• Uncategorized
  • 0

সমুদ্রমন্থন মহাকাব্যে ড. রাজুব ভৌমিক

প্রথম সর্গ (১-১১০)

বহুত কাল তদানীং, রৈবত মন্বন্তরে,
বিভু আবির্ভূত, ইন্দ্র নামে, এই ব্রক্ষ্মান্ডে।
ভূতরয়গন হলো, দেবতার সরূপে,
হিরণ্যরোমা, বেদশি, উর্ধ্ববাহুরা সহ,
ইত্যাদি হইলেন যে, পূজনীয় সপ্তর্ষি।
রৈবত মন্বন্তরে, মা বিকুন্ঠার ও পিতা
শুভ্র দেবের ঘরে, সে বৈকুন্ঠ অধিপতি
প্রদর্শনার্থ সরূপ, সবারই জ্ঞানেতে।
স্ত্রী লক্ষ্মীর সে যাজঞা, নিয়মিত বাসনা
পূর্ণতে ন দ্বিধা স্বামী বৈকুন্ঠ, সৃষ্টি তাই
বৈকুন্ঠলোক, শক্তির প্রকাশ স্ত্রী সম্মুখে।
পক্ষপাতদুষ্ট স্বামী বৈকুন্ঠের ইচ্ছাতে,
ওঘ পাপ করে ইন্দ্র, শাস্তিতে বিমুখতা,
অপরঞ্চ অসুরের ক্ষুদ্র কার্যকলাপে,
ফুসিয়ে বৈকুন্ঠ তার অগ্নিমূর্তি রূপেতে,
প্রধ্বংস করে অসুর, দ্বিধাহীন বৈকুন্ঠ।
দেবরাজ ইন্দ্র সর্ব, মনের পরিতোষে
পাপ করে তাই হর্ষে, কুমন্ত্রণা সর্বত্র,
ভুক্তভোগী ধরিত্রী ও মর্তের মানুষেরা।
অসুরাধম ইন্দ্র সে, চরিত্রহীন বদ,
সে দ্বাপর মন্বন্তরে, বালক বৈকুন্ঠের
গোবর্ধন পর্বতের পূজাতে, দম্ভী ইন্দ্র
বাত্যাবিক্ষুব্ধ, তুমুল যুদ্ধ দ্বাপরেতে
বালক বৈকুন্ঠ সঙ্গ, অভিহত লজ্জায়।
তদ্ব্যতীত কামু ইন্দ্র, ছদ্মরূপ ধার্যতে
গৌতম মুনির হেমা স্ত্রী অহল্যা সঙ্গম,
ধর্ষক ইন্দ্র হাসিয়া বৈকুন্ঠের সম্মুখে,
“উপকার করি তবে, গৌতম ধ্যানভঙ্গ,
নতুবা এ দেবলোক, যেতো তার দখলে”।
ধর্ষক ইন্দ্রের জাল্ম ক্রিয়ার পারম্পর্যে,
অভাগী অহল্যা, ক্লেশ দিনানিপাত করে,
স্বামী গৌতম আমর্ষে, শাপে তার অহল্যা,
“অহল্যা সর্বপাপী! যে অপকর্ম করিলে,
মোর নিরূদ্দিষ্টে, ইন্দ্র সমেত সহবাস!
সওয়ালের যোগ্য কি হীন কুকান্ড! ইন্দ্রে?
বশত এই আশ্রমে, বায়ুমাত্র ভক্ষনে,
অনাহারে পট্ট শয্যা, সহস্র সৌরবর্ষে,
কারূণ্যে অনুশোচনে, একাকী এ জঙ্গলে,
যতদিন নাহি রাম, ভ্রমন এ আশ্রমে,
সংস্পর্শ দেয় পায়ের, মুক্তি তোর জীবনে।”
অপিচ গৌতম শাপে, ইন্দ্র সে নপুংশক!
পুরুষত্বহীন ইন্দ্র, বৈকুন্ঠকে মিনতি,
দেবতাপ্রিয় বৈকুন্ঠ, ইন্দ্রের আর্জি শুনে
পুরুষত্ব দেয় ফিরে, অহল্যা নাহি জানে;
ধর্ষিতা অহল্যা বিনা কারনে, অনাহারে
জঙ্গলে একাকী কষ্ট প্রভূত, অসুর কে?
অপরত্র বৈকুন্ঠ সে কৃষ্ণ রূপে মামীতে,
প্রেমে মজে অহর্নিশ, সমীহ না সমাজে;
পরস্ত্রীতে পরকীয়া, করিয়া সর্বে অন্ধ,
জগৎ খেলে প্রেম খেলা, কানাইের জন্মান্ধ।
পালক মাতার ভ্রাতা, সে আয়ান ঘোষ,
যশোদার মাণবক, কৃষ্ণের কত দোষ;
আয়ান ঘোষের পত্নী, রাধিকা লজ্জাহীন,
ভাগ্নে মিলনে প্রমোদ, তা সভ্যতার ইতি।
বৈকুন্ঠ তার মায়াতে, রাধিকাকে নাচায়,
বাঁশির মধু সুরেতে, ক্ষমতার বড়াই;
এতদ্ভিন্ন সে বৈকুন্ঠ, জগতকে বোঝায়,
“করি লীলা আমি মূর্খ, জীবনকে শিখাই”।
কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মদ-মাৎসয্য রিপু
কাম প্রথমে উল্লেখ, সাধে মানুষ বলে?
কাম তে জগতপিতা, বৈকুন্ঠ ধরাশায়ী!
সংযমহীন কামতা, অসুরের লক্ষণ?
রাজা হুহু জলে ক্রীড়া, স্ত্রী সুদ্ধ সরোবরে,
স্নান করিতে নামিয়া, ঋষির পা স্পর্শতে,
নির্নিমিত্ত বিরসতা,  রাজা হুহু অবাক;
বুড়া দেবল ঋষি সে বৈকুন্ঠ শক্তিগুনে,
অকস্মাৎ দিলেন শাপ রাজা হুহু কুমিরে,
তৎক্ষনাৎ বনিবেন তা, ঋষির অনুক্রম!
অভিশপ্তে রাজা হুহু, অতিশয় দু:খিত,
কান্নায় সে সরোবর ভাসায় প্রভু বলে;
‘দাও ক্ষমা মোরে ছোট্ট বলে’, দেবল ঋষি
উচ্চধ্বনিযুক্ত বলে, অগাকান্ত রে তুই!
হবি কুমির এখুনি,  প্রগল্ভতার দোষে,
রাজা হুহু কান্নারোলে, ক্ষমা করো আমারে।
সর্বত্র ঠান্ডা বাতাসে, প্রকৃতি নিস্তব্ধায়,
মিনতি প্রভু বলিয়া, ঋষি অটল বলে
সামান্য গলে, একটু স্থিরচিত্তে ঘোষনা।
ঋষি কহিলেন রাজা হুহু বৈকুন্ঠ তোরে,
দিবে মুক্তি সে গজেন্দ্র-মোক্ষণে ‘আশির্বাদ’।
দেবল ঋষির রোষে বেচারা রাজা হুহু,
বনিলেন কুমির সে, জলক্রীড়া স্ত্রীসঙ্গে।
সমুদ্রমন্থন লীলা শুরু অজিতজন্মে,
চাক্ষুষ ষষ্ঠ মনুর আমলে, বৈরাজের
দেবসম্ভুতির গর্ভে বৈকুন্ঠ অবতার,
অজিত জন্মে ধরাতে, আরম্ভ দেবতার
অসুরাচরন, হয়ে কলঙ্ক ধরা তরে।
এ অজিত কূর্মরূপে, সহজ পৃষ্ঠে বহে
মন্দর পর্বত, করে সে সমুদ্রমন্থন;
নি:স্বার্থে সর্ব লাগিয়া, দেব করে চক্রান্ত।
অমৃত লাগি দেবতা, অসুরাধম বনে,
দেবরাজ ইন্দ্র আর বৈকুন্ঠ্য ষড়যন্ত্রে,
অমৃতলাভ সফল, দেবের অমরত্ব।
অপিচ অসুরাগন দেবতুল্য আদতে,
অমৃত হারিয়ে কাঁদে, জগত সাক্ষী রয়।
দুর্বাসা মুনির ধ্যান হইলে তা সম্যক্,
আনন্দ চিত্তে দর্শন, করিবে সে ভুবন;
কি কর্বুর এ সংসার, ভাবিয়া মর্মদেশে,
দেখিবো এই মৃত্তিকা, বায়ুতে যাবে মিশে।
চারিদিকে ধরিত্রীর রূপ ঐন্দ্রজালিক,
বনে বনে কয় কথা, এক ক্ষুদ্র শালিক;
দুর্বাসা মুনি দেখিয়া, প্রকৃতির এ রূপ,
হর্ষাবেশে বলে প্রভু, ধন্য তব সর্জন।
হাটতে হাটতে ঋষি দুর্বাসা, দেখে ইন্দ্র
ঐরাবত পিঠে যায়, কোন গন্তব্যস্থলে;
দেখি সে মুনি দুর্বাসা, ঐরাবত থামিয়া,
ইন্দ্র এবং ঐরাবত, প্রনাম দু’হাত দিয়া।
ইন্দ্র কহে, “মুনিবর, ইন্দ্রের প্রণামেতে,
ধন্য করুন দেবকে, বৈভব স্বর্গলোকে”;
“এ কোন সুকর্মে হলো, সাক্ষাৎ যে ঋষিবর!
ধন্য এ ভুবন প্রভু, ধন্য তব আধার।”
চলবে….
বি.দ্র: সমুদ্রমন্থন মহাকাব্যটি ড. রাজুব ভৌমিকের সৃষ্টি করা মালতী-অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা হয়েছে।
মালতী-অমিত্রাক্ষর ছন্দ: প্রতি ছত্রে ১৫ টি অক্ষর, প্রতি ছত্র বা চরণ আট এবং সাত মাত্রায়, এবং চরণগুলির অন্ত্যবর্নের মিল থাকেনা।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *