রম্যরচনায় সম্পূর্ণা মুখোপাধ্যায়

গেছোদিদি

গাছ কয় প্রকার ও কি কি এই নিয়ে আমাদের বিস্তর পড়াশুনা শিশুকাল থেকে। আমাদের উদ্ভিদবিদ্যার শুরু – “রাম বনে ফুল তোলে , হাতে তার সাজি “. ফুল জিনিসটি কি, খায় না মাথায় মাখে ( কিছু ফুল খেতে খাসা হয় যথা কুমড়োফুল এবং বকফুল ভাজা সে কথা পরে ) , বন ব্যাপারটা কি , সেটা না জানলে যে কোনো রুচিশীল শিশুর পক্ষে এই অসাধারণ কবিতার আসল মর্মার্থ বোঝা সম্ভব নয়. তো শেখার শুরু এভাবেই ।
এবার ইস্কুলে ভর্তি হলে Herb , Shrub , Tree ( গাছড়া , গুল্ম /ঝোপ , গাছ ) এই তফাৎ শিখতে হয়. শুধু পড়লে হয়না, তার সঙ্গে সৃজনশীল ছবি চিপকাতে হয় , এবং তিনটের ফারাক কি সেই নিয়ে ৪ নম্বরের উত্তর লিখতে হয়. আমার মতো যাদের আঁকা দেখে সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায় “সূর্যাস্ত না পিসিমা বোঝা যায় না “, তাদেরকে বেশি বেশি করে আঁকা মকশো করতে হয় ফলে আমার গাছজনিত বেশ কিছু স্মৃতিকোষ গজিয়ে গেছে।
সেই জন্যেই সেদিন গেলো মাথাটা গরম হয়ে. ভেগান হিসেবে আমার বেশ (বদ )নাম আছে, – আহ ,ভেগান বোঝেন না তো ? ভেগান হচ্ছে ঘাসপাতা খেকো প্রাণী , দুধ না খাওয়া বেড়াল, প্রাণীজনিত কোনো দ্রব্য দেখলে আমরা লেজ তুলে ম্যাও বলে হাওয়া হয়ে যাই , কারণ পরিবেশের ভালো করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছি। ফলে যা পরিমানে ফলপাতা খাই তাতে আমাকে গেছোদিদি বলা যেতে পারে সহজেই। আমার বদ্ধ বিশ্বাস শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় আমাদের কথা ভেবেই “সবুজের অভিযান ” কবিতাটি লিখেছেন , পষ্ট কথায় বলা আছে , “আয়রে সবুজ , আয়রে আমার কাঁচা “. এ তাঁর দূরদর্শীতার এক বিরাট পরিচয়।
এহেন সবুজ এবং কাঁচা এবং আমার হরবখত খাদ্য নিয়ে জ্ঞান দিতে এসেছিলো এক বেয়াকুব কদিন আগে , “পালং গাছের ” উপকারিতা কত সে জানাতে। এই লোকডাউনের খাতিরে আজকাল দুধ খাই বলে এমনিতেই মেজাজটা খাট্টা হয়েছিল ,ইটা শুনে সব স্মৃতিকোষ একেবারে কাঁই কাঁই করে উঠলো। “কোন পালংয়ের গাছ দেখেছিস তুই অখাদ্য , ওটা একটা shrub ! shrub ! ঝোপ বুঝিস ঝোপ ? নাকি ছবি এঁকে দেখাবো ?” বলে পেন্সিলের দিকে হাত বাড়াতেই খেয়াল হলো পেন্সিলদানিতে একটা পেল্লাই ভুঁড়ি ফ্যাঁসানোর উপযুক্ত কাঁচি ও আছে। আমার জ্ঞানদাতা সেই দেখেই পত্রপাঠ কেটে পড়লো কিনা কে জানে। শক্ত কাঠওয়ালা কান্ড ছাড়া গাছ হয়না সেটা ওদের ইস্কুলে নিশ্চয় শেখায়নি।
এই ভাবতে ভাবতে আসছি দেখি আরেক এন্থু কাটলেটের ফোন (এন্থু কাটলেটের বাংলা চেয়ে লজ্জা দেবেননা, এইরম চরম চিত্রানুগ শব্দবন্ধ বিশ্বে খুব কম আছে ) , “ভাই, তোদের ওদিক থেকে বলছে ৬ মাসে ভ্যাকসিন বানিয়ে দেবে , তবে আমার নাচতে নাচতে কবে বেরিয়ে পড়া উচিত ? ”
আমি খুব গম্ভীর ভাবে বললুম যে হুঁ , আমার বাড়ির সামনে একটা গাছ পোঁতা হচ্ছিলো বটে, আর কদিনের অপেক্ষা, ওর একটা শক্ত কান্ড গজাবে, তারপরেই অনেক ঝাঁকড়া ডালপালা আর প্রত্যেক ডালে ডালে ভ্যাকসিন ফলবে, আমরা ঝাঁকা দেব আর টপাস টপাস করে নিচে পড়বে।

ভারতে কি ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যা চলছে ? ফোনটা কেটে গেলো, আর কল করতে পারছিনা !

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *