• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ২১)

বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সি – ২১

দুপুরের খাওয়া দাওয়া হয়ে যাওয়ার পর গেস্ট হাউজের সাজানো গোছানো মাঠটাতেই সবাই বসেছিলো আড্ডায়। সেখানেই একটি ছেলেকে দেখে চমকে উঠেছিলেন বৌদি। খুব চেনা চেনা লাগছে। বল্টুদা খবর নিয়ে জানলেন হোটেলে নতুন কাজে যোগ দিয়েছে ছেলেটি। আগামীকাল বেড়াতে যাওয়া কোনারক,নন্দনকানন। বল্টুদা বাসের ড্রাইভারকে সব বুঝিয়ে দিলেন। আড্ডা চললো অনেকক্ষন। তারপর যে যার ঘরে ফিরে গেলেন। কিছুক্ষনের বিশ্রাম। তারপর পড়ন্ত বিকেলের দিকে সমুদ্রপাড়ে যাওয়া। বল্টুদা আর বৌদিও রুমে গেলেন। প্রচুর খাটনি যাচ্ছে বল্টুদার। দুপুরে ঘুমের অভ্যেস নেই। কিন্তু বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলেই ঘুম পেয়ে যায়। বল্টুদারও যাচ্ছিলো। বৌদির ঘুম আসছে না। বৌদি বুঝতে পারছেন কোনো একটা রহস্য যেন ঘিরে রয়েছে। পরপর এই যে জুতো চুরির ঘটনা হচ্ছে তাদের দলের সবার সঙ্গে এর মধ্যে অন্য কিছুর যোগ রয়েছে নিশ্চই। কি সেই যোগ? ভাবতে লাগলেন বৌদি। এমন কি হতে পারে যে শুধুমাত্র জুতো চুরি করার জন্য উঠে পরে লাগবে এরা? এই যে পরপর জুতো চুরি হচ্ছে, এর মধ্যে কি কোনো যোগাযোগ রয়েছে? নাকি নেই,সবটাই কাকতালীয়।
বৌদি বল্টুদাকে ডেকে একথা যেই বলতে যাবেন, তাকিয়ে দেখেন বল্টুদা ঘুমিয়ে পরেছেন। কি আর করা, বৌদি সকালে অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছেন, তাই ঘুম আসছিলো না। টিভিটাকে ছেড়ে দিলেন। প্রায় নতুন একটা মাঝারি সাইজের এই ই ডি। ঝকঝকে ছবি। কিন্তু বাংলা চ্যানেল খুব একটা নেই। বেশীরভাগ ওড়িয়া চ্যানেল, কিছু হিন্দি, কিছু ইংরেজি। অনেক খুঁজে কয়েকটা বাংলা চ্যানেল পেলেন। বাংলা খবরের চ্যানেল গোটা দুই। দু-তিন দিন কলকাতায় কি হচ্ছে খবর নেওয়া হচ্ছে না। তাই বৌদি একটি বাংলা খবরের চ্যানেল খুলে দেখতে লাগলেন। একটা নিউজ স্লটে বেশ কিছু খবর পরপর যায়। কোনো খবরই অনেকক্ষনের নয়, ছোটো ছোটো।
হঠাৎ একটি খবরে বৌদির চোখ আটকে গেলো। কলকাতার একটি বিখ্যাত সোনার দোকান থেকে বেশ কিছু হীরে চুরি করা হয়েছে। কয়েককোটি টাকা দাম হীরে গুলোর। কলকাতা পুলিশ তদন্তে নেমেছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু মূল অভিযুক্তকে পাওয়া যায় নি। তদন্তে জানা গেছে হীরেগুলো নিয়ে সেই চোর পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে উড়িষ্যার দিকে চলে গেছে। উড়িষ্যা পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়েছে। কলকাতা থেকে গোয়ান্দাদের দল দু-এক দিনের মধ্যেই উড়িষ্যার দিকে আসবেন। তদন্তে আরো জানা গাছে সম্ভবত পুরীতে রয়েছে সেই হীরে চোর।
বৌদি চমকে উঠলেন খবরটা শুনে। যদিও সাধারণ জুতো চুরির সঙ্গে এর সম্পর্ক না থাকারই কথা। কিন্তু কোথায় যেন একটা খচখচানি থেকেই যাচ্ছে।
বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যে হওয়ার মুখে। অন্ধকার নামবো নামবো করছে। বৌদি সেজে গুজে প্রস্তুত সমুদ্রপাড়ে যাওয়ার জন্যে। বল্টুদাকে ডেকে দিলেন ঘুমের থেকে। বল্টুদা উঠে রেডি হয়ে নিলেন। বেরতে হবে সমুদ্রের দিকে। নীচে নেমে এলেন তিনি। খাবার জায়গায় অনেকের ভীড়। কফি প্রস্তুত। সঙ্গে ফিস ফ্রাই। আহা। তবে ভেটকি নয়,পমপ্লেট ফ্রাই। পমপ্লেট মশলাপাতি দিয়ে কড়া করে ফ্রাই করলে দারুণ লাগে খেতে। ইয়া বড় পমপ্লেট। কলকাতার বাজারে এত বড় মাপের পমপ্লেট খুব একটা দেখা যায় না,আর পাওয়া গেলেও দাম খুব বেশী।
আবার সেই লোকটা। বৌদি দেখলেন সেই ছেলেটা একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে এদিকে এক নজরে তাকিয়ে আছেন। বৌদি সেই ছেলেটির দিকে ভালো করে যেই তাকালেন, বুঝতে পেরেই সঙ্গে সঙ্গেই ছেলেটি সরে গেলো সেখান থেকে।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।