• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ৫) 

বল্টুদার বেড়াতে যাওয়া – ৫

এমন ভিন্ন ভিন্ন মানুষজনকে সঙ্গে নিয়ে বল্টুদা চলেছেন পুরীর পথে। আসলে সবাই মিলে এমন বেড়াতে যাওয়ার একটা অন্য অনুভূতি আছে। নতুন কত মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। একটা ছোটোখাটো ভারতবর্ষ যেন। নানা ধর্মের,বর্ণের মানুষ একসঙ্গে ঘুরতে চলেছেন। যেন সবাই মিলে একটাই পরিবার।
বাস চলছে রাতের রাস্তা দিয়ে। জাতীয় সড়কে গাড়ি দ্রুত গতিতে ছুটছে। গত রাত থেকে কত ঘটনা ঘটে গেলো। সেই রাস্তার ধাবাতে বসে রাতের খাবার খাওয়া,তারপর রাস্তায় পরে থাকা পেঁয়াজের বস্তা,আর সেটা নিয়েতো প্রায় নাটক হবার জোগাড় হয়েছিলো। বাসের ভিতর কুড়িয়ে নেওয়া কেজি কেজি পেঁয়াজ। নাটকীয় ঘটনা বলতে যা বোঝায়, প্রায় তাই হয়েছে রাস্তায়।
খুব সকাল নাগাদ ভুবনেশ্বর পেরিয়ে গাড়ি চলেছে পুরীর পথে। ভুবনেশ্বরে ছড়ানো বহু মন্দির রয়েছে,যেগুলো অত্যন্ত সুন্দর। কিন্তু পুরী পোঁছানোর আগে অন্য কোথাও গাড়ি দাঁড় করাবেন না বল্টুদা। শুধু খাবার বা অন্যকোনো কাজ ছাড়া। ভোরের দিকে চা দরকার,ফ্রেস হয়ে নেওয়াটাও দরকার। তাই রাস্তার ধারের একটি চায়ের দোকানের সামনে থামানো হলো বাস। বেশী দূরত্বের বাসগুলোর এই বিশ্রাম নেওয়ার জায়গাগুলো খুব সুন্দর হয়। খুব সুন্দর বলতে যে খুব সাজানো গোছানো,কিম্বা সবকিছু বেশ সুন্দর এমন সবসময় নয়। বরং সারাদিনের যেকোনো সময়ে এসব লাইনের দোকান গুলোতে একটা প্রানচঞ্চলতা থাকে।
ভুবনেশ্বর পেরিয়ে কিছুটা গিয়েই রাস্তার উপরেই বাঁদিকে একটি দোকান রয়েছে। ভালো চা পাওয়া যায় তাতে। রাস্তার উপরের দোকান। প্রায় গাড়ি এখানে এসেই থামে। কিছুক্ষন চা বিরতি চলে। ভোরের দিকে একটু ঝিমুনি ভাব আসে যদিও। আর সে সময়ে কিছু স্ন্যাক্স, বা চা,কফি ছাড়া আর বিশেষ কিছুই পাওয়া যায় না।
বাসের সবাই নেমে এলো নীচে। এখানে শুধুই চা,আর বিস্কুট খাওয়ানোর দায়িত্ব বল্টুদার,বাকী কিছু কেউ খেলে সেটা তাদের পকেট থেকে। বল্টুদা এটা প্রথমবার বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছেন সবাইকে। কিন্তু সে অর্থে খুব যে ব্যবসায়িক ভাবে এমনটা নয়। সবাই বেশ খুশী।
সূর্য উঠছে আস্তে আস্তে। প্রথমবার সমুদ্র দেখতে যাওয়া কয়েকজন সাংঘাতিক উত্তেজিত। চায়ের দোকানের ফাঁক থেকেই দূরের সমুদ্র দেখার চেষ্টা করছিলেন গুহ দা। রিটায়ারমেন্টের পর এই প্রথম কলকাতার বাইরে কোথাও যাচ্ছেন ঘুরতে। বেহালায় থাকেন। হনিমুনে শ্যামবাজার এসেছিলেন। নেতাজি মূর্তির পাশের একটা হোটেলে উঠেছিলেন দিন তিনেক। সারাদিন জানালা খুলে ঘোড়ার লেজ দেখতেন। আর তাতেই তাদের কি দারুণ আনন্দ হয়েছিলো সে ভাষায় বর্ননা করা যায় না। শ্যামবাজারের হনিমুন থেকে ফেরার ঠিক দশ মাস পর ওদের বাচ্চা হয়। যমজ বাচ্চা। পুজো দিয়েছিলেন পাঁচ মুখওয়ালা নারকেল ফাটিয়ে পাঁচমাথার মোড়ের কালীমন্দিরে। পাঁচটা ধূপকাঠি, পাঁচরকম ফল,প্রণামী পাঁচ টাকা। সে সময়ে পাঁচটাকার বেশ গুরুত্ব ছিলো। বিয়ের সময় গুহ বাবু মাইনে পেতেন আশি টাকা। প্রণামীতে সন্তুষ্ট হয়ে পুরোহিত ওদের দুপুরের ভোগ খেয়ে যেতে বলেন। খিচুড়ি আর লাবড়া,সাথে পায়েস। সে খাবারের কথা এখনো মনে আছে গুহ বাবুর।  শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড়ে বেহালার গুহ বাবুর হনিমুনের বিষয় একসময় গুহ বাবুর অফিসে নিয়মিত আড্ডার বিষয় হয়ে উঠেছিলো। গুহ বাবু মজার লোক। কারো খারাপ ভাবতেন না কখনো। বরং চেষ্টা করতেন কারো কিছু ভালো করতে। তাই তাকে নিয়ে অফিসে বা পাড়ার আড্ডায় হাসাহাসি হলেও তিনি কিছু মনে করতেন না।
বাসের ড্রাইভারের নাম কানাই। হাঁক পারলেন,, “উঠে পরুন,উঠে পরুন”,,গুহ বাবু সাংঘাতিক উৎসাহ নিয়ে উঠে পরলেন বাসে, অন্যরাও উঠে এলো। আর কিছুক্ষন পরেই সমুদ্র।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।