সাপ্তাহিক T3 অরিজিনাল মিনি সিরিজে নীলাঞ্জন মুখার্জ্জী (পর্ব – ২)
ইংরেজ কখনও এদেশে আসেনি – ২
যার রেফারেন্স দিয়ে লেখাটা শুরু করেছিলাম তাঁর আর একটি অমর সৃষ্টি ‘গুগাবাবা’ থেকে একটা দৃশ্য ধার করে লিখছি –
স্থানঃ হুন্ডি বা গুন্ডি বা তুর্কীস্তান বা পারস্য বা ইরান বা খোরাসান বা ইংল্যান্ড বা ফ্রান্স বা হল্যান্ড বা পর্তুগাল বা স্পেন বা আরাকান বা…
কালঃ সপ্তম/অষ্টম শতক থেকে সপ্তদশ শতক
পাত্রঃ বিদেশী হুজুর ও দূত।
দূত – আমি বাংলা থেকে আসছি।
বিদেশী হুজুর (তুর্কী, পর্তুগীজ, ইংরেজ, ফরাসী, ডাচ, দিনেমার, তাতার, ইরান, পারস্য, স্প্যানিশ, আরাকান, মোঙ্গল/মুঘল… যার যার দেশীয় ভাষায়) – বাংলাতেই তো তোমায় পাঠানো হয়েছিল, তাই না?
দূত – হ্যাঁ হুজুর।
বিদেশী হুজুর – তা তুমি বাংলা থেকে আসবে না তো কি বোগদাদ, লন্ডন, পারি থেকে আসবে?
দূত (বোকার মতো হেসে) – আজ্ঞে না হুজুর।
বিদেশী হুজুর – যুদ্ধের সাজসরঞ্জাম কীরকম দেখলে?
দূত – আজ্ঞে কিছু নেই তো।
বিদেশী হুজুর (অবাক কন্ঠে) – কিচ্ছু নেই? অস্ত্রশস্ত্র?
দূত – আজ্ঞে নেই! লোকজন চালাতে জানে না। তাঁরা পুঁথি পড়ে আর পাখির ভাষায় কথা বলে।
বিদেশী হুজুর – সৈন্য?
দূত – আজ্ঞে সৈন্যসামন্তও তেমন নেই।
বিদেশী হুজুর ( উল্লসিত কন্ঠে) – অস্ত্রশস্ত্র নেই, সৈন্য নেই, তাহলে মানুষ করে কী?
দূত – আজ্ঞে মানুষ গান গায়, কবিতা লেখে, পড়াশোনা করে, ধর্মচর্চা, শাস্ত্রচর্চা করে।
বিদেশী হুজুর (আনন্দে লাফাতে লাফাতে) – আরও বল, বাঙ্গাল মুলুকের ব্যাপারে আরও বল দূত।
দূত (স্বপ্নালু মুগ্ধ কন্ঠে) – আজ্ঞে সে এক আজব দেশ হুজুর। সেখানে আকাশে পাখি আছে, ক্ষেতে ফসল আছে, কারিগরেরা এক গাছের আঁশ থেকে তৈরি সুতো দিয়ে হরেক জিনিস বানায়, সেই গাছের নাম পাট। বিভিন্ন কাঠ দিয়ে তারা বানাতে পারে নৌকা। সেই নৌকার কতরকম নাম, কত প্রকারভেদ। ডিঙ্গি, ডোঙা, বজরা, ময়ূরপঙ্খী, কোষা, সাম্পান, সপ্তডিঙ্গা। নদী, খাল, বিল, সাগর – এক এক ধরনের জায়গার জন্য, ব্যবহারের ফারাকে এক এক রকম নৌকা।
তাঁতিরা এক অসম্ভব সূক্ষ সুতির কাপড় বুনতে পারে। সেই কাপড় তৈরি হয় ফুটি কাপাস নামে এক বিশেষ ধরনের তুলো দিয়ে। কাঁচের মতো স্বচ্ছ সেই কাপড়টি বোনা হয় হাতে, চড়কায় সুতো কেটে। এতটাই মিহিন সেই কাপড় যে একটি আংটির ভেতর দিয়ে প্রায় কয়েক গজ কাপড় প্রবেশ করান যায়। সেই সূক্ষ কাপড়েরও নকশা ও গড়নের আঠাশ রকমের বৈচিত্র্য আনতে পারে তারা। কাপড়টার হরেক জায়গায় হরেক নাম। কেউ বলে ঝুনা, কেউ বলে খাসসা। কেউ ডাকে নয়নসুখ। সাগরপারে তার নাম মসলিন। লক্ষ স্বর্ণমুদ্রায় তা দেশে বিদেশে বিক্রয় হয়। সেই গরীব শিল্পী, কারিগর, তাঁতিরা সেসব জিনিসের দাম পায় না হুজুর।
এছাড়াও সেখানে আছে, রেশম সুতো, ইস্পাত, লবণ, আর প্রচুর, প্রচুর ফসল… কিন্তু এসব থেকেও অনেক সময়ই সাধারণ মানুষের দুবেলা দুমুঠো খাবারের জোগাড় হয় না। তবু তাঁদের মুখে হাসি আছে হুজুর, মনে আছে –
হুজুরের অবশ্য অতো কথা শোনার সময় নেই। তিনি দলবল নিয়ে ঘোড়ায়, উটে বা নৌকায়, যার যেমন সাধ্য সেইভাবেই এতক্ষণে ভাগ্যপরীক্ষা করতে বেরিয়ে পড়েছেন।
ভাগ্যান্বেষী তুর্কী সৈনিক থেকে ইউরোপীয় বানিজ্য সংস্থা সবাই এই বাংলায় আসতে চাইত। কেন? দিল্লীর সুলতান থেকে মুঘল বাদশাহ সকলেই এই নরম মাটিতে নিজের অধিকারের ঝান্ডা গাড়তে চাইত। কেন?
কারণ, এই মাটিতে সাধারণ মানুষ খেটেখুটে যা কিছু অর্জন করছে তাকে শাসনের নাম করে যতটা কেড়েকুড়ে নেওয়া যায়, তাদের কাছ থেকে জোরজবরদস্তি করে যতখানি আদায় করা নেওয়া যায়, তাই ছিল সকলের অভীপ্সা। যদি একান্তই সবকিছু কেড়ে নেওয়ার পরও মানুষটা বেঁচে থাকে তবে তাকে আর তার পরিবারকে গবাদি পশুর চেয়েও নৃশংসভাবে বেচে দাও। দুগণা প্রফিট। এবং বিদেশীদের কাছে এরই পোশাকী নাম ছিল ভাগ্যপরীক্ষা।
আবার কিন্তু কী ছিল এই মাটিতে যার জন্যে একে সোনার বাংলা বলা হতো? সত্যিই কী সোনার বাংলা বলে আদৌ কিছু কোনদিন ছিল?
ইতিহাস বলছে, ছিল। ক্রীতদাস ছাড়াও আরও অনেক কিছু ছিল এদেশে।
হিউয়েন-সাং-এর বিবরণে আমরা পাই – এ দেশটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এ দেশটির ভূমি উর্বর, এখানে নিয়মিত কৃষিকাজ হয় এবং বিচিত্র ধরনের পর্যাপ্ত ফসল উৎপাদিত হয়। এর আবহাওয়া নমনীয় এবং অধিবাসীদের আচরণ সৎ ও অমায়িক। এরা প্রকৃতিগতভাবে পরিশ্রমী, খাটো আকৃতির এবং এদের গাত্রবর্ণ কালো। তাঁরা জ্ঞানচর্চায় অনুরাগী, শুধু অনুরাগী নয় বরং তাতে গভীরভাবে আসক্ত। এখানে জমিতে প্রচুর পরিমাণ মূল্যবান সামগ্রী ও বিভিন্ন ধরনের রত্ন পাওয়া যায়। বাং – গে – লা- র অধিবাসীরা ঘষে ঘষে সাদা শঙ্খকে আকার দিয়ে সেগুলি মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করে। তাদের উৎপন্ন দ্রব্য হল সুন্দর তরবারি, তুলা (মখমল তুল্য) এবং সাধারণ সুতিবস্ত্র।
কিন্তু পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত। হিউ – সাং বা অন্যান্য পর্যটকরা বেশির সময় তাই দেখতেন যা তাদের অনেকাংশে দেখানো হত। তারা দেশে দেশে রাজানুগ্রহ পেতেন, তারা যে মঠে থাকতেন সেই মঠগুলি পেত ধনীদের পৃষ্ঠপোষকতা। আসলে পুরো ব্যাপারটাই এতখানি ‘রোজি’ ছিল না।
এত ফসল ফলা, দোয়াশ মাটির এত উর্বরতা সত্বেও মানুষের মূল সমস্যা ছিল আহার্যের অপ্রতুলতা, অনাহার। সেই অনাহারের তীব্রতা এতো বেশি ছিল যে বিভিন্ন সাহিত্যে তার উদাহরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। চর্যাপদে রয়েছে –
“টালিতে মোর ঘর নাই পড়িবেশী
হাঁড়ীতে মোড় ভাত নাহি নিতি আবেশী”
টিলাতে আমার ঘর, (আমার) নেই প্রতিবেশী। হাঁড়িতে আমার ভাত নেই, (আমি) নিত্যই ক্ষুধিত।
চৈতন্য মঙ্গলে রয়েছে –
“নাহা লুহা লবণ বেচিবে ব্রাহ্মণে
কন্যা বেচিবেক যে সর্ব শাস্ত্রে জানে।”
বাঙালির দাসত্বের ইতিহাসে যে কোন মগ, পর্তুগীজ আর ওলন্দাজদের থেকে অনাহারের ভূমিকা কিছু কম ছিল না। ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী এবং নিজেকে অন্নদাস হিসাবে বিক্রি করে দেওয়া ইংরেজ আমল অবধি ছিল খুব সাধারণ ঘটনা। যা সম্ভবত নতুনরূপে, নতুন মুখে এখনও প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। সেইসময় দাসদের বিক্রয়মূল্য এতোই সুলভ ছিল, মানুষ হাটে এতই কানাকড়ির দামে বিকোত যে বিদেশী পর্যটকরা অবধি তাতে আশ্চর্য হয়ে যেতেন।
বাঙ্গালার প্রাচীন সমৃদ্ধি বা দারিদ্র আলোচনা করার আগে আসা যাক আরও একটি গভীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে। এই সোনার দেশকে যারা শাসন করেছেন তার ব্যাপারে। কারণ, ওই একই। ইংরেজ শাসনের আগে এ দেশের মানুষ কতটা সুখী ও অসুখী ছিল সেটা উলটে পালটে বোঝবার জন্য আমাদের আলোচনায় শাসকদের রেফারেন্স বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আসবে। যেহেতু ইতিহাসের কচকচি অনেক পাঠকের ভাল না লাগতেই পারে তাই খুব ছোট্ট করে রইল শাসক – সারনী। আমাদের এই আলোচনার টাইমলাইন খুব ছোট তাই আমরা শুধু মাত্র সেই তালিকার শেষের দিকের শাসকদেরই অল্পবিস্তর রেফার করব।
প্রাচীন বাংলা
(কারণ, বাংলায় ২০,০০০ বছর পূর্বের প্রস্তর যুগের এবং প্রায় চার হাজার বছরের পুরনো তাম্রযুগের ধ্বংসাবশেষ বাংলায় পাওয়া গেছে।)
গঙ্গারিডাই, বঙ্গ, পুণ্ড্র, সুহ্ম, অঙ্গ, হরিকেলের শাসকেরা এবং মৌর্যযুগ
।
ধ্রুপদী বাংলা
শশাঙ্ক
।
পাল যুগ, সেন যুগ, চন্দ্র যুগ
।
মধ্যযুগীয় বাংলা
বাংলা সুলতানী, দেব রাজ্য
বখতিয়ার খিলজি, রাজা গণেশ (দনুজমর্দন দেব?) , যদু (জালালউদ্দিন মুহাম্মদ শাহ), হুসেন শাহী
।
মুঘল যুগ –
মুঘল সুবাদাররা, কন্দর্প রায়, প্রতাপাদিত্য, রাজা সীতারাম রায়
বাংলার নবাব, বারো ভুঁইয়া, রাণী ভবাণী, শোভা সিং, কৃষ্ণরাম, মল্ল রাজা
।
নাসিরি নবাবগণ, মল্ল রাজগণ, কৃষ্ণচন্দ্র,
বাঙ্গালার প্রথম সুলতান শাহী হিসাবে আমরা পাই ইলিয়াস শাহীর নাম। ইলিয়াস শাহী বংশ বাঙালি ছিল না। ইলিয়াস শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা শামসুদ্দীন ইলিয়াস ছিলেন এক ইরান আর আফগানিস্তানের কাছে শিস্তানে জন্মানো এক ভাগ্যান্বেষী। তারপর আসে বায়াজিদ বংশ। বায়াজিদ বংশও বাঙালি ছিল না। বায়াজিদরা ছিল ওই একই, ইরানের লোক। বায়াজিদের পরে আসে গণেশ বংশ – রাজা গণেশ (১৪১৪-১৪১৫ এবং ১৪১৬-১৪১৮)। রাজা গণেশ ছিলেন বাঙালি। তস্যপুত্র জালালুদ্দীন মুহাম্মদ শাহ (১৪১৫-১৪১৬ এবং ১৪১৮-১৪৩৩) এবং তস্যপুত্র শামসুদ্দীন আহমদ শাহ (১৪৩৩-১৪৩৫)। তারপর আবার ইলিয়াস শাহী বংশের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়।
তাদের সরিয়ে আসে হাবসি বংশ। বলাই বাহুল্য, এরাও বাঙালি ছিলেন না। এরা পূর্ব আফ্রিকার বান্টু প্রজাতির মানুষ। ক্রীতদাস হিসাবে তৎকালীন ইলিয়াস শাহী সুলতান দেহরক্ষী হিসাবে এদের রেখেছিলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা সুলতানকে দেহরক্ষা করতে সাহায্য করে। এবং তার কিছুদিন পরে নিজেরাও দেহরক্ষা করে। অধিকার যায় হুসেন শাহীদের কাছে। হুসেন শাহ ছিলেন অধুনা পাকিস্তানের করাচিতে জন্ম নেওয়া পাঠান। হুসেন শাহের পরে বাঙ্গালা যায় শেরশাহের কাছে।
এরপর শুরু হয় বাংলার ‘স্বাধীন’ সুলতান বংশ শূর বংশ। স্বাধীন কেন? না এরা দিল্লীর সুলতানদের কর দেওয়া ছেড়ে ‘স্বাধীন’ভাবে বাংলা শাসন করা শুরু করেন। সেই ‘স্বাধীন’ প্রথম সুলতানের নাম মুহাম্মদ খান শূরি। বাঙালি জেনে হতাশ হবেন ইনিও বাঙালি ছিলেন না। ছিলেন পাশতুন পাঠান। সেই প্রথম ‘স্বাধীন’ সুলতানের পর আসে দ্বিতীয় ‘স্বাধীন’ সুলতান বংশ – কররানি বংশ। সেই একই ব্যাপার। আবার আফগানি পাঠান। এবং তার পর বাংলা আবার ‘ পরাধীন’ হয়ে মুঘলদের সুবা বা প্রদেশে পরিণত হয়। সেই সুবা বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার অঞ্চলকে গিরে গড়ে উঠেছিল (যা বোধহয় একসময় প্রাচীন বঙ্গেরও সীমানা ছিল?)।
এবার একটা মজার তথ্য দেখা যাক।
বাঙালীদের অতি ব্যবহারে ক্লিশে হয়ে যাওয়া দুটি শব্দ আছে – স্বাধীনতা ও ঔপনিবেশিকতা। এই দুটি শব্দ একসময় আমাদের ব্যতিব্যস্ত করেছিল, কুরে কুরে খেয়েছিল। তাই আমরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে অগ্রনী ভূমিকা নিয়েছিলাম। শুরুতেই লিখেছিলাম সিনারিও অ্যানালিসিস, বারবার প্রেক্ষাপট বদলে বদলে ইতিহাসকে দেখাই এ লেখার উদ্দেশ্য।
প্রথমে আমরা যাই মহারাষ্ট্রে। মুঘল জমানায়। আওরঙ্গজেবের শাসনকালে। মারাঠীদের হঠাৎ মনে হল, মুঘলদের শাসনে তারা পরাধীন, বিজাপুরের শাসনে তারা পরাধীন, নিজামের শাসনেও তারা পরাধীন। তারা একমাত্র স্বাধীন শিবাজীরাও ভোঁসলে নামে এক ভুমিপুত্রের শাসনে।
সেই একই ব্যাপার পাঞ্জাবের শিখদের মধ্যেও। ইংরেজদের শাসনে তারা নিজেদের পরাধীন মনে করে। আফগান বা মুঘলদেরও তাঁরা মানতে রাজি নয়। তারা নিজেদের ভুমিপুত্র রঞ্জিত সিংহের শাসনে নিজেদের স্বাধীন মনে করত।
এরকম উদাহরণ ভুরি ভুরি। রাজস্থানীরা নিজেদের রানা সঙ্গ, বাপ্পা রাওয়াল – তাঁদের ভূমিপুত্রের শাসনে নিজেদের স্বাধীন বলে দাবি করত। মধ্যপ্রদেশের মানুষেরা নিজেদের ছত্রসাল ও বাজবাহাদুর নামের ভূমিপুত্রদের শাসনে নিজেদের স্বাধীন বলে মনে করত। এমনকি সেই ব্রিটিশ আমলেও পাশতুনরা নিজেদের নেতা আবদুল গফফর খানের হিফাজতে নিজেদের স্বাধীন বলে মনে করত। এমনকি দেশ স্বাধীন হলেও পাকিস্তানের শাসনকালে তারা তাঁদের মনে পরাধীনতার গ্লানি ছিল।
ভূমিপুত্র, যে মানুষ সেই দেশ বা প্রদেশের ধুলোমাটিমেখে বড় হয়েছে, সেই দেশ বা প্রদেশের ভাষায় প্রথম কথা বলেছে, যার শরীরে বইছে সেই জাতির রক্ত, দেখা যায় সেই প্রদেশ বা দেশের মানুষ সবসময় তার সেই ভূমিপুত্রকেই নিজের দেশের শাসক হিসাবে দেখতে চায়।
আজকের কাস্তে হাতুড়ি, ঘাসফুল, হাতচিহ্ন ও গোবলয় নিয়ে খেয়োখেয়ি করতে থাকা অতি রাজনৈতিক সচেতন বাঙালিরা, হয়তো জেনে বিস্মিত হবেন যে, ব্রিটিশ আমলের বহু আগে থেকে সেই তেরোশ শতকের পর থেকে একমাত্র রাজা গণেশ, তার ছেলে যদু উরফ জালালুদ্দিন ও তার ছেলে শামসুদ্দিন ছাড়া ইংরেজ আমলের আগে অবধি কোন ভূমিপুত্র বা বাঙালি শাসক এই প্রদেশ শাসন করেননি।
আমাদের পূর্বপুরুষদের অবশ্য তাতে কোন অসুবিধা হয়নি। তাঁরা সেই শাসকদের নামে জয়ধ্বনি দিয়েছেন, তাঁদের পদধূলি নির্বিবাদে লেহন করে গিয়েছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম। একটি জাতি দ্বারা অন্য একটি জাতির উপর ক্রমাগত, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শাসন চালিয়ে যাওয়া যদি পরাধীনতার লক্ষণ হয়, দাসত্বের লক্ষণ হয় এবং সেই ইস্যু নিয়ে যদি আমরা ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ করে থাকি, তবে সেই একই যুক্তি মেনে সারা ভারত দুশো বছরের জন্য পরাধীন হয়ে থাকলেও বাঙালিরা সম্ভবত তার আগেও আরও কয়েকশো বছর ধরে পরাধীন ছিল। সেই দাসত্ব হয়তো তাঁরা অনুভব করতে পারেননি, হয়তো বোঝার কোন চেষ্টাও করেননি।
এই যাহ! বাঙালি চমকে গেলেন নাকি? এখনও তো ঔপনিবেশিক দাসত্বের কথাবার্তা বাকি আছে।
তথ্যসূত্রঃ
বৃহৎবঙ্গ – আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন
ময়মনসিংহ গীতিকা – আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন
উইকিপিডিয়া