উপন্যাসের শুরু কিন্তু এখান থেকেই।
শুধু, কুশীলবদের প্রয়োজনীয় সামান্য পরিচয়টুকু জানা না থাকলে এই ‘অলীক কুনাট্যের’ (!!!) সংলাপের শুরুটা হয় না ।
‘ডাক্তারবাবু’ সম্বোধনেই একজন মানুষের পরিচয় অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু, সত্যিই কি তাতে কোন পরিচয় স্পষ্ট হয়!?… এমন যদি হয় যে, তিনি বয়স্ক, বিবাহিত, পারিবারিক মানুষ এবং, এবং, এবং… তারপরেও ফেসবুকে পরিচিত এক রমণীর সঙ্গে হোয়াটস্এ্যাপে ‘’রঙে রসে জাল” বুনতে পারেন!!… তখন সে পরিচয় অন্য এক মানুষেরও। তিনি অর্কপ্রভ। ‘ডাক্তারবাবু’ সেখানে শুধুই একটা সম্বোধন!!
‘মো..’ও সে রকমই। নামটা আপাততঃ উহ্যই থাক… যথাসময়ে জানা যাবে। শুধু একজন সামান্য গৃহবধূর পরিচয়ই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়। তিনি সুশিক্ষিতা,কিছু গুণের অধিকারিণীও,… আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বহির্জগতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন… যদিও কর্মজীবনের চেয়ে সংসার জীবনেই তাঁর স্থান নির্দিষ্ট হয়েছিল। যৌবনের শীত-বিকেলে বারান্দার ছোট্ট দোলনায় দুলতে দুলতে ফেসবুক করতে করতে হঠাৎই ‘ডাক্তারবাবু’র সঙ্গে আলাপের এক চিলতে রোদ এসে পড়েছিল তার মনে। বিকেলের সে আলো কখন যে আঁধারের ডাকে জ্যোৎস্নার সাথে মেশামেশি হয়ে যায়!! ‘‘কেউ কি তা জানে”!!!..
………………………………………
[ এখন ভোর হয় মোবাইল ফোন ‘অন’ করে। কারো কারো রাতভোর খোলাই থাকে। প্রতিদিনের অভ্যাস মত, অর্কপ্রভও ঘুমভাঙার আলসেমি জড়ানো হাতে বালিশের পাশে রাখা মুঠোফোন চালু করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিভিন্ন শব্দে করে হাজারো বার্তা আসে… ঘুম চোখেই সেগুলিতে একবার চোখ বুলিয়ে ঝাড়াইবাছাই করে নেয় অর্কপ্রভ। একটি নোটিফিকেশনে এসে চোখ আটকে গেল এখন।… ও!!… আজ তার জন্মদিন! মাঝে একবছর কেটে গেছে… কোন কথাবার্তা বিশেষ হয়নি, অথচ, দুবছর আগেও কত কথা হয়েছে, বেশ কিছুদিন।… আবেগপূর্ণ… ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ভাষায়। তারপরে, ও বেড়াতে চলে গেল… আর তেমন কথাবার্তা হয়নি। মনেহল, প্রতিবারের মত একটি শুভেচ্ছাবার্তা পরে নাহয় পাঠিয়ে দেবে! ]
অঃ: —
আছি, ভাল আছি,
দেখা হওয়া না হওয়ার কোল ঘেঁষে
হারিয়ে যাওয়া মোহনার কাছাকাছি —
আছি, ভাল আছি।।
মোঃ: আহা….
দেখা হওয়া আর না-হওয়ার ফাঁকেই যে আটকে আছে বেঁচে থাকার রহস্য…!!
মোহানার কাছাকাছি পৌঁছনো যায় কি কখনো…!? তবে তো অমৃতলাভ…. জীবন-জয়ী !!
অঃ : সাগরে মেশার আগে মোহনার কাছাকাছি আছি তো! এখন নদী অনেক বিস্তৃত। দুকূল হারানোর আনন্দ, সাহস, রোমাঞ্চে ভরা । 😊
মোঃ: এ খেলাই তো চিরন্তন !
অঃ: 😊
মোঃ: খাওয়া হলো…!?
হাসলেন যে…!? 🙂
অঃ: কেন? হাসতে মানা!
মোঃ: হা হা… একদমই না…. এত মেনে মেনেই বরঞ্চ হাসি বন্ধ হওয়ার জোগাড় !
অঃ: 👍
এবার হয়েছে?
মোঃ: হা হা… এতো আরো ভয়ঙ্কর… কথা নেই বার্তা নেই বুড়ো আঙ্গুল একখানা দেখালেই হলো… এবার সেটি ভালো না কালো…. সেই হিসেব মেলাতে মেলাতেই জীবন শেষ 😃
অঃ: যে হিসেব মেলে না, তা কষে কষে জীবন শেষ করে কী লাভ!!
হিসেব না কষাই ভাল।
কেউ বলে, ‘হিসাব মিলাতে গিয়ে দেখি, ভুল সবই ভুল ‘
কেউ বলে, ‘কী পাইনি তার হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজী ‘
কেউ বলে, ‘হিসাবের শূন্য আমার মেলেনি সব বিকিয়ে ‘।
মোঃ: হ্যাঁ তো….. সেতো অন্তরাত্মা জানে…. কিন্তু বহিরঙ্গে সব সময় মেনে নেওয়া যায়না বুঝি…
অঃ : কী মেনে নেওয়া?
মোঃ: এই যে হিসেবের বেহিসেবী টান..
তার হাত থেকে নির্লোভ নিষ্কৃতি সবসময় পাওয়া যায় না বুঝি….
অঃ: সে যে হিসাব-বহির্ভূত সম্পত্তি!!
মোঃ: হা হা…. হিসেব বহির্ভূত সম্পত্তি…. তা সে থাকলে কিন্তু সত্যিই ভারি আহ্লাদের ব্যাপার হতো….
অঃ : জেলে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকতো!
মোঃ: হা হা… তা মন্দ হতো না…. অযাচিত কত বন্ধন তো রয়েছে…. জেনে বুঝে খানিক জেলের বন্ধন স্বীকার করতে এমন কি আর যন্ত্রণা হতো…!! ☺
অঃ : অযাচিত বন্ধন!
মোঃ: নিজ অতিরিক্ত সবটুকুই তো অযাচিত… পালাবার পথ নেই তাই… কোত্থাও…
আসছি, একটু কাজ সেরে নিয়ে আসছি।
অঃ : হ্যা, যাও। আজ তো ব্যস্ততা থাকবে বুঝতেই পারছি। সেটা ঠিকমত সারা হোক… নাহয়, কাল থেকেই এসো!!
মোঃ : না, তেমন কিছু নয়। বাবার কাছে থাকার সময়ে যেমন হয়, বিয়ের পরে তেমন আয়োজন হওয়া অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার। শাশুড়ি, বর সবার চোখেই সেটা আদিখ্যেতা ছাড়া কিছু নয়। এখন, মূলতঃ মেয়ের জন্মদিনই পালন হয়… সে যাক… পরে আসছি।
[ খানিকক্ষণ চুপ করে টিভির দিকে তাকিয়ে বসে রইল অর্কপ্রভ। এইভাবে নতুন করে কথা শুরু হয়ে যাবে, ভাবেনি। তবে, এবারে যেন ওকে আরো ধারালো মনে হচ্ছে… কথার মধ্যে কোথাও কি একটু ক্ষোভের আঁচ রেখে গেল!… যাক। পরে দেখা যাবে। ]
( রাতে অর্কপ্রভ চেম্বার থেকে ফিরে মেসেজ পেল। দেখল, আগের কথার রেশ টেনে সে লিখেছে) :
হিসেবের কি বেহিসেবী হয়….!?
সত্যি ভারি কঠিন প্রশ্ন কিন্তু…. ভেবে উত্তর দিতে হবে… 🙂
অঃ : আমি প্রশ্নটা তুলিনি। নিজের প্রশ্ন নিজেকেই বিপদে ফেলেছে। 😊
এতদিন বাদে হঠাৎ কী হলো! ঘুম ভেঙে জেগে উঠলে? বহুদিন তো যোগাযোগই করো নি!!
মোঃ: 😃
তাই তো খানিক ভাবনার অজুহাতও মিললো…
হা হা… না তো… তবে, খবর নেওয়ার অভ্যেস আমার আছে…. 😌
সেই গানটা শোনেননি… ” বন্ধু কি খবর বল… কতদিন দেখা হয়নি… ”
তেমন খানিক…! 🙂
অঃ : আর, আমার কথায় ঃ-
ভুলতে চাওয়া তো নয় ভুলে যাওয়া,
সে তো ভুলতে না পারার বোঝা বওয়া।।
মোঃ: ভুলতে চাওয়াটিই তো সবচেয়ে বড়ো বোকামি… তার চেয়ে মনে রাখা ঢের সহজ 🙂
অঃ : আমি কিন্তু বোকামিতেই নিজেকে খুঁজে পাই।
মোঃ: তাতে…. আজ পর্যন্ত কিছু ভোলা গেছে কি!?
অঃ: এবার প্রশ্ন কিন্তু নির্দিষ্ট একটা দিকে turn নিচ্ছে! 😎
মোঃ: হা হা… দিক নির্দিষ্ট হওয়া কিন্তু বুদ্ধির উপহার…
অঃ: ভুলতে না পারার বোঝা বয়েই তো চলতে হয় !!
এই বোঝাটা বোধহয় অল্পবিস্তর সবাইকেই বইতে হয়!
মোঃ: হ্যাঁ তো… সেটিই জন্ম ঋণ… খেলার শর্ত
অঃ: ঠিক, কিন্তু তাতে যন্ত্রণার শ্বাসকষ্ট হয়।
মোঃ: হা হা…. যন্ত্রণারা তো ভারি স্বার্থপর দেখছি….. নিজেরা শ্বাস নেবে বলে খামোখা জীবন বেচারা কে বিপদে ফেলে…
মোঃ: ভোলার চেষ্টা করাই বন্ধ করে দিন… দেখবেন যন্ত্রণারা আনন্দ বার্তা হবে….! 🙂আসলে কিচ্ছু তো স্থায়ী নেই….. মায় নিজ অনুভূতি পর্যন্ত … তবে খামোখা ভুলতে চাওয়া কেনো…!?
অঃ : তা কি করে হয়!!… ভুলতে চাই বা না-চাই, অনুভূতির স্থায়িত্ব থাকবে না!!? সেখানে স্থিতি তো থাকেই!!…
ওই যে বললে, বহিরঙ্গের হিসেব! সে হিসেবের একটা রেশ তো থাকেই!!
মোঃ: হা হা… হ্যাঁ… বহিরঙ্গের খোলসের সাথে বহিরঙ্গের হিসেব চলুক… তবে অন্তর বেহিসেবী হোক আত্মতৃপ্তিতে… সেই হিসেবে ভাগ বসানোর কারোর সাধ্য নেই… নিজে ছাড়া…
একটা গান মনে এলো…
” আমার স্বপ্ন দেখার দুটি নয়ন… হারিয়ে গেছে কোথায় কখন… “
আসল সত্যি টি হলো, কিচ্ছু হারায় না… হারানোর আসলে নেই-ই কিছু
অঃ: অত হিসেব নিকেশ পার?
মোঃ: না পারিনা তো…. তাই তো অন্তরে অন্তরে বেহিসেবী ভাব কাটাতে পারছি না… হা হা…
অঃ : চাপা ঠোঁটের মাপা হাসিতে কোথাও তো বেহিসেব দেখি না!! ছবিতে সেটাই তো দেখা যায়!!
মোঃ: হা হা… ওইটিতেই তো সবাই ভুল করে… বাইরেরটি দেখে কিনা…
আপনাকে দেখাই যায় না এখন… কেনো গো…!?
অঃ : তা-ই!!.. নাহয়, অন্তরের আলোতেই দেখলে!।
মোঃ: অন্তরের আলোয় নিজেকেই দেখতে চাইছি… তবে আর কাউকে খুঁজে পেতে অসুবিধে হবে না…
অঃ : কারো বন্ধ জানলায় উঁকি দেওয়ার স্বভাব তো কোনদিন ছিল না!… তাই তোমার পেজে ঢুঁ মারিনি…
মোঃ: আমি তো কখনো জানলা বন্ধ করিনা… আসলে দেওয়ালই গড়তে পারি না যে… তাতে জানলা লাগাবো…
অঃ : মুস্কিলটা তো ওখানেই। তোমার খোলা আঙিনায় যদি ঝড় হয়ে যাই কিংবা নিদেনপক্ষে শুধু বাতাসই!! সেই কবে লিখেছিলাম.. সেই অন্য কোন জন্মে…….
‘আমি বাতাস হইয়া জড়াইব কেশ, বেণী যবে যাবে খুলিতে, তবু আমারে দেবো না ভুলিতে….’
বা, ‘ ঝড়ে যায় উড়ে যায় গো আমার মুখের আঁচলখানি’ ( ওটা বুকেরই লিখেছিলাম; মুখে কেউ আঁচল দেয় নাকি!’… অনেকেরই অস্বস্তি হচ্ছিল… বাধ্য হয়ে..) !!
এখন ভয় করে… তোমার চেয়ে অনেক বেশী নিজেকে। ওসব লিখতে গিয়ে আবার যদি মাথাটা খারাপ হয়ে যায়!!
থাক!! ঝড় হতে চাই না, ধুলো ওড়াতেও চাইনা। তোমার ১০০০০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টির লাইটহাউস দূর মোহনায় ভেসে থাকা আমার নাও থেকেও দেখতে পাই। তোমার ফেসবুকের কূলে নোঙর করা হাজারো ভীড়ে আমি নাইবা ভিড়লাম !!!
এবারে এজন্মের একটা লেখা :-
আমি ভাবি, তুমি ভুলে গেছ
তুমি ভাব, আমি ভুলে গেছি
আজ দেখা যখন হল দুজনায়
ভাবনার শেষে দেখি –
তুমি আমার, আমি তোমারি আছি।।
মোঃ: আহা…. আমি প্রেম করতে রাজি আছি… ☺🌹
[ চমকে উঠেছিল অর্ক।… এতদিন বাদে আজ এমন দিনে এমনভাবে হঠাৎ করে ওর কথাবার্তাগুলো মেলাতে গিয়ে ও কী বলবে, তার খেই হারিয়ে ফেলছিল। ]
অঃ : তা-ই!!!! আর কিছু বলতে চাইছি না। প্রগলভ হয়ে যেতে পারি। হে নিরূপমা, করিয়ো ক্ষমা! 😊
মোঃ: হা হা…. আচ্ছা…
তবে ক্ষমা করার আমি কে… আপনার ভিতরে যিনি… আমার অন্তরেও তিনিই তো… তবে কে কার কাছে ক্ষমা চাইবে…!? 😊
অঃ : বলছিলে, আমায় দেখা যায় না!… তা, কোথায় দেখা যায় না?
মোঃ: কোথায় আর… ” চোখের বাহিরে… ” 🙂
অঃ : তাহলে তো না দেখার অভিযোগ আর টেঁকে না!!…অন্তরের আলোয় তো দেখতে পাও!! যেমন আমি দেখি!
মোঃ: 😊…ভালো থাকবেন… নইলে কথা বলবো কি করে…!? 🙂
আজ সময় নেই আর… শুতে হবে… তাই বাকিটা বাকি থাকলো… কালকের জন্য!
অঃ : আচ্ছা। শুভরাত্রি।