হয়তো এভাবে একদিন অনূদিত হবে শতাব্দীর নীরবতা— মৌনতা নামে তোমাদের ভাষাবিজ্ঞানে যুক্ত হলো নতুন অধ্যায়— আমি ওই শ্যাওলা-সবুজ সমাধিতে ঘুমিয়ে গেলে তোমরা উদ্ধার কোরো তারাদের স্বরলিপি। আর আমার এপিটাফে জুড়ে দিয়ো একটি নমিত সুর— যার নিমজ্জন পাহাড়ে— নির্জনতার নিটোল নিস্তব্ধতায়।
যে জীবন পেরিয়ে এলাম, ‘শৈশব কৈশোর যৌবন বার্ধক্য’ এসব বাহারি নামের একেকটি সাঁকো ছাড়া আর কিছু নয়— আর মৃত্যু এক জ্যোতির্ময় পাখি, বুকের মাঝখান থেকে টুপ করে খুটে নেয় ‘প্রাণ’— সুস্বাদু শস্যদানা।
প্রতিদিন কুয়াশার কংক্রিট ফুটো করে যে এক বিন্দু আলো আসে— ঘুরন্ত লাটিমের মতো তাকে হাতের তালুতে নাচাই। এভাবে পুরো পৃথিবীটাই নিয়ে আসি হাতে।
তবু দেখো, ঈশ্বরের সাথে বন্ধুত্ব হলো না আমার—
আর তুমি, আয়নায় বিম্বিত পুরুষ— কেবলই ছায়ার মোহে জীবন আর মৃত্যুর চুক্তিনামায় রেখে গেলে অজস্র অমোঘ স্বাক্ষর—
বালিকামৌসুম
নিভৃত পদ্মপুকুর আর জলঢোঁড়া সাপের বন্ধুতা— এই ছাড়া কী থাকে সবুজ বালিকার— আমি তবু লালঠোঁট টিয়ের মতো বুকের গভীরে পুষে রাখি ভিনগ্রহপ্রেম। কেননা, ঠিকানা হারিয়ে ফেলা আগুনের সরোবর খুঁজতে আসা যে যুবক বলেছিল— বেঁচে আছি এক খণ্ড পোড়া কাঠের যন্ত্রণা নিয়ে— সে থাকে নেপচুন অথবা ইউরেনাসে— আর খসে পড়া আলোর চিঠিগুলো হাওয়ার পিয়নের কাছে পৌঁছে দেয় সিনীবালী রাতে—
সেই যুবকের দিকে একবার চেয়ে ফিরিয়ে নিয়েছি চোখ— আজ তাই ইজেলের সামনে দাঁড়িয়ে— ক্যানভাসে আঁচড় কেটে দেখি, ভুলে গেছি তার মুখ আঁকা— অথচ সেই দিন একটি বন্ধ্যা যুগ মরে গিয়েছিল— আর তার মৃতদেহ থেকে বেরিয়ে আসা লালের সংকেতে জেনেছিলাম— আমি— ভিনগ্রহচারী— রক্তজবা ফোটা আমারও রয়েছে এক আশ্চর্য মৌসুম—
আমার কিউরিওসিটি, কল্পযানে চড়ে পৃথিবীর প্রেম নিয়ে প্লুটোর প্রেমিকের কাছে যাই— আর দেখি— আমি— অসহায় দেবযানী— প্রিয় কচের কাছে হারিয়ে যাওয়া আগুনের হ্রদ ফিরিয়ে দিতে গিয়ে নিজেই কখন এক খণ্ড চুম্বক হয়ে গেছি!