রম্যরচনায় ইন্দ্রাণী ঘোষ

দাশু ও লকডাউন

সেদিন বিকেলে বৃষ্টি ভেজা গোধুলিতে দাশু দেখা করে যাওয়ার পর মনটা বেশ আলো আলো হয়েছিল. কেন জানি না দাশুকে দেখলেই মনে হয় এ ব্যাটা সমস্ত ঠিক করে দিতে পারে সে অতিমারি বা যুদ্ধ, দাঙ্গা যাই বল না কেন. দাশু ‘স্টে সেফ’ এর পরোয়া করে না কারন তাঁকে ভাইরাস দেখতে পায় না. তাঁর যাতায়াত রামধনুর চাকায় চেপে বা চাঁদের আলোর নৌকা বেয়ে. রবিবার অনলাইন ক্লাসের তাড়া থাকে না, তাই আলসেমির সকাল.
গলিতে প্রচুর সব্জিওয়ালা, মাছওয়ালা যায় তাদের থেকে সওদা করে নিলেই হল. বাকি রবিবারের রান্না একটু দেরিতে চাপালেও অসুবিধা নেই. স্নান সেরে ছাদে কাপড় শুকোতে দিতে গিয়ে দেখি দাশু ব্যাটা আবার এসেছে. জিজ্ঞেস করি ‘কি রে তুই আবার আজকে?’ , দাশু কোন উত্তর দেয় না. গম্ভীর হয়ে হিসেবের একটা জাব্দা ডায়েরিতে কি সব লিখে চলে. আমি দাঁড়িয়ে থাকি. দুরের কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া গাছের রঙবাহারে চোখ আটকে যায়. কতক্ষন দঁাড়িয়ে ছিলাম জানি না. দাশু জোরে একটা গলা খাকরি দিতে সম্বিত ফিরল. আমি বল্লাম ‘কি বলবি বল রে, আজ আমার তাড়া নেই,’ দাশু বলল ‘কি রাধবি আজ?’ আমি বললাম “চিকেন ম্যারিনেট করে রেখেছি, ডাল সেদ্ধ আছে আর আলু কুমড়ো ভেজে নেব, তবে খেতে বসে যে কদিন ধরে সেই বীরভুমের রাঙা মাটির দেশের কথা মনে পড়ছে রে, একে গ্রীস্ম, জল নেই সে দেশে, তারপর আবার এই করোনা তাণ্ডবে লোকগুলো কাজেও বেড়োতে পারবে না. ওই রাজার রাজা যে ওখানকার পল্লী উন্নয়ন নিয়ে এত ভাবলে, তা কোন কাজে এল কি? ‘ দাশু বললে’ এসেছে ওই বূড়ো রাজার ইস্কুলের লোকেরা গাড়ি করে ত্রাণ নিয়ে গ্রামে যাচ্ছে. এই তো সেদিন রাধারানী নামে এক ভিখারিনি দু ঘটি জল খেয়ে বসেছিল কখন তাঁরা মানে ওই বুড়ো রাজার ইশকুলের লোকেরা ত্রাণ নিয়ে আসবে. তোর চেনা এক দিদিও ছিল, লাল শাড়ী পড়ে, রাধারানী তাঁকেই মা অন্নপূর্ণা ভেবেছিল. ‘ হ্যা অর্পিতা দি রাধারানীর কথা লিখেছিল বটে. তুই ওখানে ছিলি বুঝি?’ দাশু বললে ‘হ্যা ছিলাম তো, সব দেখেশুনে এলাম’ আমি আবার শুধোই ‘কি বুঝলি রে দাশু?’ দাশু বললে ‘দ্যাখ ভালবাসাই শেষ কথা, ভালবেসে যা করবি তা সফল হবেই, এই বুড়োর ইশকুলের মানুষগুলো কাজ করছে তা তো নিখাদ মাটিকে ভালবেসে, ভালবাসতে তো ওই বুড়ো রাজাই শিখিয়ে দিয়ে গেছে.’ আমি বললাম ‘চল আইস্ক্রীম খাবি?’ দাশু বলল ‘নিয়ে আয়. আমি গোটা ছয়েক আইস্ক্রীম এনে রেখেছিলাম, কবে দাশু এসে হাজির হয়, এবারে আমাকে সেদিনের আমমাখা খাওয়ানোর বদলে আইস্ক্রীম দিতেই হবে ব্যাটাকে. ছখানা আইস্ক্রীম জোব্বার ভিতরে ভরে দাশু খর রোদ্দুর মাথায় নিয়ে ছাদের পাচিল থেকে দুই লাফে নেমে গেল. আমিও গুটিগুটি পায়ে রান্নাঘরে ফিরলাম ডাল রাধতে হবে রাধুনি ফোড়ন দিয়ে, ডাল রান্নাটা শিখে ফেলেছি, কুমড়ো, আলু ভাজাও, চিকেন তো সবাই রাধে ওটা কোন ব্যাপার না, শুধু বীরভুমের ঝোল ঝোল আলু পোস্তটা আর একবার ঝালিয়ে নিতে হবে, . দেখি দাশু যদি আবার এসে বলে ‘রেধে দে কয়েকজন কে খাওয়াব, তখন দেখিয়ে দেব ব্যাটাকে রেধে খাওয়াতে আমিও পারি, সেদিন যে আমার রান্না করা নিয়ে ফ্যঁাচ ফ্যাঁচ করে মেলা হেসেছিল।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।