• Uncategorized
  • 0

এই সময়ের লেখায় ভজন দত্ত – ষষ্ঠ পর্ব

করোনা – এক পাতি পাব্লিকের ডায়েরি

ষষ্ঠ পর্ব

কদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনগণকে সুরক্ষিত থাকার জন্য নিজের নিজের ঘরে থাকার উপদেশ দিয়ে আসছিলেন যারা আজ দেখলাম তাদেরই কয়েকজন দেওয়াল জুড়ে ভালো না থাকার নোটিশ পাব্লিক করেছে। মনখারাপের অসুখ বাড়ছে। বুঝতে পারছেন, এতদিনকার সেটিংসটাই তো ঘেটে ট হয়ে গেছে।বর কাজে চলে গেলে বউ যে টাইমপাশ গেমটা খেলতেন,সেটা এখন হচ্ছে না। কিংবা উল্টোটাও বাধ্যতামূলক বাড়িতে থাকতে হচ্ছে বলে বরবাবাজির ইন্টুমিন্টু বন্ধ!দুতরফেই মনের মেঘ! আবার আমরা বাঙালি বাবা-মায়েরা সন্তানদের ব্যাপারে নাক এতটাই লম্বা করে ফেলেছি যে সে বেচারাদেরও নাজেহাল অবস্থা। গোদের ওপর বিষফোড়া আবার টেলি সিরিয়ালগুলোও সব রিপিট হচ্ছে! সুতরাং এইসব বোরিং বোরিং সিচুয়েশনে অনেককেই ডাইরেক্ট ফেস করতে হচ্ছে। প্রবলেম তো হবেই কাকা! কিন্তু এগুলো ম্যানেজ করতে হবে। নিজেকে আনন্দে রাখার উপায় নিজেকেই বের করতে হবে বাবু!
এদিকে ক্রমশই সুস্থ হয়ে উঠছেন লন্ডনের পার্টি থেকে পশ্চিমবঙ্গে নভেল করোনা বহন করে আনা সেই আমলা-চিকিৎসক পুত্র। পাতি পাব্লিকের শরীর খারাপ হলে কে তাকে আজ দেখবে!ভয়ে ভয়ে সিজন চেঞ্জের সর্দি-কাশিও ঢোক গেলায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে এই কদিনেই। বাড়ির সকলকে বলছে, দ্যাখ, না-বুঝে সুঝে কেউ শরীর খারাপ লাগছে বলিস না একেবারে। এখন ডাক্তারের আকাল,ঔষধের আকাল। সবাই সাবধানে থাক বাপ!
এদিকে তো পুকুরের জল শুকনো হয়ে আসছে রুখাশুখা জায়গাগুলোতে। মাছগুলো খাবি খাচ্ছে স্বল্প জলে। হাতে এখন কাজও নেই। তাই পাড়ার লোকজনের সদলবলে পুকুরের পাঁক ঘেঁটে ঘেঁটে মাছধরা চলছে। টিভিতে বলেছে, ভালো খাবার খেতে হবে। তাই মুরুব্বিরাও আর কেউ মানা করেনি। যা মাছ উঠেছে সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নিয়েছে, তারপর পুকুরের পাঁক মেখে বসন্তদিনের হোলি খেলেছে। যে যাকে পেরেছে ধরে ধরে পাঁক মাখিয়েছে, পাঁকে লাগপাছাড়ি খেলেছে ততক্ষণ, যতক্ষণ না খেতে যাওয়ার ডাক পেয়েছে। না,এই মানুষগুলির কেউ করোনা আক্রান্ত হয়নি এখনো। এ তো একাঙ্ক নাটক বড়ো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। পাতি পাব্লিকের শ্লোগান,সব ওপরওয়ালা মালিক!
আচ্ছা, করোনা কি শুধু ভদ্রলোকদের (সখি,ভদ্রলোক কারে বলে?),বিত্তবানদের অসুখ! একটুখানি এলিট না হলে কি এই ভাইরাস কেউ দেশে নিয়ে ঢুকতে পারে না! যদি ঐ এলিট মালগুলোকে এয়ারপোর্টেই আটকানো যেত, তাহলে তারা মলে মলে ঘুরে, আইনক্সে সিনেমা-টিনেমা দেখে হাজার হাজার লোককে সংক্রামিত করতে পারতো কি! সাধারণ গরীবদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ ঘটলে যে কি হবে!
এসব প্রশ্ন দেশপ্রেমিক হবার জন্য নয়! যা হবার তা হয়ে গেছে। যা গেছে তা গেছে!খেল খতম পয়সা হজম!
মাইরি হাতে পয়সা কমে আসছে। ‘রোবু’ বারের বাজারে বাবুরা সব মুখে মাস্ক লাগিয়ে খাসি বা মুরগির মাংস ব্যাগে ভরে ভরে দ্বিপ্রহরের আহারের পর নিদ্রা দিয়ে লকডাউনের করোনা উৎসব উদযাপন করছেন।ঘুম ভেঙে উঠে জ্ঞান দিচ্ছেন যেখানে সুযোগ আছে সেখানেই। সারাদিন ঘরের খেয়ে,শুয়ে বসে দেশপ্রেমিক হবার এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে তারা কেউ রাজি নয়।
ফাটছে তো দিন আানা দিন খাওয়া পাতি পাব্লিকের।
পুনেতে ভাইরোলজিস্ট এম ডি ভোসলের নেতৃত্বে দেশ করোনা টেস্টের নতুন একটি কিট উদ্ভাবন করেছেন। এতদিন ৪৫০০ টাকার কিট যা জার্মান থেকে আনা হতো তা এবার ১৯০০ টাকায় পাওয়া সম্ভব হবে।তিনি সম্প্রতি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ১৯ মার্চ। তাঁর কৃতিত্বে মাহিন্দ্রা কোম্পানির কর্ণধার আনন্দ মাহিন্দ্রা সম্প্রতি ট্যুইট করে বলেছেন, Ms. Bhosale, you delivered not just the test kit and your baby , but you also delivered a ray of hope to the country. We stand and salute you…
এদিকে আবার একটা দুঃসংবাদ এলো জার্মানি থেকে, পেন নিউজ সংবাদটির শিরোনাম করেছে, এভাবে- Covid19 stress: German minister commits suicide
আজ ২৯/০৩/২০২০ সন্ধ্যা সাতটার একটু আগে তারা যে সংবাদটি দিয়েছেন তা সত্যিই খুব মনখারাপ করে দেয়।একটি উন্নত দেশ জার্মানির এই অবস্থা হলে আমাদের যে কি হাল হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় ভাই, আমাদের দেশে কোনো মন্ত্রীর এরকম পরিণতি হবে না।তারা তো সব অন্য ধাতুতে গড়া! না, থাক!
সংবাদটি পড়ে দেখুন-
“Mr. Thomas Schaefer, Finance Minister of Germany’s Hesse state, has committed suicide apparently after becoming ‘deeply worried’ over how to cope with the economic fallout, the state premier, Mr. Volker Bouffier, said on Sunday.
Mr. Schaefer, 54, was found dead near a railway track on Saturday and the Wiesbaden prosecution’s office said they believe he died by suicide.
‘We are in shock, we are in disbelief and above all we are immensely sad,’ Mr. Bouffier said in a recorded statement. Hesse is home to Germany’s financial capital Frankfurt, where major lenders like Deutsche Bank and Commerzbank have their headquarters. The European Central Bank is also located in Frankfurt.
A visibly shaken Mr Bouffier recalled that Mr. Schaefer, who was Hesse’s finance chief for 10 years, had been working ‘day and night’ to help companies and workers deal with the economic impact of the pandemic. ‘Today we have to assume that he was deeply worried,’ said Mr. Bouffier, a close ally of the Chancellor, Mrs. Angela Merkel.
‘It’s precisely during this difficult time that we would have needed someone like him,’ he added. Popular and well-respected, Mr. Schaefer had long been touted as a possible successor to Mr. Bouffier. Like Mr. Bouffier, Mr. Schaefer belonged to Mrs. Merkel’s centre-right CDU party. He leaves behind a wife and two childrens.”
(সূত্র -PENNEWS.)
আগামী দিনগুলি যে কী ভয়াবহ হতে পারে তার লক্ষ্মণ এদেশেও ক্রমশ প্রকাশিত হতে শুরু করেছে।জাতীয় উন্নয়নের হার তলানিতে ঠেকেছে,টাকার কোনো দাম নেই। ব্যাঙ্ক ফেক মারছে যখনতখন।২০০৮ থেকে বিশ্বব্যাপী যে মন্দা শুরু হয়েছিলো তার ধাক্কা কাটিয়ে উঠে দাঁড়াবার আগেই বিশ্বব্যাপী এই করোনা ধাক্কা যে কোথায় শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছেন না।
ভাইরাস ছড়ানোর বিতর্কে আমেরিকার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চিন জানিয়েছে, এই ভাইরাস আমেরিকাই তার সৈনিকদের সাহায্যে ছড়িয়েছে। ২০১৯এর অক্টোবর মাসে উহানে ১০দিনের সামরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ১৪০টি দেশ থেকে ৯৩০৮ জন প্রতিনিধি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এই সময়ই আমেরিকার দলের বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়।বলা হয় ‘ফ্লু’।এতেই পাঁচজন মারা যান। আমেরিকার ‘রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের আধিকারিক মার্চ মাসের ১১তাং এক বিবৃতিতে বলেন, চিনে যে সৈনিকরা মারা যান “তারা হয়তো অজানা করোনা ভাইরাস নিয়েই উহান গিয়েছিল।”– চিন এই ঘটনাকে তুলে ধরে আমেরিকাই গোটা ঘটনার জন্য দোষী বলে দাবি করে। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই আমেরিকা এটা মানেনি। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডেনাল্ড ট্রাম্প করোনা ভাইরাস বলেন না, বলেন,’চিনা ভাইরাস’।যাদের প্রচার বেশি মিডিয়ায় তারাই বিষয়টা নিয়ে বিতর্ক করছে। হোক বিতর্ক।
মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল আঠারো দিন, আমাদের তো তার থেকেও চারদিন বেশি যুদ্ধ করতে হবে গৃহকোণে নিজেদের বন্দি রেখে। এরমধ্যেই আবার ওয়ার্ক ফর্ম হোম নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে যে মেসেজটি এখন বেশি চালাচালি হচ্ছে সেটা পড়ানোর লোভ সামলানো গেল না। মাফ করবেন।
YEAR 2030
Son: বাবা আমার প্রায় সব বন্ধুদের Birthday ডিসেম্বর এ কেন ?
Dad: তুই বুঝবি না বাছা আমার , এ অনেক পুরোনো আর ভয়ঙ্কর স্মৃতি রে
(চলবে)

(তাং ২৯ /০৩ / ২০২০, রাত ১১-১০)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।