“আমি থোইবা।তামোর সবথেকে ছোট ভাই। আমি ব্যাঙ্গালোর থেকে এসেছি। তোমাকে দেখতে এসেছি থারো।”
” আ… আ….মা….র মনে আছে।”
“জানি তো, তুমি আমায় মনে রেখেছ, আমার মিষ্টি বুড়িমা। কিন্তু আমি রাগ করেছি তোমার ওপর। বৌদি বলছিল তুমি নাকি খাওয়া-দাওয়া একদম ছেড়ে দিয়েছ।” থোইবা ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল থারোর মাথায়।
“থোইবা, আমার বাচ্চাগুলো না খেয়ে আছে।” তামোর বৌ খুব মৃদুস্বরে বলল। ” তুমিও তাড়াতাড়ি চলে এসো। আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারিনা এখানে। আমার ভয় হয়। ওর জন্য আমি আমার স্বামী-সন্তানদের হারাতে চাই না। তুমি তো দুদিনের জন্য এসেছ। তোমার হয়তো কিছু আসে যায় না ।” বৌটি চঞ্চল হয়ে উঠছিল।
“ঠিক আছে বৌদি, আমি বেশিক্ষণ নেবোনা। আসছি এক্ষুণি। তোমার হাতের ঝাল ঝাল মাংসের কষা খাবার জন্য আমি মুখিয়ে আছি।” চওড়া করে হাসল থোইবা।
“হ্যাঁ। প্রয়োজনের থেকে এক মিনিটও বেশি নিও না লক্ষ্মীটি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে এসো। আমি এগোলাম।” আর একবারও থারোর দিকে না তাকিয়ে ফনেকটা গুটিয়ে নিয়ে চলে গেল বৌটি।
“তাহলে বুড়িমা, তুমি সত্যিই একটা জীবন্ত আশ্চর্য, কি বলো! “
“কি…ই..ই…. ব..লছ?” খুব কষ্টে মুখ খোলে থারো।
“তোমাকে দেখেই বুঝতে পারছি তোমার হার্টে বড় রকম গন্ডগোল। কিডনি ও কাজ করছে না, এমনকি তোমার ফুসফুস – সেও ভীষণ কমজোরি হয়ে পড়েছে, তাই না?” থোইবা আলতো করে হাতে চাপ দেয় থারোর।
“আ.. আ…মি জা..নি না।” থারো মাথা নাড়ে।
“কিন্তু সেটাই বাস্তব। আর তুমি তোমার সময়ের সমস্ত আত্মীয়দের মধ্যে একাই এই পৃথিবীতে শ্বাস নিচ্ছ। এমন কি তোমার নিজের সন্তানেরা – তারাও তো কেউ বেঁচে নেই । আশ্চর্য না! তুমি প্রায় তিন তিনটে প্রজন্মের একমাত্র সাক্ষী।” খুব মজার সুরে কথা বলছিল থোইবা।
“ওরে দুষ্টু, আমার বিয়ে হয়েছিল সেই কোন ছোটবেলায়।’ খুব কষ্ট করে শব্দগুলো বের করে আনতে হচ্ছিল ওকে। থারো বলে চলল, ” আর আমার ছেলেদের কথা কি বলব – অবাধ্য সব। মদ্যপ, আরও কি না করেছে – সেই জন্য জীবনও ওদের ক্ষমা করেনি। তাড়াতাড়ি চলে যেতে হয়েছে সবাইকে।”
“তা ঠিক।” আন্তরিক ভাবে হাসে থোইবা। ” তা বুড়িমা, তুমি খাওয়া ছাড়লে কেন ? শুনলাম গত দশ বারো দিন তুমি কোন শক্ত খাবার খাওনি? কেন ?”
“হা হা হা আমি ঠিক বলে দেবো বৌদিকে। আচ্ছা ,আজ আমি তোমায় রান্না করে খাওয়াবো। আমি ব্যাঙ্গালোরে একা থাকি তো – অনেক রান্না শিখতে হয়েছে আমায়।” এবার আরেকটু ঘন হয়ে আসে থোইবা তার কাছে।