সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ১১)
বল্টুদার সঙ্গে বেড়াতে চলুন – ১১
ইতিমধ্যে প্রায় ঘন্টা দুয়েক হয়ে গেছে। সমুদ্রের ধারে দুপুর ছুঁয়ে বিকেল পেরিয়ে সবে সন্ধ্যে নামবে নামবে করছে। বল্টুদার সঙ্গে আসা ভ্রমনার্থীদের অনেকেই বেশ পেট পুরে দুপুরের খাবার খেয়ে ভাত ঘুমে ব্যস্ত। গতকাল প্রায় সারারাত ঘুম হয় নি বাসে। সকালে এসে ফ্রেশ হয়ে সকালের খাবার খেয়েই ছুটে গিয়েছিলেন সমুদ্রে স্নান করতে। ঘুম তো আসবারই কথা। তারই মধ্যে দলের কয়েকজন বল্টুদার সঙ্গে গিয়েছেন সমুদ্রের পাড়ে বৌদিকে খুঁজতে। একটা অলস দুপুর হঠাৎ করেই বেশ টেনশনের হতে উঠলো।
বল্টুদা,গুহ দা,নদী এবং আরো কয়েকজন। সমুদ্রের ধারে প্রায় সবদিকেই খোঁজা হয়ে গেছে। নুলিয়াদের জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে, ওয়াচ টাওয়ারের গার্ড কে জিজ্ঞেস করা হয়ে গেছে। কিন্তু কেউ কোথাও কোনো অস্বাভাবিকতা দেখেন নি গত কয়েক ঘন্টার মধ্যে।
গুহ দা বললেন, থানায় যাওয়া উচিৎ আমাদের,পুলিশের সাহায্য নিতে হবে মনে হচ্ছে।
বল্টুদার পুলিশে ভীতি আছে। সেই একবার মাল খেয়ে রাস্তায় বাওয়ালি করার পর থানায় ধরে নিয়ে গিয়ে উত্তম মধ্যম দিয়েছিলো,তারপর থেকে পুলিশে ভয়। কিন্তু কি আর করা। বোদিকে পাওয়া যাচ্ছে না, এতক্ষন খোঁজাখুঁজির পরেও পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশের দ্বারস্থ হতেই হবে মনে হচ্ছে। তাই ঠিক করা হলো সকলে মিলে থানায় যাবে রিপোর্ট লেখাতে।
যে পুলিশ চৌকিটা সমুদ্র সৈকতে আছে সেখানে গেলো না ওরা, বরং পুরী থানায় পৌঁছে গেলো ওরা কয়েকজন। সামনে পুরোনো একটা কাঠের টেবিল, টেবিলের ও-প্রান্তে চেয়ারে বড়বাবু। অল্প চুল,মস্ত ভুঁড়ি। আরাম করে সিগারেটে টান দিচ্ছিলো। কি আশ্চর্য, বড়বাবুর ঠিক পিছনের দেওয়ালেই বড়সড় করে লেখা ‘সিগারেট খাওয়া নিয়ে নিষেধাজ্ঞা। একটা কথা আছে না, নেশা ভগবানেরও পিছন ছাড়ে না, আর এত সামান্য বড়বাবু।
আজকের দুপুরের বৌ হারানোর ঘটনাটা বলে চলেছেন বল্টুদা। বড়বাবুর পাশে বসে অন্য একজন লিখে নিচ্ছেন সবটা। ঘটনাটা যাতে এতটুকুও কম বেশী হয়ে না যায়,গুহ দা আর নদীও লক্ষ্য রাখছে বল্টুদার বলা কথার উপরে।
চা এলো কয়েক কাপ৷ বল্টুদা ইতস্তত করছিলো প্রথমে। বড়বাবু চা খেতে বলায় ইতস্তত ভাবটা কেটে গেলো বেশ। বিজয় মাহান্তি,বড়বাবুর টেবিলে নাম লেখা। বয়স পঞ্চান্নর মত।
থানায় বলে মিসিং ডায়েরি লেখা প্রায় শেষ,হঠাৎ চেনা একটা কন্ঠস্বর ভেসে এলো,খাঁচার ভিতরে থাকা এক মহিলা কন্ঠ,চিৎকার করে বলছে–“আপনাকে বোলাথাতো, এই মোটামোটা রুটি হামি নেহি খায়েগা,এই টলটলে ডাল ভি হামি নেহি খায়েগা। “
চমকে উঠলেন বল্টুদা। এমন তেজি গলার আওয়াজ একজনেরই মাত্র আছে।