স্বাস্থ্য সচেতনতায় প্রজ্ঞা

মেদ-হীন মধ্য প্রদেশ
সামনেই পুজো৷ স্টাইলিশ পোশাকে আপনাকে গ্লামারাস দেখাতে ভুঁড়ি কমানো অত্যন্ত আবশ্যক৷ সমাধানে থাকুক ডায়েট ও ব্যায়ামের যুগলবন্দী ৷
পার্টিতে যাওয়ার জন্য লিটল ব্ল্যাক ড্রেস বা গাউনেই বেশী স্বচ্ছন্দ আপনি৷ কিন্তু ইদানীং কালে পেট ও কোমরের চারপাশে বাড়তে থাকা মেদ সমস্যায় ফেলছে আপনাকে? কিংবা ধরুন শাড়ী৷ আপনার শাড়ী পড়ার কায়দায় মুগ্ধ হন অনেকেই৷ কিন্তু বাড়তে থাকা মেদে হয়তো হারিয়ে গেছে আপনার ছিপছিপে কোমর৷ আঁচলের ওপর দিয়েই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সেই ফ্যাট৷
শরীরের ওজন ঠিকঠাক হলেও, ছোট্ট ভুঁড়ি থাকতেই পারে৷ এবং মূলত পেট ও কোমরের চারপাশেই মেদ তাড়াতাড়ি জমে৷ আর একবার ভুঁড়ি হতে শুরু করলে তা কমতেও সময় লাগে৷ তাই অল্প সময়ে ভুঁড়ি কমাতে ব্যায়াম ও ডায়েটের জুড়ি মেলা ভার৷ সারাবছর যা-ই করে থাকুন, সময় থাকতে ভুঁড়ি কমানোর উদ্যোগ নিলে পুজোর কদিনের ডিভা হওয়া থেকে কেউ আপনাকে আটকাতে পারবে না৷
ভুঁড়ির গলদ৷
সবার আগে জানা জরুরী, ভুঁড়ি কেন হয়! অনেকেই তেমন ভাবে ভাতের ওপর নির্ভরশীল নন এবং সেরকম ভাবে দেখলে হয়তো দুপুরে ভাতঘুমেও অভ্যস্ত নন৷ তবুও একই সমস্যার সম্মুখীন৷ এর কারণ কী?
* অতিরিক্ত মদ্যপান লিভারের সমস্যা ছারাও ভুঁড়ি বাড়াতে সিদ্ধহস্ত৷
* কেক-ক্যান্ডির মতো অতিরিক্ত মিষ্টি বা চিনিযুক্ত খাবার, প্যাকেটজাত ফলের রস, পানীয় খেলে মেদ বাড়ে৷
* আইসক্রীম-কোল্ড ড্রিঙ্কস, অতিরিক্ত তৈলযুক্ত খাবারও ভুঁড়ি বাড়ার সহায়ক৷
* স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার, ধূমপান, পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমানো, এবং বংশগত কারনেও বাড়তে পারে ভুঁড়ি৷
* কোনও রকম এক্সাসাইজ না করে অনেকক্ষন ধরে একই জায়গায় বসে থাকার মতো অভ্যাস থাকলে বাড়তে পারে ভুঁড়ি৷
* ট্রান্স-ফ্যাট জাতীয় বিভিন্ন খাবার যেমন ফাস্ট-ফুড, চিপস্, ক্র্যাকার, কাপকেক ইত্যাদি মেদ বাড়াতে সহায়ক৷
* খাবারের তালিকায় কম প্রোটিন বা শর্করাযুক্ত খাবার অর্থাৎ ভাত, রুটির পরিমাণ কমিয়ে কর্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার অর্থাৎ মাছ, মাংস, ডাল, পানীয় জাতীয় খাবার বা বিভিন্ন ধরনের সবজির তরকারীর পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে৷
* শরীরে যে পরিমাণ ক্যালরি দরকার, তার চেয়ে বেশী ক্যালরি ইনটেক করলে তার ক্ষয় না হয়ে পেটের চারপাশেই জমা হয় মেদ৷
* অতিরিক্ত স্ট্রেস এর ফলে খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়৷ যে পরিমান খাদ্য শরীরে বৃদ্ধি পায়, তার থেকেও ভুঁড়ি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে৷
সমাধানে ডায়েট
ভুঁড়ি কমানোর জন্য ৬০% উপায় আসে ব্যায়াম থেকে, এবং বাকি ৪০% আসে ডায়েট থেকে৷ তাই ভুঁড়ি কমানোতে ডায়েটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন৷ শুধু ডায়েট করবো বললেই হবে না, মানতে হবে কিছু নিয়ম৷ সবার প্রথমেই দশ দিনে সাত কিলো ওজন বা সপ্তাহে পাঁচ কিলো ওজন কমাবো এরকম ভ্রান্ত ধারনা ত্যাগ করতে হবে৷ মোটামুটি প্রত্যেক সপ্তাহে ৭৫০ গ্রাম ওজন কমালেই হবে৷ তবে ভুঁড়ি কমানোর জন্য কিন্তু প্রত্যেক সপ্তাহেই অল্প অল্প করে ওজন কমাতে হবে৷
সংযত হতে হবে খাওয়ার ব্যাপারে৷
* দিনে তেল যাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে বা তেলের পরিমান চার থেকে পাঁচ চামচ হতে পারে৷
* মটন তো অবশ্যই বাদ দেওয়া উচিৎ বা খেলেও তা খুবই অল্প পরিমাণে৷
* কাঁকড়া, চিংড়ির মাথা, ডিমের কুসুম এই জাতীয় খাবারও বাদ রাখাই ভালো৷
* মানতে হবে লো ক্যালরি বা লো ফ্যাট ডায়েট৷
* রাস্তার বা দোকানের দই না খেয়ে ঘরে পাতা দই খেলে সেটা অনেক বেশী কার্যকরী হবে৷
* বেশী পরিমাণে ভাত না খেয়ে রুটি বা ব্রেড জাতীয় কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বেশী উপকারী৷
* ব্রেক-ফাস্ট এ রাখা যেতে পারে ওটস্ বা ডালিয়া জাতীয় খাবার৷
* খাদ্য তালিকায় কাঁচা-লঙ্কা, ফল বিশেষ উপকারী৷
* সন্ধ্যেয় টক জাতীয় ফল খাওয়া যেতে পারে৷
* এছারাও গ্রিন টি বিশেষ কার্যকরি ভুঁড়ি কমাতে৷
ব্যায়ামের উপকারিতা
ভুঁড়ি কমানোর জন্য শুধুমাত্র ডায়েট করলেই হবে না, নিয়ম মেনে খাবার খাওয়া এবং ভালো শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের ও প্রয়োজন৷ ব্যায়মের জন্য যার যেমন সুবিধে, সেই অনুযায়ী ফিটনেস ট্রেনিং বা আসন করতে পারেন৷ ইচ্ছে হলে জিমও জয়েন করতে পারেন, অথবা যোগ ব্যায়ামেরও সাহায্য নেওয়াই যেতে পারে৷
মূলত ভুঁড়ি কমানোর জন্য স্কোয়াট, লাঞ্জ, স্টেপ আপ, ডেড লিফট, হ্যামস্ট্রিং কার্ল এগুলোই যথেষ্ট৷ অনেকেরই ভুল ধারনা আছে যে শুধুমাত্র সিট আপ করলেই ভুঁড়ি কমে, এটি সম্পূর্ন ভুল ধারনা৷ আসলে এই ট্রেনিং গুলি করতে শরীরকে অনেকটা পরিশ্রম করতে হয়, ক্যালরি ও ঝরে অনেক বেশি৷ শারীরিক পরিশ্রম বেশি হওয়ার ফলে ভুঁড়ি কমার সম্ভাবনাও ভালো থাকে৷ এগুলি সপ্তাহে তিন দিন করতে হবে এবং বাকি তিনদিন রাখতে হবে জগিং, দৌড়ঝাঁপ৷
অনেকেই আবার এসব ফিটনেস ট্রেনিং এ স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না৷ তারা আসন এর মাধ্যমে ভুঁড়ি কমাতে পারেন৷ তবে আসন এর ফল ভোগ করতে হলে, নিয়ম মেনে প্রতিদিন একটা সময় নির্দিষ্ট করতে হবে আসন এর জন্য৷ আসন শুধুমাত্র ভুঁড়ি কমাতেই সক্ষম নয়, আসন করলে শরীরও সুস্থ থাকে৷ অর্ধচন্দ্রাসন, সেতু আসন, পার্শ্বচন্দ্রাসন, মৎস্যাসন, বজ্রাসন ভুঁড়ি কমাতে সক্ষম৷ তবে যাঁদের হাঁটুর সমস্যা আছে, তারা অবশ্যই বজ্রাসন বাদ দেবেন৷ অনেকেরই ধারনা, কপালভাতি আসন করলে ভুঁড়ি কমে তাড়াতাড়ি৷ তবে তার মানে অনেকক্ষন ধরে কপালভাতি করা মোটেও ঠিক নয়৷ গুনে গুনে ১০০ বার অথবা তিন মিনিটই প্রতিদিনের জন্য যথেষ্ট৷ অতিরিক্ত কপালভাতি আবার মেরুদণ্ডের সমস্যা তৈরি করতে পারে৷ এছাড়াও শরীর সুস্থ রাখার জন্য মাসে একদিন স্বচ্ছন্দে উপোস করাই যেতে পারে৷ ‘একাদশী ডায়েট’ নামে পরিচিত এই ডায়েটে সারাদিন উপোস করতে হয়৷ এতে শরীরের নানা প্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায়৷ তবে এটি শুধুমাত্র মাসে একদিনের জন্যই৷
অবশ্যই মনে রাখা উচিত
* একদিনের জন্য হলেও
ওভার-ইটিং ভালো নয়৷ আজ খেয়ে কাল ঠিক কমিয়ে নেব এই মনোভাবটিই ভুল৷
* প্রত্যেকদিন অল্প অল্প করে, কিন্তু নিয়মিত ফ্যাট কমানোর অভ্যাস জরুরি৷
* এক্সারসাইজ্ ছারা শুধুমাত্র ডায়েট দিয়ে ভুঁড়ি কমে না৷
* পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ব্যায়াম সর্বদা এক নয়৷
* চিট ডে এর ধারনা খারাপ নয়৷ কিন্তু সপ্তাহের ছদিন নিয়ম মেনে চলার পরে এক দিন অতিরিক্ত অনিয়ম ক্ষতিকর৷