• Uncategorized
  • 0

সাতে পাঁচে কবিতায় সুজাতা মিশ্র

ওদের আত্মায়

রাত বাড়লে আমার পাশে এসে বসে গাছ।
ঠিক গাছ নয়, ওরা বলেছিল ওরা আত্মা।
গাছেদের আত্মা।
গল্প গুজব শুরু হয় ওদের সঙ্গে।
টসটসে ফল ঝুলিয়ে কেউ আমাকে বাতাস দেয়
কেউ দেয় মসৃন ছায়া।
রাত আরো বাড়লে আমার ভীষণ গরম লাগে
ওরা বলে, ‘এইতো বাতাস দিচ্ছি, কেন পাচ্ছ না?’
রাত বাড়লে খটখটে রোদ্দুর নেমে আসে হঠাৎ।
ভীষণ উত্তাপে মাথার স্নায়ুরা কিলবিল করে ওঠে,
ওরা বলে, ‘ছায়া সুনিবিড়…’
খিদেয় পেটের ভিতর কেঁদে ওঠে শূন্যতা।
ওরা এগিয়ে দেয় আম জাম লিচু।
আমি হাত বাড়িয়ে নিয়েই মুখে দিই পুরে
খট করে সামনের দাঁত ভেঙে যায়।
এত শক্ত ফল!
ওরা হেসে উঠে বলে, ‘এতো প্রগতি!’
আম হাতে নিয়ে দেখি আম নয় ও মাল্টিপ্লেক্সের
ক্ষুদ্র সংস্করণ,
জামে দেখি মেট্রোর ইঞ্জিন
লিচু আপেল সবেই দেখি ইঁট সিমেন্ট কংক্রিট।
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করি,
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে…
আমাকে বাতাস দাও!
আমার খিদে পেয়েছে!
আমায় খাবার দাও!
আমায় ছায়া দাও! বৃষ্টি দাও!
আমায় জীবন দাও!
আমায় বাঁচতে দাও!
ওরা আমার সঙ্গে গল্পগুজব করতে এসেছিল।
এই নিতান্ত ধ্যানোর প্যানোর শুনে উঠেই যাচ্ছিল,
নিতান্ত দয়াপরবশ হয়ে ছুঁড়ে দিল ওদের পাতা।
তাই চিবিয়ে খেতে গিয়ে দেখি, ভীষণ নোংরা
ভীষণ বিচ্ছিরি স্বাদ।
পেট ভরার আগেই
দলা পাকিয়ে বেরিয়ে এল টাকার বমি।
আমি আবার চিৎকার করে উঠি
আমার খিদে পেয়েছে!
আমার খিদে পেয়েছে!
রাত বাড়লেই আমার কাছে এসে বসে ওরা
ওদের কাছে জীবন চাইতে চাইতে…
এভাবেই একদিন আমিও চাপা পড়ে যাবো
ওই কংক্রিটের অট্টালিকার নীচে
ওদের আত্মায়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।