানান পত্রপত্রিকায়। এ-যাবৎ প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চার—‘অনন্ত-র ঘরবাড়ি, হাতিঘোড়া ও অন্যান্য’ (২০০৯, ডি কোং), ‘মুনিয়া ও অন্যান্য ব্যূহ’ (২০১৩, নতুন কবিতা), ‘মায়াকানন’ (২০১৬, সৃষ্টিসুখ), এবং ‘নিঃশব্দে অতিক্রম করি’ (২০১৯, শুধু বিঘে দুই)। যুক্ত ছিলেন ‘অবসরডাঙা’ ও ‘ব্রজী’-নামক দুটি পত্রিকার সঙ্গেও।

আদাম জাগাইয়েভস্কি-র কবিতা

আদাম জাগাইয়েভস্কি-র জন্ম ১৯৪৫ সালে, উক্রাইনের ল্‌ভিও (Lvov) শহরের এক পোলিশ পরিবারে। সময়টা ছিল ঘটনাবহুল, এবং মধ্য-ইয়োরোপ ছিল, বিশেষ করে, সেই সময়কার বিভিন্ন নাটকীয় ঘাত-প্রতিঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৪৪ সালে, সোভিয়েত লাল ফৌজ, নাৎজি জার্মানির কাছ থেকে পোল্যান্ডের বেশ কিছু অংশ ছিনিয়ে নেওয়ার পর, যখন সোভিয়েত উক্রাইনে বসবাসকারি প্রায় এগারো লক্ষ পোলিশ-ভাষাভাষী মানুষকে রাতারাতি বিতাড়িত করে পোল্যান্ডে চলে যেতে বাধ্য করে, তখন জাগাইয়েভস্কি পরিবারও, নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে, দক্ষিণ পোল্যান্ডের সাইলেসিয়া অঞ্চলে, গ্লিভিৎজা (Gliwice) শহরে এসে আশ্রয় নেয়। আদাম জাগাইয়েভস্কির পুরো ছেলেবেলাটাই কেটেছে এই গ্লিভিৎজা শহরে। এখান থেকেই, ইশকুলের পাট চুকিয়ে, তিনি পাড়ি দেন ক্রাকোভ (Krakow) শহরে, ইয়াগিয়েলোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে মনস্তত্ত্ব ও দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করবেন বলে। ১৯৬৭ সালে, জাগাইয়েভস্কির প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় জেইচে লিতেরাৎস্কি পত্রিকায়।
যেসব লেখকরা, পোলিশ সাহিত্যে “নবতরঙ্গ” বা “প্রজন্ম ‘৬৮”-নামক সাহিত্য-আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন, জাগাইয়েভস্কি ছিলেন তাঁদেরই একজন। সাহিত্যে কমিউনিস্ট ভাবধারা ও অনুশাসনের বিরোধিতা করা, এই আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল। জাগাইয়েভস্কির প্রথমদিকের কবিতায় এই প্রতিবাদী স্বরের উপস্থিতি বেশ স্পষ্ট টের পাওয়া যায়। যদিও, পরবর্তীকালে, তাঁর লেখার ধরণ ও অভিমুখ, দুই-ই পালটে গিয়েছে। মাঝে, পোল্যাণ্ডের কমিউনিস্ট সরকার, তাঁর লেখা সে-দেশে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৮২ সালে, জাগাইয়েভস্কি তাঁর দেশ ছেড়ে, সস্ত্রীক, পারী শহরে স্বেচ্ছানির্বাসন গ্রহণ করেন। যদিও, কুড়ি বছর পর, ২০০২ সালে, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী পুনরায় পোল্যাণ্ডে ফিরে যান।
এই মুহূর্তে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীবিত কবিদের মধ্যে, জাগাইয়েভস্কি একজন। ২০০৪ সালে তিনি পেয়েছেন নয়স্টডট সাহিত্য পুরস্কার, গুণমানের বিচারে যাকে প্রায়শই নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও, গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজ, হাইনরিখ মান পুরস্কার, প্রিন্সেস অফ আস্তুরিয়াস পুরস্কার-সহ নানান আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন জাগাইয়েভস্কি। কবিতার সংকলন ও নির্বাচিত কবিতা মিলিয়ে, তাঁর এযাবৎ প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চোদ্দো। এছাড়াও রয়েছে গদ্য ও নিবন্ধের বই। বর্তমান অনুবাদের কবিতাগুলি বেছে নেওয়া হয়েছে তাঁর Eternal Enemies: Poems (২০০৮) বই থেকে। জাগাইয়েভস্কির অধিকাংশ কবিতার মতোই, এ-দুটিও ইংরিজিতে অনুবাদ করেছেন ক্লেয়ার কাভানা।

ব্লেক

আমি উইলিয়াম ব্লেক-কে লক্ষ করি, প্রতিদিন গাছের মাথায়
যিনি দেখতে পেতেন দেবদূতদের
আর ঈশ্বরের সঙ্গে যাঁর নিয়মিত মোলাকাত হত নিজের ছোট্ট বাড়ির
সিঁড়িতে, আর ঘুপচি গলির অন্ধকারেও যিনি খুঁজে পেতেন আলো—

ব্লেক, যিনি মারা গিয়েছিলেন
গান গাইতে-গাইতে
বেশ্যা, নৌ-সেনাপতি আর ভোজবাজির আড়ত
সেই লণ্ডন শহরে,

উইলিয়াম ব্লেক, খোদাইশিল্পী, যিনি অনেক পরিশ্রম করেও
সারাজীবন দারিদ্র্যে কাটিয়েছেন, কিন্তু হতাশায় ডুবে যাননি,
সমুদ্র আর তারা-ভরা আকাশের মধ্যে যিনি
খুঁজে পেয়েছেন জ্বলন্ত সব চিহ্ন আর আখর,

কখনও যিনি আশা ছাড়েননি, কেননা আশা তো
নিঃশ্বাসের মতোই, প্রতিমুহূর্তে নতুন করে জন্মায়,
আমি দেখতে পাই তাদের, যারা ঠিক তাঁর মতোই হেঁটে যাচ্ছে ধূসর রাস্তা দিয়ে,
ভোরের গোলাপি লাল অর্কিডের দিকে।

সেইসব গ্রীকরা

যদি সম্ভব হত, তো আমি গ্রীকদের মধ্যেই জীবন কাটাতুম,
কথা বলতাম সোফোক্লিসের ছাত্রদের সঙ্গে,
আর শিখে নিতাম গোপন রহস্যের অনুষ্ঠানগুলো,

কিন্তু আমি যখন জন্মেছিলাম তখনও সেই দাগী
জর্জিয়ান লোকটা বেঁচে ছিল আর দিব্যি রাজত্ব করছিল,
তার নির্মম হুকুমবরদার আর তত্ত্ব-টত্ত্ব নিয়ে।

সে এক সময় ছিল, স্মৃতি আর বিষন্নতার,
মাপা-জোকা কথা আর নৈঃশব্দ্যের;
আনন্দ অল্পই ছিল—

যদিও কয়েকটা পাখি, কয়েকজন শিশু আর গাছ
এসবের কিছুই জানত না।
যেমন ধরো, আমাদের সামনের রাস্তার ওই আপেল গাছটা

এপ্রিল মাস এলেই, প্রফুল্লচিত্তে মেলে ধরত
তার শাদা-শাদা ফুলগুলো আর আত্মহারা হয়ে
হাসিতে ফেটে পড়ত।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *