* ম্যাম প্লিজ আমাকে বলবেন এই ইনস্টিটিউট টা মানে ইসপ্যামা…মানে ঐ ইয়ে টা আর কি..?ঠিক কোথায়?? ইয়ে মানে এই প্ল্যানেটেই তো?
**স্রোতস্বিনী…দুটো কথা…. প্রথম কথা তোমার নাম টা বেশ বড় আর একটু কঠিন ও …না না, আমার কোনো অসুবিধা নেই …কিন্তু অনেকেরই হতে পারে..তাই তোমাকে কি আমরা সবাই স্রোত বলে ডাকতে পারি??…..আর দ্বিতীয় কথা.. ….. তুমি মাছ খেতে ভালোবাসো….এই ফিস্ এ্যান্ড চিপস্ টা আর একটু নাও….না কি লবস্টার থার্মিডোর টা একটু ট্রাই করবে??
নাঃ, ইনি কি করে জানলেন যে আমার মাছ ভীষন প্রিয়…তাই নিয়ে আর অবাক হয়ে আর লাভ নেই,…,…কারণ আমার সিক্সথ্ সেন্স দিয়ে বুঝে গেছি এখন আমার জীবনে অবাক হওয়ার মতো অনেক অনেক ঘটনাই ঘটতে চলেছে…তাই অবাক না হয়ে ঘটনা গুলো বোঝার…. আর এ্যানালিসিস করতে পারার মত মানসিকতা তৈরি করাই আমার জন্য এই মুহূর্তে সঠিক।
এই যেমন আমি এখন রয়্যাল পেন্ট হাউসের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইটের প্রাইভেট ডাইনিং হলে বসে আছি……যেখানে টেবিলে এতো রকম স্প্রেড রয়েছে যে তার তিনভাগ জিনিসের আমি নামই জানি না।
নাঃ, আমার এই হোটেলে ঢুকতে কোনো সমস্যা হয়নি….এক ভয়ানক দামী গাড়ি…এই হোটেলেরই নাম লেখা….আমাকে হোস্টেল থেকে তুলে এনেছে…আর এই রাজপ্রাসাদের মতো ঐশ্বর্যমন্ডিত হোটেলের স্বপ্নের মতো অসম্ভব বিলাসবহুল একটা প্রাইভেট ডাইনিং এরিয়ায় আমি এখন বসে আছি….এই স্বপ্নের মতো মায়া মাখা সুন্দরী মহিলার সামনে….যাকে মিরান্ডা ম্যাম বলে চিনি। আমার পাশের দুটো চেয়ার পরেই বসে আছেন প্রফেসর হাসান….সৌম্য সুন্দর মুখ স্নেহময় বন্ধুত্বপূর্ণ হাসিতে উদ্ভাসিত… উনি আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলেন… ইশারা করে ওয়াইন খেতে বললেন। আমি হেসে ফেললাম… মিরান্ডা না তাকিয়েও চোখ ঘোরালেন।….আজ এরিক…. মানে ঐ মিস্টার সুন্দর অনুপস্থিত….বাঁচা গেছে…. তাহলে হয়তো আমি ঠিক করে খেতেই পারতাম না।
মিরান্ডা একটু রিল্যাক্স করে রাজকীয় চেয়ারটাতে ঠেস দিয়ে বসলেন।ওনার হারমেস্ এর স্কার্ফ টা একটু ঠিক করলেন ( আমি জানি এই কোম্পানির স্কার্ফ গূলো একটার দামে আমাদের মত মধ্যবিত্তের আধমাস সংসার চলে যায় হয়তো।
**স্রোত…. তুমি কি বলছিলে?? ইসপ্যামা টা কোথায়?? তোমার প্রশ্ন টা হওয়া উচিৎ ছিল ইসপ্যামা গুলো কোথায়???
* মানে??? আরো ইসপ্যামা আছে???
** অবশ্যই স্রোত…. বলতে গেলে প্রায় প্রতিটা কন্টিনেন্টেই আছে। তবে কোন ফ্লেজলিং কোন ইনস্টিট্যুটে যাবে তা তার এবিলিটি এবং নিজের ইনস্টিংকট্ অনুযায়ী হাই প্রিস্টেস রা ঠিক করেন। আবার ফ্লেজলিং স্যোয়াপ ও হয় মানে আজ তুমি লন্ডনের … ইসপ্যামা তে থাকলেও যদি আমরা মনে করি অস্ট্রেলিয়ার ইসপ্যামা তে গেলে তোমার এবিলিটি গুলো বেশি ভালো ভাবে বিকশিত হবে….তবে হাই প্রিস্টেস হিসেবে সে সিদ্ধান্ত আমি নিতেই পারি।
এই কথাটা বলার সময় মিরান্ডার গলায় অসম্ভব কর্তৃত্ব ,দম্ভ ও ক্ষমতার অহঙ্কার প্রকাশ পেল বলে আমার অন্ততঃ মনে হল…. কিন্তু আমার মাথায় এখন প্রশ্নের পোকাগুলো এতটাই কিলবিল করছে যে আমার সেগুলোর উত্তর আগে চাই…
* ম্যাম আর একটু এক্সপ্লেইন করবেন প্লিজ্?? আপনি কি যেন বললেন….ফ্লে….ফ্লেজলিং না কি যেন!!!!!
আরেহ্ ফ্লেজলিং মানে ছানা, ডিম ফুটে বেরিয়েছে….হা হা হা …..হাসলে প্রফেসর হাসান কে এত সুন্দর লাগে… ঠিক একটা ছোট নিষ্পাপ বাচ্চা যেন।
যেমন এখন তুমি তোমার ভিতরে কি পাওয়ার আছে … তুমি আসলে কি … কি কি করতে পারো নিজের পাওয়ার কে কি করে কন্ট্রোল করতে হয় তার কিছু ই জানো না। যেমন দেখো তুমি এটা কন্ট্রোল করতে পারবে??? বলতে বলতেই উনি হাত টা অদ্ভুত ভাবে উপরের দিকে তুললেন……
হোয়াঃ ……. আমি হাঁ করে দেখলাম বিশাল ডাইনিং টেবিলের উপর যত খাবার ছিল সব হাওয়ায় ভাসতে শুরু করেছে…..ঝোল টোল সমেত আমাদের মাথার উপর গোল করে ঘুরছে …..প্রফেসর যেদিকে হাত ঘোরাচ্ছেন খাবার গুলো ও ডিরেকশন্ চেন্জ করে করে নাচতে নাচতে চলেছে …….ঐ অবস্থায় প্রফেসর আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলেন…..কি?? কেমন?? আমি এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখে প্রথমে অবাক বিস্ময়ে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে ছিলাম, একসময় দেখলাম আমি ও মজা পেয়ে হাসতে শুরু করেছি …. আমার মাথার উপর গোল হয়ে ঘুরছে চিকেন রোস্ট…শেফার্ডস পাই…গ্রীলড্ ফিস্….. চকোলেট মাড পাই….অথচ একটু গুঁড়ো ও ঝড়ে পরছে না…
প্রফেসর হাসান এবার হাত টা নিচের দিকে নামালেন খাবার গুলো আস্তে আস্তে যথা স্থানে ফিরে এল। প্রফেসর আমার অবাক মুখের দিকে মজা মাখা হাসি মুখে তাকালেন….স্রোত তুমিও কিন্তু এটা এখনি করতে পারবে….. আমি জানি তোমার মধ্যে এই পাওয়ার টা এখনি আছে…কিন্তু যেহেতু তুমি এখনো নিজের পাওয়ার বা তাকে কি করে চালনা করতে হয়, কন্ট্রোল করতে হয় তা জানো না,….তাই এই যে আমি এগুলো কে আবার ঠিক জায়গায় ঠিকঠাক প্লেটে রাখতে পারলাম …সেটা পারবেনা ….হয়তো খানিকটা গ্রেভী তোমার বিউটিফুল মিরান্ডা ম্যামের বিউটিফুল চুলে ভরা মাথার উপর গিয়ে পড়লো …(.উনি হো হো করে হেসে উঠলেন….দৃশ্য টা কল্পনা করে আমিও হাসি চাপতে পারলাম না অবশ্য )…..সেটা যাতে না হয় তাই তোমার বা তোমাদের মতো পুঁচকে কিন্তু পাওয়ারফুল ফ্লেজলিং বা ছানা দের ইসপ্যামা তে নিয়ে গিয়ে ভালো করে ট্রেনিং দেওয়া হয়….তারপর ধরো…. তোমার ফাইভ এলিমেন্টের মধ্যে কোন্ বা কোন্ কোন্ এলিমেন্ট কে কন্ট্রোল করার ক্ষমতা আছে…. নাকি অনিন্দিতা র মতো সবগুলোই….. তারপর তুমি যে ভ্যাম্পায়ার না উইচ্ নাকি গডেস্ থিং সেসব ও বুঝে শুনে……..
ব্যস্ ….এনাফ্ ইস্ এনাফ্ হাসান….. এক্ষুণি তোমার এই সব ছেলেমানুষি বন্ধ করো। জাস্ট শাট্ ইয়োর ব্লাডি মাউথ্ আপ।
আমি আর প্রফেসর আদিল হাসান দুজনেই চমকে ফিরে তাকালাম……মিরান্ডা উঠে দাঁড়িয়েছেন …. ওনার অপূর্ব সুন্দর মুখ রাগে এতো টাই লাল এবং বিকৃত হয়ে গেছে যে আমার মনে হল ওনাকে ঘিরে একটা আগুনের বলয় পাক খাচ্ছে…..যে কোন মুহুর্তে সেই আগুন সব কিছু পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেবে ……আমি ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে প্রফেসর হাসানের দিকে তাকালাম…. দেখলাম…. ওনার মুখটা অপমানে লাল হয়ে উঠেছে। কিন্তু মিরান্ডা ম্যাম সেটা তে পাত্তাও দিলেন না…
** তুমি ইসপ্যামা র হাই প্রিস্টেসের কনসর্ট হতে পারো কিন্তু তোমার কোনো অধিকার নেই তুমি তার অনুমতি ছাড়া বা কোনো বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরের জগতে শুধুমাত্র মজার জন্য নিজের পাওয়ার শো করবে…. নাকি তোমার অবস্থাও অনিন্দিতা র মতো হোক তাই তুমি চাও…..
….. অনিন্দিতা কে নিয়ে আর একটাও কথা নয় মিরান্ডা…….
প্রফেসর হাসান রক্তলাল মুখে আমার দিকে ফিরলেন….স্যরি স্রোতস্বিনী…. আমি একটু বাইরে যাচ্ছি…… তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে ডিয়ার,…..পরে তোমার সাথে লম্বা আড্ডা দেওয়া যাবে….সময় তো রইলোই…..
প্রফেসর হাসান একবার ও আর মিরান্ডা ম্যামের দিকে না তাকিয়ে দড়াম করে দরজা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন….. খাবারের একটাও টুকরো না মুখে দিয়েই ……..