আমাদের জন্ম দেওয়া হয় খেলা করার জন্য। বাবা মায়ের সব অপূর্ণ ইচ্ছার অভিশপ্ত ঝুড়ি মাথায় করে আসতে হয় এই সমাজে। তারপর একে একে শুরু হয় বাবা ও মায়ের অতৃপ্ত বাসনায় নিজেকে সাজানো। কখনো আমরা ডাক্তার সাজি, কখনো পুলিশ। কখনো আবার শিক্ষক তো কখনো শিল্পপতি। অনেক কিছুই সাজতে হয় আমাদের। যে সাজের নীচে চাপা পড়ে থাকে হাজারো লেখক, কবি, সাহিত্যিক অথবা গায়ক কিংবা বাদক এবং আরো অনেক কিছু। কখনো কখনো তো জন্মদান বড়ই গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দেখি; যে গর্বের দম্ভে সন্তান হয়ে যায় পুতুল তাই তাকে নিয়ে খুশি করা যাবে।
আরে! তাকে তো জন্ম দেওয়া হয়েছে। তাই যা খুশি করা যাবে। যা খুশি। জন্ম দেওয়া কি চারটি খানি কথা?
তাই আবারো কত-শত অপূর্ণ ইচ্ছে পূরণে জোকার সাজতে হবে তোমাকে, আমাকে বা অন্যকাউকে।
তবে এই স্রোতের পাশেই আছে আরো একটা স্রোত। যেটা আমাদের ডোবায় না, বরং ভাসিয়ে রাখে; বেঁচে থাকতে শেখায়, মরে যেতে নয়। আমাদের মুখে কোন মুখোশ দিয়ে দেয় না; বলে নিজের মতো করে সাজ। নিজের মত করে বাঁচ।
এই দ্বিতীয় স্রোতই জীবনের প্রকৃত অর্থ চেনায়; শেখায় কিভাবে নিজের চোখে নিজেকে দেখতে হয়, সমাজকে দেখতে। যেখানে প্রথমটি চাইবে তার উল্টো। তারা যখন দেখে তাদের সন্তান তাদের দেখানো পথে নয়, বরং নিজের চোখে পথ খুঁজছে, তারা তখনই বলতে শুরু করে তাদের সন্তান অবাধ্য, কথা শোনে না ইত্যাদি! ইত্যাদি!
এই শ্রেণির বাবা-মা হল চরম স্বার্থপর। শুনতে বড়ই খারাপ লাগলে এটাই যে সত্য – ধ্রুব সত্য বা বাস্তবোচিত সত্য যেটাই হোক না কেন।
যখন দেখে যে সন্তান তাদের স্বার্থ পূরণ করতে পারছে না বা চাচ্ছে না। তখনই শুরু হবে উত্তম-মধ্যম। আরে! উত্তম-মধ্যম কেনই বা দেবে না। জন্ম দিতে কষ্ট হয়নি বুঝি? সন্তান যে বিগড়ে যাচ্ছে তাকে তো পথে আনতে হবে।
যাই হোক অনেকেই আবার চান ওই দ্বিতীয় শ্রেণির বাবা-মা হতে- উপরের আলোচনা থেকে যে দুই শ্রেণি আমরা পেলাম তার মধ্য থেকে- তারা অবশ্যই চেষ্টা করবেন জন্মদানের আগেই এই সমাজ থেকে পালাতে।
তবে না পালিয়েও আপনি চাইলেই তা হতে পারবেন যা আপনি হতে চান; কিন্তু সে ক্ষেত্রে খুব বেশি সুবিধা যে আপনি পাবেন তার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি না।
সব দেখে শুনে বলতে ইচ্ছে করছে, সন্তান জন্ম দেওয়া কোন কৃতিত্বের বিষয় নয় বাপু বরং তাকে নিজের মতো করে বেড়ে উঠতে দেওয়াটাই বড় কৃতিত্বের।
এতক্ষণে অনেকেই হয়তো আমার চামড়া ছাড়ানোর জন্য ছুরিতে ধার দেওয়া শুরু করলো বোধ করি।