মেহেফিল -এ- শায়র হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়

আগুনের শিখা

একদিন পেট্রোল এসে নেভাবে তোমাকে
আগুন, আগুন হয় না কখনো
ফোটে না তা র লেলিহান জিভ
যতক্ষণ না ইন্ধন থাকে আমি আলো থেকে অন্ধকারে
চলতে চলতে
দেখেছি
বিষল্লকরণীর আভা ,আমি সময়কে আড়মোড়া
ভাঙার যেই না সুযোগ দিয়েছি
অম্নি ঠগ খুনিআর হত‍্যাকারীএসে বলছে তফাত যাও …
তবু এই মরপৃথিবীতে প্রতিদিন একটি করে দেবশিশুর জন্ম হোক
একশো ফুলের বাগান হাজার নদীর কল্লোল
লক্ষ লক্ষ সরলবর্গীয় বৃক্ষের ভালোবাসা তাকে ছুয়ে যাক ,ভালোবেসে পাখি ও ময়ূর গান গাক
তোমার পায়ের ছাপ আলপনা হয়ে ফুটে উঠুক
পৃথিবীর বুকে…

প্রেমে কিংবা প্রতীক্ষায়

তুমি কি অভিমানীই থেকে যাবে? আমার বৃষ্টির মধ্যে প্রাচীন রচনার মতো এখনো উস্তাদ রাশিদ খানের ধূন বেজে চলেছে আমার
কানে, এই শ্রাবণে ঐশ্বর্যে ভাস্কর্যের কারুকাজ
নির্বাচিত সমুদ্র পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে আশ্রয় নিচ্ছে আমার শরীরে, ফের অনেক দিন পর হাওয়ারাও চিনতে পারলো আমায়
আমি শুধু তোমার চারপাশে নেচে নেচে
ক্রমাগত হালুম করে ভয় দেখাবো ভেবেছি
ঘুম ভেঙ্গে প্রথম আমার এই রূপ দেখে চমকে উঠবে তুমি, আমি তোমাকে গ্রীষ্মের দুপুর থেকে মুক্ত করব ,তুমি কি সত্যি সত্যি অধরাই থেকে যাবে। ?
তার ও পরে রক্তের ছলাৎছল বিষণ্ণতায় ডুবে গেলে মাঝে মাঝে রতিক্রিয়ার শব্দ শুনতে পাবো
তারপর রাত্রি শেষ হলে দুপাশে আমরা সেই দুজন, ফুল্লরা কালকেতু…
গল্পটা কেউ বিশ্বাস করবে না কোনোদিন
কিন্তু তুমি জানবে আমি জানবো
আর ভবিষ্যতের দূত…
অজানা একটা স্বর তোমাকে ডাকছে
বহুদিনধরে ,আজ এই আধো জ‍্যোৎস্নায়
আমরা দুজন সেই মন্ত্রোচ্চারনে লিপ্ত হব
প্রেমে কিংবা প্রতীক্ষায়
ব‍্যর্থ হয়ে যাতে পরিত্যক্ত হয় না কেউ…

অনন্ত সময়

কদম্ব গোধূলি তুমি, তুমি এসে অরণ্য টিলায় দাঁড়ালে,টিলাও গগনচুম্বী টলমলে এপিটাফ
সহসা যাজকের উর্দি কেড়ে নেয়
তারপর মেঘ আসে বৃষ্টি পড়ে ঝিরঝিরে উপত‍্যকায় ঝাঁ করে অন্ধকার নামে
এই ঋষিখোলা গ্রামে
তখন কী আশ্চর্য প্রেমের দেবীরাও
চোখের ইঙ্গিতে বলে ,এসো…
#
ডারউইন অথবা লামার্ক নয়
ফ্রয়েড ই তখন একচ্ছত্রাধিপতি …
স্পন্দিত হয়, রেশ রেখে যায়… অপার্থিব প্রতিধ্বনি তোলে
মনে হয়, একা একা যে সমস্ত গাছ হাজার বছর ধরে মাথা তুলে আছে, বুঝি কেন এক একটি পাতা বিযুক্ত হতে লেগে যায় অনন্ত সময়…

 

ক্রমশ গিলোটিন

ছুরির ফলা এগিয়ে আসছে
তিন দুই এক শূন্য…
বিস্ফোরণ, নিরীহ বুর্জোয়া শব্দটির পাশে
এখন আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই
লড়াই মিছিলের মতো শুধু এক ধূসর পৃথিবী
একে একে ফিরে গেছে অক্ষৌহিনী সেনা
এখন কেউ তার কোনও হিসেব ও রাখেনা
বিমূঢ় বিক্ষোভে কান্নারত শৈশব
ঘন কুয়াশার ভিতর
ডুবে যাচ্ছে গাছের মর্মরধ্বনি
তুমি দেখেও দ‍্যাখো না
এখন আমাদের সব ই নিয়ন্ত্রিত
সত্য উচ্চারণে সহস্র গিলোটিন নেমে আসে
তুমুল বৃষ্টিপাতের ঘটনা আজ আর মনে পড়ে না
নি:শ্বাসের বায়ু ,উদ্ধারের আঙুল
বৌদ্ধযুগের ভাঙামূর্তির মতো
দমিত,স্বাধীনতাহীন…
বিষয় হারানোর মতো একটি অশেষ ধন্যবাদ ছাড়া এখন আর আমাদের কোনো গত‍্যন্তর নেই…

 

জন্ম দিচ্ছে মহাকাল

কিশোরীর ঈর্ষা করা মধুভান্ডে
আমাদের কৈশোর জ্বলে পুড়ে খাক
চারধারে শয়তানের মৃতদেহ
খন্ড খন্ড… আরেকটু ঘুমের জন্যে তারা
গাছপাহারায় গেছে
তাই পশুপাখিরা সব নিশ্চিন্ত
আমি ঘুমেদের নামকরণ করতে বেরিয়েছি
ফক্কড় ফকির আমি তামসতা সম্বল আমার
অবচেতনে সিন্ধু স্বরলিপি
সংখ্যা গণনা করতে করতে
গোধূলিতে গর্ভদোষ
ভুলিয়ে ফুসলিয়ে মাধবীকে যে নিয়ে গিয়েছিলো
যত বড় ঋষি ই হোক না সে
সেই গালবকে আমি ঘৃণা করি
আমার পৃথিবীতে কোনো স্থান নেই
যযাতিদের মাপা হয় শূন্যের ভগ্নাংশে
বিগত নির্জনে যতোই গাঢ় হয়েছে অন্ধকারের
মেধা, ততোই গুরুদেব বিশ্বামিত্রদের
মুখোশ আমি টেনে খুলে দিয়েছি
সেসবই আজ মিথ্যে দর্শনে বাধানো আয়না ছাড়া কিছু নয়…
এখনো শূন্যে নিরক্ষরেখার চোখে জল
ক্লীবদের শিশ্নদেশে
যুগ্ম নৈ:শব্দ‍্য দেখা দেয়
আর একটি বিকলাঙ্গ পৃথিবীর জন্ম দিচ্ছে মহাকাল…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।