সরস্বতী পুজো স্পেশালে গৌতম বাড়ই
কাব্যগল্প
রক্তিম
এ মনে তরঙ্গ দোলাচালে আসে মন উড়ানের
সঙ্গে থাকে চির সবুজ প্রেম আমার।
ত্রিধা যখন অবরূদ্ধ
দক্ষিণা বাতাসে বসন্ত আকাশে
সেই প্রেম আমার চির ভাস্বর ধ্রুবতারা হয়ে জ্বলে
হৃদয়ের অন্তরে অহর্নিশ।
একদিন পাড়াগাঁয়ে ছেলে
করুনার ঠাঁই,এ হর্ম্যে
ছেড়ে আসি দারিদ্রের জীর্ণ কুটির
এককোনে বাস।যেখানে তাদের
বাতিল স্তূপের রাশ।
কলেজের পাঠে দিন কাটে,সঙ্গে
আর কিছু ফরমাশে, ছোটোখাটো দরকারে।
লাজবন্তী
পাড়াগাঁয়ের ছেলেরা শুনেছি
বেশী সুবিধার হয় না।খাল ধরেই নাকি
কুমীর শেষে। তুমিতো বাপু নিপাট ভালো ছেলে
শুনেছি,প্রথম বছর অনার্সে তোমার কলেজে তুমি প্রথম।
যদিও তোমার কলেজ আমার কলেজ এক নয়।
আমি তো সেন্ট জেভিয়ার্স। তুমি তো আশুতোষ?
বোস্টিং করোনা।যেমন আছো,
তেমন করেই থাকো।
দুটো বছর নিজের লড়াই নিজের সাথেই করো।
তারপরেতে একটা বাঁচার মতন
চাকরী জোগাড় করে
গ্রামের বাড়ি ভীষণ ভুলে গিয়ে
শহর ছেড়ে শহরতলী থেকে
এই শহরে ডেইলী এসো লোকাল ট্রেন ধরে
আর মনের মতন একটা বড়ো চাকরী পেলে
একটা বৌ আর দুটো বাচ্চা নিয়ে
তোমার জীবন কাব্য লিখো।
রক্তিম
তুমি তো অবাক ভবী দ্রষ্টা
মানুষের জীবনকথা বেশ গাঁথতে পারো।
অতই যদি সরলরেখায় জীবনকাব্য হয়!
মানুষ তখন মানুষ থাকে না।
মানুষ তখন আস্তাবলের ঘোড়া
মানুষ তখন পাখীর নীড়ে ফেরা
মানুষ তখন বন্য কোনো জীব।
জীবন শুধু উঁচুর ওপর বাঁধা?
ভুল!জীবন যদি খোঁজো আর
জীবন যদি বোঝো,
জীবন অস্তাচলের ঐ হারানো দ্বীপ।
যদি কোনোদিন জীবন ছুঁতে চাও
তবে লক্ষ প্রাণের চঞ্চলতায়
নিজেই সঁপে দাও।
তোমার কাছে তোমার জীবন
আমার কাছে আমি।
কৃতজ্ঞতা জানাই বারবার, পেয়েছি ঠাঁই এ অট্টালিকায়।
তোমরা সকলে আমার করুণা দাতা
তবুও যেদিন বলবে, সেদিন চলে যাবো।
অবাঞ্ছিতর লাঞ্ছনা এ বুকের নীরব যন্ত্রণা
কিছুতে তা সইবে না।
সেদিন সত্যি চলে যাবো।দুটো বছর
আর যদি না হয় অনুমতি।
লাজবন্তী
তোমার কাছে এলাম। তোমার তো শুনি,
কলকাতাতে অনেক গার্লফ্রেন্ড।
ভিক্টোরিয়া গড়ের মাঠে যাও?
গোটাবেলা গঙ্গা ধারে? ছই ছপছপ নৌকায়।
বিকেল হলেই মনটা কেমন করে?
তোমারও কি পারু টারু কিছু আছে নাকি!
ঐ গাঁ গঞ্জে পড়ে?
রাত হলেই তাদের জন্য মনটা তেমন কিছু করে?
সোজাসাপ্টা উত্তর দেবে,আমরাও সবাই
এই মহানগরের সোজাসাপ্টা মেয়ে।
প্রেম ট্রেম যদি করেই থাকো,
ঝেড়ে কাশবে আরো।
রক্তিম
কি করে বোঝাই তাকে,
মানুষ কি প্রেমশূন্য হয়!
আমি আবার বিশ্ব প্রেমিক নাকি?
ঘাটে ঘাটে ঐ প্রেমের তরী বাই।
আমার যে ভালোবাসা তা মলাট ভেতর থাকে
যেখানে তে ডুবটি দিলে
আমি জ্ঞান সাগরে ভাসি।
আমার আবার গড়ের মাঠে ঘোরা!
এতো গরীবের রোগটি বলে ঘোড়া।
তবে আমার বেশ ভালোটি লাগে
লাজবন্তী এই ঘরখানাতে যখন
আসে।অনেক আলো নিয়েই আসে।
সেই আলো ও চলে যাবার পরেও
আমার মনে আলোয় আলোয় ভাসে।
লাজবন্তী
তুমি তো জানি
এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে, ভীষণভাবে উজ্বল হয়ে থাকবে।
রেজাল্ট যেদিন বের হবে।তোমার রেজাল্ট আমার রেজাল্ট একসাথেই তো হবে।
সেদিন তুমি আমায় নিয়ে
অথবা আমি তোমায় নিয়ে
পার্ক স্ট্রিট পিটার ক্যাটে যাবো।
সেদিন তুমি আমার সাথে একরাশ
গল্পকথায় মজবে।জানো, সেদিন আমি একটা
সুইট ড্রীম মানে বেশ মিষ্টি মিষ্টি স্বপ্ন দেখি একটা,
তুমি আকাশেতে উড়তে উড়তে
আমায় এই হাত বাড়িয়ে,ঠিক এইভাবে
তোমার দুহাত তুলে ছোঁ মেরে
আমায় তুলে নিয়ে আকাশটাকে উড়ছো।
তারপরেতে নানা রঙের খেলা।
ফুরিয়ে গেলো আমার স্বপ্নবেলা।
তুমি এই গোলাপটি রাখো—-
এই গোলাপটি শুকিয়ে গেলেও
দেখবে এর গন্ধ কখনো শুকোবে না গো।
আদ্র হলো সেই যে যাবার বেলা।
সান্দ্র হলো বুকের ভেতর প্রেম।
রক্তিম
জীবন কি আর সরলপথে বয়
আমার জীবন ফিরে গিয়ে শহর থেকে
মাটির টানে মাটির পরে মেশে।
জীবনেতে অনেকদূরে গেছি
পড়াশোনায় মনটা নিখাদ ফেলে।
অনেক পরে একদিন খবর আনতে গিয়ে
লাজবন্তী আমেরিকায়, বিয়ের পরে আছে।
কলেজ পাশের পরই।আমার জমে থাকা
সবুজ প্রেম।ফিরতি পথে আলোকবাতি নিয়ে
এই গাঁ গঞ্জে ফেরে।
আজও আমার কথা বাকী আছে
পিটার ক্যাটের টেবিল চেয়ার পরে।
একবার শুধু বলতে হবেই—-
লাজবন্তী আমি তোমায় গোলাপগন্ধ
আজও ভীষণ ভালোবাসি।
যে বলাটা সেদিন ভীষণ গোপন ছিলো।
আজ দেশ বিদেশে আমিও অনেক ঘুরি
গোলাপ সুবাস নাকে লেগেই থাকে
আমি এই প্রেম গোলাপের ধারায়
অমনি বয়েই যাবো। তোমার গোলাপ গন্ধ ঠিক।
সেই গোলাপ গন্ধেই বাস।
লাজবন্তী তুমি আমার সংগোপনে
লাখো গোলাপ প্রেম।ভালোবাসার
সেই ঐশ্বর্য রাজ।
[সরস্বতী পূজা তো বকলমে একসময় আমাদের ভ্যালেন্টাইন ডে ছিলো। সেদিকে তাকিয়ে আমার লেখা। একটু ভালোবাসার কথাও থাক না পৃথিবীতে।]